সবুজ সরকার, টাঙ্গাইল:
যমুনা ও ধলেশ্বরী নদী বেষ্টিত জেলা টাঙ্গাইল। বর্ষায় এ দুটি নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার অভ্যনÍরীণ নদীগুলোর পানিও বাড়ে। এতে জেলার নিম্ন ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়। তখন এসব এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠে নৌকা। তাই বর্ষা আগমনী বার্তায় টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার গয়হাটায় জমে উঠতে শুরু করেছে শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী নৌকার হাট। আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন আকৃতির নৌকা। তবে লকডাউনের কারনে এ বছর এখনো হাটে লোকজনের আনাগোনা কম। এজন্য নৌকা বিক্রি আশানরোপ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নৌকা তৈরির কারিগররা। জানা যায়, নাগরপুর উপজেলার এক পাশ দিয়ে যমুনা অন্য পাশ দিয়ে যমুনার শাখা নদী ধলেশ্বরীসহ বয়ে গেছে ছোট বড় বেশ কয়েকটি নদী। আর এ কারণে বর্ষার শুরু থেকেই নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর এক মাত্র ভরসার যান হলো নৌকা। পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার চোহালী, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন চরাঞ্চল হওয়ায় এসব নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ সাধ্যের মধ্যে নৌকা কিনতে এ হাটে ছুটে আসেন ক্রেতারা। উপজেলার বড় কয়েকটি নদীতে পানি বাড়ায় ধীরে ধীরে ছোট শাখা নদীগুলোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। আর এ জন্য নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা আগাম প্রস্তুতির জন্য নৌকার হাটে আসতে শুরু করেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নাগরপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গয়হাটা নৌকার হাটে সাধ্যের মধ্যে সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য রয়েছে নানা ধরনের নৌকা উপজেলার ভেতর ও আশেপাশের বেশকয়েকটি উপজেলা থেকে নৌকার ক্রেতা ও বিক্রেতারা আসছে এই শত বছরের পুরানো নৌকার হাটে। মহামারি করোনার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গয়হাটা কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠে জমে উঠতে শুরু করেছে নৌকার হাট। প্রতিটি নৌকার মান ও আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে। নৌকার কাঠামো তৈরিতে মেহগনি, কড়ই, আমচাম্বল এবং রেন্ডি কাঠের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। একেকটি নৌকা ৪ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে এ বছর নৌকার দাম নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। এ ব্যাপারে দৌলতপুর উপজেলার নৌকা ক্রেতা ছাত্তার মিয়া বলেন, বর্ষার সময় নৌকা ছাড়া আমাদের চলা ফেরা করার কোনো উপায় নেই। আর সে জন্যই প্রতি এক বা দুই বছর পর পর এ হাট থেকে নৌকা কিনি। তবে এ বছর এখনো পুরো দমে নৌকার বেচাকেনা শুরু না হওয়ায় পাইকাররা তাদের ইচ্ছে মতো নৌকার দাম হাকাচ্ছেন। আর বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে নৌকা কিনতে হলো। সে অনুযায়ী নৌকার দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু বেশি। নৌকার দর একটু বেশি হওয়ায় হাটে নৌকার বেচাকেনা কম হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে গয়হাটা হাটের ইজারাদার খায়রুল ইসলাম বলেন, এই নৌকার হাটটি আমাদের উপজেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। আমার জন্মের পর থেকে দেখে আসছি এই নৌকার হাটটি। আর তিন পুরুষের কাছে গল্প শুনেছি এই হাটের ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে হাটের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই এই নৌকার হাটের সেই হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য যেন ফিরে আসে। আমাদের এই গয়হাটার নৌকার হাটের সুনাম রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ হাটে নৌকা কিনতে আসে বিভিন্ন মানুষ বলেও জানান তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন /৫ জুলাই ২০২১ / দ ম দ