সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় পুলিশ কর্মকর্তার অমানবিকতায় অক্সিজেনের অভাবে এক বৃদ্ধ মারা যাওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত এএসআই সুভাষ শিকদারকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান শুক্রবার (৯জুলাই) তাকে বরখাস্তের আদেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়। এদিকে অমানবিক এই ঘটনা তদন্তে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সহকারি পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সাইফুল ইসলাম ও ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজ। পুলিশ সুপার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। শুক্রবার বিকালে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ ইকবাল হোসেন তার কার্যালয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও একজন সংবাদ কর্মীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। প্রসঙ্গতঃ করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা মো. রজব আলী মোড়ল (৬৫) বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় সিলিন্ডারের সাহয্যে তাকে বাড়িতেই অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। শহরের পলাশপোল এলাকার ব্যবসায়ী ও জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদৌস আলফা তার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ। বৃহস্পতিবার জরুরি অক্সিজেন প্রয়োজন হওয়ায় ফেরদৌস আলফার বাড়ি থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বেলা ১০টার দিকে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন এএসআই সুভাষ চন্দ্র। লকডাউনে বাইরে বেরিয়েছে বলে তার কাছে এক হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষ তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখেন তার বাবা মারা গেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম, তাহলে হয়তো বাবাকে বাঁচাতে পারতাম।’ তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, আমার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। ইতিমধ্যে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মীসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি। আশা করছি আগামীকাল (শনিবারের) মধ্যে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো। ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ শিকদারকে শুক্রবার চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে ডিপার্টমেন্টাল সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান।
আলোকিত প্রতিদিন / ৯ জুলাই /২০২১ / এম এইচ সি