চেয়ারম্যান সাইদুরের কোনো অপরাধই যেন অপরাধ নয়

0
444

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর:
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বি.কে নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়ার নাম করে কোটি টাকা আত্মসাৎ ও আল-বাহিনী গঠন করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, আল বাহিনী (চৌকা) গঠন করে এলাকায় চাঁদাবাজি, রাহাজানি, মাদক, জুয়া ও নারী ব্যবসাসহ অকল্পনীয় সব রাজত্ব কায়েম করেছেন চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। পরিষদের ১০ জন সদস্য প্রাক্তন জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েও পাননি কোনো প্রতিকার।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ঘর দেবেন বলে চেয়ারম্যান নিজে, তার ভাই আব্দুল সরদার ও আল বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। ঘরের লোভ দেখিয়ে ২০১৭ সালে যাদের থেকে টাকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ৫ নং ওয়ার্ডের নমসূদ্র কান্দির ফারুক সরদারের স্ত্রী তাছলিমা বেগম, হারুণ সরদারের স্ত্রী রোজিনা আক্তার(৩২), সোরাপ কাজীর স্ত্রী হাসি(৩৫), ৪ নং ওয়ার্ডের মৃধা কান্দির আব্দুর রশিদ মোল্লার স্ত্রী জমিলা বেগম, ১নং ওয়ার্ডের হাওলাদার কান্দির পবন হাওলাদারের দুই ছেলে মজিবর হাওলাদার, আলী হোসেন হাওলাদার, কদম আলী বেপারীর স্ত্রী হালিমা খাতুন, শাহালম বেপারীর স্ত্রী নুরজাহান, শাহজাহান শেখের ছেলে জাহাঙ্গীর শেখ, মৃত ইসমাইল হাওলাদারের ছেলে মুনছুর হাওলাদার, মৃত হাকিম আলী হাওলাদারের ছেলে এলেম হাওলাদার, মৃত কলম হাওলাদারের ছেলে রহিম হাওলাদার, মৃত মমতাজ উদ্দিন শেখের ছেলে মজিবর শেখ, মৃত শুক্কুর আলীর বাকপ্রতিবন্ধী ছেলে সোহরাব মাঝিসহ প্রায় ৭০০ পরিবার থেকে ৫,১০০ শুরু করে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। ঘরের কথা বলে সবার থেকে টাকা নিলেও নিজস্ব ভোটার বা আত্মীয় স্বজন ছাড়া কাউকে ঘর দেননি। ঘর না পেয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে হুমকি-ধামকির স্বীকার হয়েছেন এসব গরীব অসহায় সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ কান্নাকাটি করে টাকা ফেরত নিলেও পরবর্তীতে চেয়ারম্যান নিজে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ঘর প্রত্যাশীদের। আল বাহিনীর ভয়ে এদের কেউ মুখ খুলতে রাজি নন, তবে সাংবাদিকদের ক্যামেরার আড়ালে মুখ খুলেছেন পঁচাত্তরোর্ধ্ব ভ্যান চালক খাদেম সরদার। তিনি বলেন, ‘আমার টাকা চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ঘুরিয়ে ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে আমি নাছোর বান্ধা বলে। এতে তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে বছর খানেক আগে শুক্কুর ফকিরের বাড়ির সামনে দুপুর বারোটায় (মঙ্গলবার) রোড এক্সিডেন্টকে কেন্দ্র করে অন্যায়ভাবে বিনা বিচারে আমাকে রাস্তার পাশে থাকা গাছের ডাল দিয়ে পায়ের উপর আচ্ছামত পিটিয়েছে। খাদেম সরদার কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন পঁচাত্তরের উপর বয়স হয়েছে আমার, কেউ কোনোদিন গায়ে হাত দিতে পারে নাই, কিন্তু চেয়ারম্যান…., আমি কার কাছে বিচার দিবো? সে চেয়ারম্যান, তার বিচার করবে কে?’
বি.কে নগর কলেজ সংলগ্ন মৃত মজিদ হাওলাদারের প্রতিবন্দী( বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্দী) ছেলে কাশেম হাওলাদার ঘর পেয়েছেন। কাসেমের মা সুফিয়া বলেন, আমার ছেলে কাশেম তো প্রতিবন্দী, তার ইনকাম নেই তাই বড় ছেলে আবুল কালাম হাওলাদার ২৫০০০ টাকা দিয়েছে। তারপর ঘর পেয়েছি। বি.কে নগর ইউপির ভবন তৈরীর জন্য সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মজিবুর মাদবর ৯৮ নং মৌজার ৫৩০২ দাগের ৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করে পরিষদে দান করেন, কৌশলে পরিষদের সেই জমি বারেক কাজী, বাদল বেপারী, ইমরান তালুকদার, আব্দুর রশিদ বেপারীসহ অনেকের কাছে বিক্রি করে দিয়ে মার্কেট তৈরী করে প্রায় দেড় কোটি টাকার বানিজ্য করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার। বি.কে নগর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুলের নতুন ভবনের পাইলিংয়ের মাটি টেন্ডার ছাড়াই স্কুলের সভাপতি হিসেবে প্রভাব বিস্তার করে নিজ বাড়ি করার জন্য সরকারি নদী ভরাট করতে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে চৌকা বাহিনী ওরফে আল বাহিনী তৈরী করে এলাকায় রাজত্ব কায়েম করেছে চেয়ারম্যান। চৌকা বাহিনীর মূল হোতা আল এরশাদ, আল নাছির, আল জসিম, আল সোবহান মাদবর, আল মাজেদ সিকদার, আল জলিল, আল মন্টু হাওলাদার, আল রাজ্জাক মাদবর, আল মাইনুল বাইন্না, আল আলী মৃধা। এদের প্রত্যেকের আল নাকি অনেক বড়, তাই নিজেরাই নামের আগে আল শব্দ ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন বলেও এলাকায় প্রচলিত রয়েছে। এই আল বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এলাকায় জমি ক্রয় বিক্রয়, ছেলে-মেয়ে বিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান করতে হলে দিতে হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা। প্রতিদিন জলিল সিকদার, হাবিবের দোকানসহ বিভিন্ন জনের বাড়িতে বা মাঠের মধ্যে জুয়ার বোট বসিয়ে প্রতিরাতে ৫ হাজার টাকা নেন আল বাহিনীর সদস্যরা। ইলিয়াসের বাড়ির বাৎসরিক ওরসে গরীব পিঠা বিক্রেতা জালাল ফকির পিঠা দেওয়ায় দেরি করায় ডান চোখ নষ্ট করে দেন আল বাহিনী, আজও বিচার পাননি জালাল ফকির। বি. কে নগর বাজারের রেস্ট হাউজ এন্ড কফি হাউজ থেকে প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেছে বলেও অভিযোগ আল বাহিনীর বিরুদ্ধে। আল-বাহিনীর সদস্য আল রাজ্জাক মাদবর ১০০ পিচ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়ে উচ্চ আদালত থেকে মুক্তিও পেয়েছেন।
মৃত মোতালেব ফকিরের বসতবাড়ি, লালমতিসহ একাধিক পরিবারের সমস্ত সম্পত্তি দখল করায় তারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কামার সুমন মন্ডলের বাড়ি দখল করে ক্লাব নির্মাণ করেছে আল বাহিনী। সংখ্যালঘু সুমন মন্ডল দ্বারে দ¦ারে ঘুরে দুই বছর পর্যন্ত ঐ ক্লাবের বিদ্যুৎবিল নিজেই পরিশোধ করেছেন। সুমন মন্ডলের কান্না দেখে শেখ সেলিম(গোপালগঞ্জ) শরীয়তপুর পুলিশ সুপারকে বলায় সুমনের বাড়ি উদ্ধার হয়। সরকারি চৌকাদারি ট্যাক্সের কথা বলে ইউনিয়নের বসতবাড়ি থেকে ১০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে ঢাকার জুরাইনে তার নিজস্ব তারের কারখানা মেরামতের কাজে ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সীমা আক্তারের স্বামী আব্দুর রাজ্জাক শেখ জানান, নাছির, এরশাদ, জসিম , জলিলদের কাছে আমার জেট্টিস নূরজাহান তার জমি বিক্রির জন্য ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিল। বাকি ৬ বোন জমি বিক্রি করবে না, কিন্তু ওদের কথা হচ্ছে সবার জমি জোড় করে দলিল নিবে। আমি শশুড় বাড়ি থাকি, এই জমিটুকু হাতছাড়া হলে আমরা ভূমিহীন হয়ে যাব। ওদের কাজই হলো জমি বায়না করে জোর করে দলিল নেওয়া। তারা বলছে জোড় করে জমি দলিল করবে। ৭ বোনের জমি এতদিন তারা ভোগ দখলে ছিল, এখন যেমন দিনের বেলা এসে ঘুরে যায়, আগে এখানেই রান্না-বান্না করে খেত। এখন আমরা দখলে থাকলেও তারা এসে টহল দিয়ে যায়।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৭ জুলাই,২০২১/ দ ম দ 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here