বনাঞ্চলে হাতির আবাসস্থল তৈরি করছে বনবিভাগ

0
316
আবু সায়েম, কক্সবাজার:
মায়ানমার জান্তা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে গিয়ে উজাড় হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৮ হাজার একর বেশি বনভূমি। যার কারণে ধ্বংস হয়েছে বন, পাহাড়, গাছপালা ও পশুপাখি। একই সাথে মারাত্নক হুমকি মুখে পড়েছে বন্যহাতি।
জানা গেছে, বন্যহাতির সবচেয়ে বেশি বিচরণ ছিল কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে পাহাড়ি বনাঞ্চলে। এছাড়াও ছিল বেশ কিছু হাতি চলাচলের করিডোর। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে নষ্ট হয় হাতির আবাসস্থল ও চলাচলের করিডোর। এরপর তৈরি হয় হাতি ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব। কক্সবাজারে গেল ৩ বছরে এই দ্বন্দ্ব প্রাণ দিতে হয়েছে ৭টির বেশি বন্যহাতিকে। ইতিমধ্যে রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বেশকিছু হাতির চলাচলের করিডোর চিহ্নিত করা হয়েছে। এই করিডোর তৈরিতে যদি জমি ক্রয় করতে হয়, তাহলে জমিও ক্রয় করা হবে। প্রজেক্টটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বনবিভাগ চেষ্টা করছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে হাতির একটি নিরাপদ আবাসস্থল, খাদ্য ও করিডোর তৈরি করতে। যাতে বন্যহাতিগুলোকে নিরাপদ রাখা যায়। স্থানীয় কিছু পাহাড়ে বসবাসকারি ব্যক্তি জানান, কক্সবাজার টেকনাফ পর্যন্ত ৬৩টি এশিয়ান হাতি রয়েছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে এসব হাতির আবাসস্থলে। ফলে এসব হাতির জীবন হুমকির মুখে পড়ে। তাদের চলাচলের করিডোরও বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে খাদ্য, আবাসস্থলসহ নানাভাবে বিপদে পড়ে কক্সবাজার বনাঞ্চলের হাতি। এরমধ্যে বনাঞ্চলে বাচ্চা হাতির দেখা যাওয়া ও হাতির বাচ্চা প্রসব করার খবরগুলো অত্যন্ত আনন্দদায়ক। তাই এই অবস্থায় হাতিদের যে আবাসস্থল রয়েছে তা নিরাপদ রাখতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তাসহ নানাভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
তবে বনবিভাগ বলছে, হাতির নিরাপদ আবাসস্থল, খাদ্য ও করিডোর তৈরিতে কাজ করছে বনবিভাগ। যার কারণে গেল ২ বছরের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বনাঞ্চলে দেখা মিলেছে ২০টির অধিক বন্য হাতির বাচ্চা। ইতিমধ্যে প্রায় ৭৪০ একর পাহাড়ি বনভূমিতে হাতির জন্য করা হয়েছে নিরাপদ আবাসস্থল, খাদ্য ও করিডোর উন্নয়ন। গেল দুই অর্থ বছরে উখিয়া ও টেকনাফে প্রায় ৭৪০ একর বনভূমিতে হাতির নিরাপদ আবাসস্থল, খাদ্য ও করিডোর উন্নয়নের কাজ হয়েছে। যার কারণে হাতিরা ফিরে পাচ্ছে তাদের নিরাপদ স্থান। ফলে গেল ২ বছরে উখিয়া ও টেকনাফের বনাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে ২০টি অধিক হাতির বাচ্চা। এছাড়াও গেল ২ বছরে হিমছড়ি, ধোয়াপালং, পানের ছড়া, ইনানী, হোয়াইক্যং, শীলখালী রেঞ্জের বনাঞ্চলে এসব হাতির বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। প্রতিনিয়ত বনাঞ্চলের দায়িত্বরত রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তা এবং সিপিজি সদস্যরা বন্যহাতি ও বাচ্চা হাতির প্রতি নজর রাখছে। এদিকে, মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) বিকেলে টেকনাফের হোয়াইক্যং পাহাড়ি এলাকায় দেখা মিলেছে ৭টি বন্যহাতি। যার মধ্যে ৫টি বড় হাতি ও ২টি হাতির বাচ্চা রয়েছে। এই দুটি বাচ্চার মধ্যে একটি সদ্য জন্ম নেয়া এবং আরেকটি বয়স দেড় বছর হবে। দুটি দলে বিভক্ত হয়ে হাতিগুলো বনাঞ্চলে বিচরণ করছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ বনবিভাগ।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে নষ্ট উখিয়া ও টেকনাফের হাতির নিরাপদ আবাসস্থল, খাদ্য ও করিডোর। যার কারণে খাবারের খোঁজে হাতি লোকালয়ে এসে বার বার আক্রমণ করে। ফলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা আসার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭টি হাতি মারা যায়। যার মধ্যে একটি হাতির বাচ্চা ছিল। এরপর ২০১৮ সালের শেষের দিকে বনবিভাগ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে। কিভাবে হাতির নিরাপদ আবাসস্থল, খাদ্য ও করিডোর উন্নয়ন করা যায়।
আলোকিত প্রতিদিন/৪ আগস্ট ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here