প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল:
টাঙ্গাইলে উদ্ধার হওয়া সেই জমিতে শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মাণ না করে বসানো হচ্ছে কাঁচা বাজার । সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর দখল থেকে উদ্ধার করা জমিতে আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণ করায় সাধারণ মানুষের মাঝে দু:খ বিরাজ করছে । টাঙ্গাইল পৌরসভা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে বাৎসরিক ইজারা নিয়ে সেখানে বাজার নির্মাণ করা হচ্ছে এ বাজার । উদ্ধার করা ওই জমিতে শেখ রাসেল শিশুপার্ক করার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতা থাকার কারণে পার্ক নির্মাণ করা যায়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। শহরের আকুরটাকুর পাড়ায় সড়কের ওপর বটতলা বাজার স্থানান্তর করে উদ্ধার করা ওই জমিতে কাঁচাবাজার নির্মিত হচ্ছে। এদিকে আকুরটাকুর পাড়ার কয়েকজন ঘনবসতি এলাকা হওয়ায় সেখানে বাজার না করার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শহরের আকুরটাকুর পাড়া মৌজায় ২৪২ খতিয়ানের ৭৮৮ দাগে ৬৬ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি মামলা মূলে ১৯৭২ সালে ইজারা নেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত নিয়মমতো লিজমানি পরিশোধ করেন। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি ইজারার শর্ত ভঙ্গ করেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইল জেলা জজ আদালতে ওই জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করেন। মামলায় তিনি ডিক্রিও পান। সরকারপক্ষ জেলা জজ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল করেন। ওই সিভিল রিভিশন মামলায় সরকারপক্ষে রায় দেন আদালত। এ ঘটনায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকী উচ্চ আদালতে সরকারপক্ষের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করেন। সুপ্রিম কোর্টও সরকারের পক্ষে রায় দেন। পরে গত ২৪ জানুয়ারি আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর অবৈধভাবে দখলে রাখা ৬৬ শতাংশ জমি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন।
দেখা গেছে, লকডাউনের মধ্যে চারদিকে বেড়া দিয়ে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। ৩০-৪০টি দোকানের দেয়াল গাঁথুনি প্রায় অর্ধেক শেষ হয়েছে। মাটি ভরাটের কাজও চলছে। অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন শ্রমিক দ্রুতগতিতে কাজ করছে। টাঙ্গাইল পৌরসভা থেকে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান কর্মরত শ্রমিকরা। স্থানীয় মাসুদ রানা, রাসেল সিদ্দিকী, সংগ্রাম খন্দকার, সৈয়দ সাদেক সহ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানাযায়, এলাকাটির একদিকে জেলা সদর রোড় অন্য দিকে তালতলা রোড়। এখানে বাজার বসলে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। আবাসিক এলাকায় নতুন করে বাজার বসানো সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি। এখানে শিশুদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র চাই, বাজার নয়। টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, সব শর্ত মেনেই জেলা প্রশাসন থেকে বাৎসরিক ভাড়ায় টাঙ্গাইল পৌরসভার অনুকূলে ইজারা নেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বটতলা বাজার স্থানান্তরের। জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনায় বটতলা বাজার স্থানান্তর করে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে ইজারা নেওয়া ওই জমিতে কাঁচাবাজার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। বাজারে আধুনিক সব সুবিধা থাকবে। বটতলা বাজারের ব্যবসায়ীদের নতুন কাঁচাবাজারে পুনর্বাসন করা হবে। এ ছাড়া যানজটমুক্ত রাখার জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি জানান, উদ্ধার করা জমির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা পার্ক না করে জনহিতকর কোনো কাজে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া জমিটি ক তফসিলভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি হওয়ায় সরকারি কোনো দপ্তরকে স্থায়ী ভিত্তিতে দেওয়া যায়নি। মাসিক উন্নয়ন সভায় বিভিন্ন মহল থেকে উদ্ধার করা ওই জায়গায় সড়কের ওপর অবস্থিত বটতলা বাজার স্থানান্তরের দাবি তোলা হয়। সভার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে টাঙ্গাইল পৌরসভাকে অস্থায়ীভাবে বাৎসরিক ইজারা দেওয়া হয়েছে। সেখানে ৬৭টি কাঁচা সেমিপাকা দোকান হবে। পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
আলোকিত প্রতিদিন /১১ জুলাই,২০২১ / দ ম দ