প্রবচন অঞ্জলি; প্রাসঙ্গিক কিছু কথা:
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯ এ প্রকাশিত হয়েছে কবি লেখক ও গবেষক রেজাউল হক সুমন-এর ষষ্ঠ প্রকাশিত গ্রন্থ ‘প্রবচন অঞ্জলি’। প্রবচন বিষয়ক ‘প্রবচন অঞ্জলি’ লেখক রেজাউল হক সুমন-এর প্রবচন গ্রন্থ হিসেবে দ্বিতীয়। এর আগে ২০১৪ সালে তাঁর প্রবচন বিষয়ক প্রথম নিরীক্ষা ও প্রয়াস ‘প্রবচন পুষ্প’ অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৪ এ প্রকাশিত হয়েছিল। ‘প্রবচন অঞ্জলির’ গ্রন্থটিতে ২০৩টি প্রবচন রয়েছে এবং সবগুলোই মৌলিক সৃষ্টি। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯ এ প্রবচন ক্যাটাগরিতে প্রবচন বিষয়ক একমাত্র গ্রন্থ ‘প্রবচন অঞ্জলি’ এবং গ্রন্থটির প্রকাশক চন্দ্রছাপ প্রকাশনী।
প্রবচন জীবন, বাস্তবতা, সভ্যতা ও সমাজের নিগূঢ়তম অনিবার্য দলিল ও প্রতিচ্ছবি। নিষ্ঠুরতম সত্য প্রকাশে প্রবচন একটি অভেদ্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। প্রবচন ব্যক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিবেশ ও পরিবেশের সঙ্গতি ও অসঙ্গতিগুলোকে অকপট, নিরেট ও অকৃত্রিমভাবে উপস্থাপন করে। প্রবচন কখনও সত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় না এবং মিথ্যার সাথে আপস করে না। ‘প্রবচন অঞ্জলি’ প্রবচনগুলোতে এ বিষয়গুলো দ্ব্যর্থহীনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
‘প্রবচন অঞ্জলি’ প্রবচনগুলোতে বিষয় বৈচিত্র্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ব্যক্তি থেকে শুরু থেকে সার্বজনীন বিবিধ প্রসঙ্গ ও অনুষঙ্গ এমন কোন বিষয় নেই যা ‘প্রবচন অঞ্জলি’র প্রবচনগুলোতে প্রতিফলিত হয়েছে। পৃথিবীর বিবিধ বিষয়ের যা হওয়া উচিত এবং যা হওয়া উচিত নয় তা অব্যর্থভাবে উপস্থাপনের প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। প্রেম, ভালবাসা, সম্পর্ক, সমাজ, পরিবেশ, রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে সবকিছুই কোন না কোনভাবে প্রবচনগুলোর আভ্যন্তরীন দুর্দ্দান্ত প্রয়াস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শাশ^ত ও অনিবার্য সত্যতা প্রকাশে প্রবচনগুলোর অকপটতা ও দূঢ়তা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। কোথাও কোন পক্ষপাতিত্যের ছাপ নেই। লেখক অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে বিষয়গুলো ভেবেছেন; পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষিত করে তবেই তা প্রাবচনিক ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে বর্তমান সমসাময়িক সাহিত্যে বিরল।
‘প্রবচন অঞ্জলি’র প্রবচনগুলো সামাজিক দর্শনে অত্যন্ত সফলভাবে সত্যায়িত। অত্যন্ত নাতিদীর্ঘ বাণী অথচ এতটা অতলান্তিক মর্মার্থ যা পাঠক প্রবচনগুলোর ভেতরে ডুব দিয়ে সহজে অনুধাবন করতে পারবেন। এতে করে প্রবচনগুলো হয়েছে আরও যথার্থ ও মহৎ। প্রবচনগুলোতে লেখকের ধ্রুপদী সামাজিক দর্শনের প্রতিফলন দেখা যায় এবং অনুমান করা যায় তাঁর সামাজিক দর্শনের ব্যাপ্তি। ‘প্রবচন অঞ্জলি’র প্রবচনগুলো লেখকের একান্তই নিজস্ব চিন্তা, বিবেক, যুক্তি ও সামাজিক দর্শনের নির্যাস ও বহিঃপ্রকাশ- যা তিনি গ্রন্থটির ভূমিকায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
‘প্রবচন অঞ্জলি’র প্রবচনগুলো যদি বিশ্লেষণ করা যায় তবে দেখা যায়, তা হলো- বাহ্যিকভাবে লেখক প্রবচনগুলোর মাধমে ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিবিধ সমসাময়িক প্রসঙ্গ ও অনুষঙ্গকে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যতিক্রমী ভাষায় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত গভীরভাবে চিন্তা ও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সে রকম কিছুই নেই এবং লেখক গ্রন্থের ভূমিকায় সেটি স্বীকার করেছেন যে, কাউকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে তিনি প্রবচনগুলো সৃষ্টি করেননি; শুধুমাত্র সঙ্গতি ও অসঙ্গতিকে প্রবচনের শাণিত ভাষায় ব্যক্ত করেছেন এবং প্রবচনগুলোতে আমরা যে নানাবিধ ভুল ও ঘোরের মধ্যে বসবাস করছি সেখানে ‘প্রবচন অঞ্জলি’ সংশোধনীর একটি অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিশেষে একথা বলা যায় যে, ‘প্রবচন অঞ্জলি’র প্রবচনগুলো বিভিন্ন মহৎ প্রয়াসে মহান। প্রবচনগুলোতে শুধুমাত্র অন্ধকারাচ্ছন্ন তিমির অবস্থা থেকে আলোকিত উত্তরণের উপায় খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এবং সংশোধনের চোখ সৃষ্টি করার অন্তর্নিহিত নির্দেশনা রয়েছে। আমার বিশ্বাস সুমনের ‘প্রবচন অঞ্জলি’র জন্ম সার্বিক বিবেচনায় সার্থক এবং পাঠক ‘প্রবচন অঞ্জলি’ পাঠ করে আপ্লুত, সমৃদ্ধ ও সচেতন হবেন এবং সংশোধিত হয়ে উপকৃত হবেন তাঁদের নিজস্ব পরিমন্ডলে। আমি লেখক, কবি ও গবেষক রেজাউল হক সুমন-এর ‘প্রবচন অঞ্জলি’র বহুল পাঠ্য ও যথার্থ মূল্যায়ন প্রত্যাশা করছি।
লেখক-
মজনু বিশদ, কবি আলোচক, গবেষক ও প্রকাশক।
আলোকিত প্রতিদিন/২৪ জুন-২১/এসএএইচ