মাসুদ রানা:
ঢাকার ধামরাইয়ে নাম সর্বস্ব একটি হাসপাতালে ডাক্তার নার্স ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। কোন রকমে একজন রোগী পাইলেই হাসপাতালের বিল এমনভাবে তৈরি করে যা পরিশোধ করা ঔই রোগীর অভিভাবকদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিল পরিশোধ করতে হয় তাদের জমি, গৃহ পালিত পশু বিক্রি করে। তাছাড়া কোন এনজিও থেকে টাকা উত্তোলন বা অন্যের কাছে ধার করে হাসপাতালের খরচ পরিশোধ করতে হয় । সাধারণত রক্তের গ্রুপ মিলানোর জন্য খরচ ধরেন ২৫ শত টাকা, প্রতিদিন যার বেড ভাড়া ১২ শত টাকা। অথচ ঔই হাসপাতালে স্থায়ীভাবে নেই কোন ডাক্তার বা নার্স।রোগী আসলে অনকলের মাধ্যমে ডাক্তার আসে কিন্তু তিনি কোন অপারেশন বা ডেলিভারির কাজ থাকলে তা শেষ করে চলে যায়। আর কখনো রোগী দেখতেও আসে না।অথচ সেই হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে অনেকেই এনজিওর কাছ থেকে লোন করতে হয়েছে। এমন সব ঘটনা ঘটেছে ধামরাই পৌরসভার ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে ধানসিঁড়ি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত মমতাজ ম্যাটস এন্ড মেডিকেল টেকনোলজি নামক হাসপাতালে। যেখানে সেবা নয় অর্থ উপার্জনই যাদের মূল পেশা।
সরেজমিনে জানা যায়, ধামরাই পৌরসভার ৮ নং মহল্লার ভাড়াটিয়া শফিকুল ইসলাম। তার ছেলে আমিনুল ইসলাম(১৮) গেল মাসের ২০ তারিখে ঔই হাসপাতালের সামনে অটোরিকশা দূর্ঘটনা ঘটায়। আমিনুল ঔই অটোরিকশার চালক।যাত্রী ছিল ঔই মহল্লারই বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম।ধামরাই বাজারে যাওয়ার পথে আমিনুল ইসলামের অটোরিকশা একটি সিএনজির সাথে ধাক্কা লেগে আমিনুল ও যাত্রী সাইফুল দু’ জনই আহত হয়ে মমতাজ ম্যাটস এন্ড মেডিকেল টেকনোলজি নামক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে সাইফুলের কপালে ছোট একটি সেলাই করেন যার বিল ২৭ শত টাকা ধরা হয়।কিন্তু অটোরিকশার চালক আমিনুলের অবস্থা খারাপ বলে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রেখে দেন।
দূর্ঘটনার বিষয়টি জানার পর আমিনুলের বাবা শফিকুল ইসলাম ও তার দাদা মানিক মিয়া আসলে বেশি কিছু হয় নি বলে জানান হাসপাতাল কতৃপক্ষ। আগামীকাল নিয়ে যেতে পারবেন।তখন রোগীর অভিভাবকরা খরচ কি রকম আসতে পারে জিজ্ঞেস করলে ৫ /৭ হাজার টাকা আসতে পারে বলে জানান।কিন্তু পরের দিন বিল ধরে ২৫ হাজার টাকা। রোগীর আরো বড় একটি অপারেশন করতে হবে। তার পায়ের গোড়ালি ফেটে গেছে। অর্থপেডিকস ডাক্তার লাগবে। তিনি ছাড়া অপারেশন করা যাবে না। তার জন্য অনেক খরচ পরবে। আমিনুলের বাবা শফিকুল রোগী নিয়ে আসতে চাইলে ১ দিনের বিল ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলে। এক টাকাও ছাড় দেওয়া হবে না। আমিনুলকে হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলেন, পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসা এখানেই হবে খরচ কম ধরবো। এই কথা বলে একটি কনট্রাক ফরম পূরণ করান। ঔই রাতে এক ডাক্তার এসে পায়ের গোড়ালির অপারেশন করেন।কিন্তু পা থেকে রক্ত পরতেই থাকে।তার জন্য একটি পাইপ লাগিয়ে দেন।বলেন,অপারেশন এর পর জমাট রক্ত বের হয়। সব মিলিয়ে রোগী রিলিজ নেওয়ার সময় মোট বিল করেন প্রায় ৮০ হাজার টাকা। রোগীর পক্ষ থেকে বিল পরিশোধ করতে না পারায় তিন চারদিন অনেকের কাছে ঘুরাঘুরি করেও রোগী ছাড়াতে পারে নি ভুক্তভোগীরা।এক টাকা কমেও রোগী রিলিজ দিবে না হাসপাতাল কতৃপক্ষ। পরে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের সহায়তায় প্রায় ৪৫ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করে রোগী রিলিজ করা হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম এর বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি খুবই গরীব মানুষ। অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই।ভাড়া বাসায় থাকি।ঔষধের দামসহ প্রায় ৮০ হাজার টাকা বিল করে।মহল্লার অনেক গন্যমান্য ব্যক্তির অনুরোধ রাখেন নি ঔই অসহায় গরীব রোগীকে রিলিজের জন্য।পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় ধার করে ৪৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর রোগী রিলিজ দেয়। পায়ের অপারেশন করে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে। তা নাকি কনট্রাক ফর্ম। প্রতিদিন বেড ভাড়া ১২শত টাকা,রক্তের গ্রুপ পরিক্ষা করতে ২৫ শত টাকা নেয়। আমাদের নানা রকম কথা বলে টাকা খরচ কম লাগবে বলে রোগী ভর্তি করেন। আর রোগী রিলিজ এর সময় কসাই এর মতো জবাই করেন। ভুক্তভোগী আমিনুল এর দাদা মানিক মিয়া বলেন, আমার নাতির কি অপারেশন করেছে বুঝি না,এখনো রক্ত বের হয়। হাসপাতাল শুধু টাকাই নিলো কোন সেবা পেলাম না। ডাক্তার আসেনি অপারেশনের পর একবারও।নার্সরা যায়, আর চলে আসে। রোগীর কোন ফাইল পত্র আমাদের কাছে দেয় নি । এটি কসাইখানার চেয়ে খারাপ। আরেক ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার মাথায় দুটি সেলাই করেছে তাই বিল করেছে ২৭ শত টাকা। মাথার চুলসহ সেলাই করেছে। ইসলামপুর সরকারি হাসপাতালে ড্রেসিং করে কয়েকটি চুল বের করা হয়েছে। জানি না আরো ভোগান্তি আছে কি না। ডাক্তার নার্স ছাড়াই চলে এসব হাসপাতাল। পরে ত্কে নতুন করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবা গ্রহণ করছেন ।
হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ডাক্তার আমিনুর রহমান। বর্তমানে তার ছেলে মৃদুল হাসপাতালটি পরিচালনা করে থাকেন।তিনি সেবা না দিয়ে শুধু অর্থ আয়ের চিন্তায় ব্যস্থ। তিনি বলেন, আমার এখানে যা বিল হবে তাই পরিশোধ করতে হবে। সাভার ঢাকার নামি দামি হাসপাতালের চেয়ে খরচ বেশি। এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,যার খুশি আসবে, না চাইলে না আসবে। আমি ধনী গরীব বুঝি না, চিকিৎসা নিতে আসলে,তাকে খরচ পরিশোধ করতেই হবে।তবে হাসপাতালটি সঠিক কাগজ পত্র আছে কি না প্রশ্ন করলে তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নূর রিফফাত আরা বলেন, ঔই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো।
আলোকিত প্রতিদিন /১৩ জুলাই,২০২১ / দ ম দ