প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড :
ঈদুল আযহা’র আগমনী বার্তা দিতে সীতাকুণ্ডে শুরু হয়েছে কামারদের লোহার ঝনঝনানী। দিন-রাত লোহার ঝনঝনানীতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামার পাড়া। নানা রকমের উপকরন তৈরীতে অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। করোনার মন্দাভাবের মধ্যে ঘরের অভাব গুছাতে চলছে অদম্য প্রচেষ্টা। এরপরও পেছনে টেনে রয়েছে অভাব পুরন করতে না পারার সংশয়। শত কষ্টের মাঝে গ্রাহকদের চাহিদা থাকায় অর্থভাব গুছানোর আশা ঝলঝল করছে চোখ-মুখ। আর লোহার গরম ছ্যাকা হয়ে উঠেছে আর্শিবাদ। কারন এ সময় ব্যবসা করতে না পারলে হয়তো বা সামনের দিনগুলো আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তাই স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দু-মুঠো অন্ন তুলে দিতে কাটাচ্ছে নির্ঘুম রাত। দিনের বেলা বাজারে বাজারে দা-ছুরিসহ নানাবিধ পশু কাটার সরঞ্জাম তৈরীতে চলে কঠুর খাটুনি। এতটুকু বিশ্রাম নেই বন্ধু, পরিবার বা সহপাঠিদের নিয়ে আনন্দঘন সময় পার করার। এখন শুধু একটায় চেষ্টা ঈদের পূর্বে বেশী বেশী সরঞ্চাম তৈরীর মাধ্যমে অধিক আয় ঘরে তুলা। শত কষ্টকে মাথায় সহ্য করে পরিশ্রমের ফলটা ঘরে তুলে সংসারের অভাব গুছিয়ে আনা হয়ে উঠেছে কামারদের একমাত্র লক্ষ্য। উপজেলা প্রতিটি কামার পাড়াতে রাত-দিন হয়ে গেছে এক রকম। চুলায় আগুনে গরম লোহা লাল করে ছোট-বড় হাতুড়ি বা হেমারে থেতলে নানা আকৃতি কোরবানি সরঞ্জাম তৈরীতে ব্যবস্তা সবার। যত বড় এবং ধারালো সরজ্ঞাম বানানো যাবে তত বেশী লাভ উঠবে ঘরে। তাই অধিক পরিশ্রমের সফলতার ফল ঘরে তুলতে নাওয়া- খাওয়া ছেড়ে বিশ্রামকে দুরে ঠেলে কোরবানীর পশু কাটার সরঞ্জাম তৈরীতে সরগম কামার পাড়ার নারী-শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যুবক-যুবতীরা। সব স্থানে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেয় কামার ঘরেও যেন বইছে আনন্দেও বন্যা। ঘরে নারীরা আর বাইরে যুবক-বয়োজৈষ্ঠদের ব্যস্ততার মাঝে দিন পার করতে হচ্ছে বলে জানান কামার পাড়ার বাসিন্দারা। পৌরসদরে ব্যবসায়ী কামার বাবুল বলেন, দা,ছুরি, বটি ও কৃষি সরঞ্জাম তৈরীর এবং সান দেয়ার মাধ্যমে চলে সংসারের বরন-পোষন। বছরে দু-একটি সময় ছাড়া ব্যবসা অনেকটা একই রকমে চলে। দৈনন্দিন আয় যা হয়ে থাকে তাতে চলে না সংসার। পুরো বছর কোরবানী ও পাঠা বলির অপক্ষায় থাকি। কারন এ সময়ে বাড়তি আয় করে সংসারে নতুর কিছু আসবাব কেনার সুযোগ হয়। তবে এ বছরের শুরুতে করোনা মহামারীর কবলে পড়ে অতি কষ্টে জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। এই ঈদকে ঘিরে ব্যবসা করা না গেলে অভাবের তাড়নায় ছেড়ে দিতে হবে ব্যবসা। কোরবানীর মাত্রা কমে গেলে ব্যবসাও কমে যাবে। মূলবান লোহায় কোরবানির সরঞ্জাম তৈরী করতে গিয়ে বেশী পুজি খাটাতে হচ্ছে। এখন পুজি উঠাতে না পারলে লোকসানের বিলিন হয়ে যাবে পেশা। প্রায় ৮০-১’শ টাকা কেজি দরে লোহা ক্রয় করে চালাতে হচ্ছে ব্যবসা। একেকটি কোরবানী সরঞ্জাম তৈরীতে ১-৫ কেজি পর্যন্ত লোহার ব্যবহার করতে হয়। পরিশ্রম আর লোহার দাম মিলে লাভ পাওয়া খুবই মুশকিল। বর্তমানে ছোট আকৃতির ছুরি মূল্য ৫০-১’শ টাকা, দা- বটি ২-২’শ ৫০ টাকা এবং বড় আকৃতিগুলোর বিক্রয় মূল্য ৫-৬;শ টাকা।
আলোকিত প্রতিদিন/১৬জুলাই-২১/এইচ