সিরাজদিখানে যান্ত্রিক যানবাহনের ভারে হারিয়ে গেছে কেড়াই নৌকা

0
316

আহসানুল ইসলাম আমিন, মুন্সীগঞ্জ :
আধুনিক নগর সভ্যতার যুগে যান্ত্রিক যানবাহনের ভারে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা থেকে হারিয়ে গেছে কেড়াই নৌকা।একসময় সিরাজদিখান উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্তার অন্যতম যানবাহন ছিলো নৌকা, উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বর্ষাকালে নৌকা দিয়ে যাতায়েত করত লোকজন । ইছামতী তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা তালতলা বাজার, সিরাজদিখান বাজারে আসতে বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া উপায় ছিলোনা । উপজেলার তালতলা বাজার থেকে কেড়াই নৌকা দিয়ে বয়রাগাদী, লতব্দী ,বালুচর ,সিরাজদিখান বাজার, ইছাপুরা বাজার, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সুবচনী বাজার, বেতকা বাজার সহ আশপাশের এলাকায় মানুষজন বর্ষা মৌসুমে যাতায়েত করত। গ্রামীণ নৌকা জীবনে এসেছে যান্ত্রিকতা। নদী হারিয়েছে নাব্যতা। এছাড়া নদী ও খালে ব্রিজ হয়েছে। বিলগুলো পানি শূন্য থাকে সারা বছর। জলাশয়গুলো বালি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। পাল তোলা নৌকা চলবে কোথায়? তাই এখন শুধুই স্মৃতির জাবরকাটা। বর্ষাকালে হাতে গোনা দু’একটা নৌকা চোখে পরলেও তাদের নৌকায় আগের মতো আর মানুষ ওঠে না। নতুন বধূ বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য পাল তোলা কেড়াই নৌকার বায়না ধরে না। কেননা সড়ক পথে গাড়ি,অটোরিক্সা,সিএনজি,রিক্সায় গন্তব্যে পৌঁছানো যায়।  আগে নদী ও খালবিল বেষ্টিত সিরাজদিখান উপজেলার গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়ির ঘাটে সারি সারি পাল তোলা নৌকা বাঁধা থাকত। এখন  বর্ষকালে যান্ত্রিক ট্রলার তার স্থান দখল করে নিয়েছে। এখনো নদীমাতৃক আমাদের জীবন-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি। কিন্তু পানি শূন্যতা সবকিছু পানসে করে দিচ্ছে। যুগের হাওয়া বদলে গেছে। যান্ত্রিক যানবাহন হটিয়ে দিচ্ছে জীবন নির্ভর যানবাহনকে। আধুনিক যানবাহনে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ যেন সভ্যতার নামে মানুষের মৃত্যুর মিছিলে যোগদান। যান্ত্রিকতার যুগে হাড়িয়ে ফেলছি আমাদের ঐতিহ্য । যান্ত্রিকতা আমাদের তাড়া করছে। তাই এখন আর ইছামতী নদীতে ভরা বর্ষায় দেখা যায় না, পাল তোলা কেড়াই নৌকা । ইঞ্জিনচালিত শ্যালো নৌকা আর সড়ক পথের যান্ত্রিক যানবাহন এখন আমাদের সঙ্গী হয়েছে। ইঞ্জিনের কালো ধোঁয়া আর ভটভট বিকট শব্দ পরিবেশ নষ্ট করছে, করুক তাতে কার কি আসে যায়। আমরাতো ছুটছি দ্রুততম। পরিবেশ দূষিত হয় হোক-তাতো দেখার কেউ নেই। ইছামতী নদীতে সারি সারি পাল তোলা নৌকার সেই মনোরম, মনোহর ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। তালতলা বাজারের হোমিওপ্যাথি ডাঃ তাহের দেওয়ান আক্ষেপ করে বলেন, আহারে আগে ইছামতী নদীতে কত রকম নৌকা চলতো নাইয়রি নৌকা, পাল তোলা নৌকা, কেড়াই নৌকা, পানসি নৌকা, বৌচোরা নৌকা, গয়না, লক্ষী বিলাস, গন্ডি বিলাস, খেয়া নৌকা, কোসা নৌকা, ডিঙ্গি নৌকা, বাইচের নৌকা ও মহাজনি নৌকা।  সেসব এখন জাদুঘরে। সিরাজদিখানে নদীর ও খাল-বিলে স্মৃতি হয়ে আছে।

আলোকিত প্রতিদিন /১১ জুলাই,২০২১ / দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here