অদম্য এসআইকে বাগে আনতে অভিযোগ!

0
591

প্রতিনিধি, রাজশাহী:
সেবার ব্রত নিয়ে পুলিশে যোগদান করেছিলেন মকবুল হোসেন। উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় যোগদানের পর আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতা দমনে সাহসের সঙ্গে দায়িত্বপালন করছিলেন মকবুল হোসেন। কিন্তু এর চড়া মূল্য দিতে হয়েছে তাকে। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ নগরীর রাণীবাজার এলাকায় শিবিরের ছোঁড়া বোমার আঘাতে ডান হাতের কব্জি ও বাম হাতের কয়েকটি আঙুল হারান এসআই মকবুল। ক্ষতবিক্ষত হয় মুখমণ্ডল, দুই বাহু ও উরু। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ওই দিনই তাকে হেলিকপ্টারে নেয়া হয় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে। ওই সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তার বাবা আনসার আলী পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার। চিকিৎসা ব্যয় বহনের সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। ফলে দেশেই চিকিৎসা নিয়ে তাকে কাজে ফিরতে হয়। পুলিশে যোগদানের এক মাস ১১ দিনের মাথায় বোমা হামলায় সব স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছিল এসআই মকবুলের। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। কৃত্রিম হাত নিয়ে নেমে পড়েন কাজে। অন্যসব কর্মকর্তার মতো নিয়মিত অভিযানেও নামেন তিনি। এরই মধ্যে দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন এসআই মকবুল। ২০১৪ সালে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন পিপিএম পদক। নগর পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে দুবার হয়েছেন সেরা পুলিশ অফিসার। সেরা অফিসারের সম্মাননাও তার ঝুলিতে। অদম্য এসআই মকবুল কর্মরত নগরীর রাজপাড়া থানায়। দায়িত্বপালন করছেন থানার সেকেন্ড অফিসারের। নগরীর কুখ্যাত কয়েকটি মাদক জোন এ থানা এলাকায়। রয়েছে আবাসিক হোটেল কেন্দ্রীক দেহ ব্যবসা ও মাদক সিন্ডিকেট। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং আশেপাশের ক্লিনিক কেন্দ্রীক দালালচক্র সক্রিয় এখানে। এরই মধ্যে অপরাধীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছেন এসআই মকবুল। সাঁড়াশি অভিযানে ভেঙে দিয়েছেন একাধিক অপরাধ সিন্ডিকেট। আর এতেই টান পড়েছে অপরাধীদের পেতে। রাজপাড়া থানা থেকে এই এসআইকে সরাতে একের পর অভিযোগ দিচ্ছেন পুলিশ সদর দফতরে। অভিযোগ পড়েছে নগর পুলিশ সদরেও। কিন্তু দফায় দফায় বিভাগীয় তদন্তে এসব অভিযোগ থেকে এরই মধ্যে এসআই মকবুল অব্যহতি পেয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, গত ২৭ জুন নগরীর মহিষবাথান এলাকার বাসিন্দা লিটন শেখ এসআই মকবুলের নামে হুমকি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনে আরএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। ২৮ জুন একই অভিযোগ দেন পুলিশ প্রধান বরাবর। এর আগে কয়েক দফা অভিযোগ দিয়েছেলেন লিটন। কিন্তু তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বন্ধুদের সাথে ব্যবসায়ীক বিরোধে জড়িয়েছেন লিটন শেখ। এনিয়ে মামলাও করেন তিনি। এরপর থেকে বরাবরেই পুলিশকে তার পক্ষে প্রতিবেদন দিতে চাপ দেন। কিন্তু তাতেও সুবিধা করতে না পেরে কথিত এই অভিযোগ দেন। শেষে নগরীর লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রীক অপরাধ সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে নতুন করে এসআই মকবুলের বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগটি দেন। অভিযোগ বিষয়ে জানতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও অভিযোগকারী লিটন শেখের মোবাইল সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন এসআই মকবুল। তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রিক অপরাধ সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য তার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সুবিধা করতে না পেরে নিস্পত্তি হয়ে যাওয়া ভিত্তিহীন পুরোনো অভিযোগটি সামনে এনেছেন। তিনি জানান, তার কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। যেকোনো সময় সব ধরনের অভিযানে অংশ নিতে পারি। কেবল সাহস এবং মনোবল আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। আগামীতেও যেকোনো পরিস্থিতিতে জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখব।

আলোকিত প্রতিদিন/ ৩০ জুন, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here