প্রতিনিধি,শেরপুরঃ
বীজতলা তৈরি না করে ড্রাম সিডারের মাধ্যমে সরাসরি ধান বপনে লাভবান হওয়ায় শেরপুরের নকলা উপজেলার অনেক কৃষক এই পদ্ধতিতে ধান চাষে ঝুঁকছেন। ধান চাষে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ড্রাম সিডার পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করতে বীজতলা তৈরি করতে হয় না। ফলে সময়, শ্রম ও উৎপাদন ব্যয় কম হয়। সময়, খরচ ও শ্রম কম দিয়ে সনাতন পদ্ধতির চেয়ে বেশি ফসল পাওয়ায় নকলার কৃষকদের মধ্যে ড্রাম সিডার পদ্ধতিতে ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে। সরজমিনে দেখা গেছে, দুপাশে প্লাস্টিকের দুটি চাকার ভেতর একটি লোহার দন্ডের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে নির্দিষ্ট দূরত্বে ছোট আকৃতির ছয়টি প্লস্টিকের ড্রাম থাকে। প্রতিটি ড্রামে থাকে নির্দিষ্ট মাপের নির্দিষ্ট সংখ্যক ছিদ্র। প্লাস্টিকের চাকার সঙ্গে লাগানো থাকে একটি হাতল, হাতল ধরে
কৃষক সহজেই যন্ত্রটি টানতে পারেন। ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা হলেই এই যন্ত্রটি স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহারে বানানো যায়। যন্ত্রটি হালকা বলে সহজে বহনযোগ্য। একজন লোক প্রতি ঘণ্টায় কমপক্ষে এক বিঘা জমিতে বীজ বপন করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে রোপা পদ্ধতির চেয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন আগে ধান পাকে। কৃষকরা জানান, ড্রাম সিডারের মাধ্যমে একজন কৃষক দিনে দুই একর জমিতে ধান চাষ করতে পারেন। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে এই ধানের চারা রোপণ করতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিকের প্রয়োজন। ড্রাম সিডারে ধান চাষ করায় উৎপাদন খরচ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম লাগছে। তাই ধান চাষে ড্রাম সিডার ব্যবহার লাভজনক দেখে দিন দিনে কৃষকরা এ পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন। ধান চাষে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ড্রাম সিডারের ব্যবহার। উপজেলার টালকী ইউনিয়নের কৃষক জুলহাস উদ্দিন এবছর এক একর জমিতে ড্রাম সিডার পদ্ধতিতে সরাসরি বীজ বপনের মাধ্যমে ধান চাষ করেছেন। এতে তার ২০ ভাগ শ্রমিক খরচ সাশ্রয় হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, গত ২ বছর ধরে রুনিগাঁও গ্রামের কৃষক শাহাব উদ্দিন ড্রাম সিডারদিয়ে বোনা ধানের চাষ করায় রোপা ধানের তুলনায় শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ বেশি ফলন পেয়েছেন। তা দেখে আমি ড্রাম সিডার দিয়ে ধান চাষ করার প্রতি আগ্রহী হয়েছি।
উপসহকারী কৃষি অফিসার সারোয়ার জাহান শাওন, আশরাফুল ইসলাম ও মশিউর রহমানসহ অনেকে জানান, তারা এলাকায় ঘুরে ড্রাম সিডারের মাধ্যমে ধান চাষে কৃষককে উৎসাহিত করছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, এই যন্ত্রটি হালকা হওয়ায় সহজে বহন করা যায়। ফলে সবাই এটি ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এতে হাইব্রিড জাতের ৩
হাজার হেক্টরের কিছু বেশি, উফসী জাত ৬ হাজার হেক্টরের কিছু বেশি, বাকী জমিতে স্থানীয় সুগন্ধী জাতের ধান চাষ করার জন্য কৃষকদের প্রস্তুত করা হয়েছে। এবছর ৬৭০ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন /২৭ জুলাই ২০২১/ আর এম