উলিপুরে নন-এমপিও শিক্ষককে ঘুষ দিতে হলো মাটি কাটা কাজের মজুরি থেকে

0
315

প্রতিনিধি, উলিপুর:
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দইখাওয়ার চর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল ইসলাম। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে বিনা বেতনে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন তিনি। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে চরম বিপাকে পড়েন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষ সহ অন্যান্য শিক্ষকরা। আর্থিক সংকটের কারনে নুরুল ইসলামের মতো আরও চার শিক্ষক কাজ নেন সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে। কিন্তু সেখানে তারা প্রতারিত হয়েছেন। পাননি ন্যায্য মজুরিও। তারপরও দিতে হয়েছে ঘুষ। এর প্রতিকার চেয়ে নুরুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষক জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় এমপি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে তাদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আর জেলা প্রশাসক অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনওকে। মহামারি করোনাভাইরাসে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেলে নুরুল ইসলামসহ তার বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করতে শুরু করেন। বাধ্য হয়েই সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ নেন তারা। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই ধাপে ৮০ দিন কাজ করেন। দুইশ টাকা মজুরি হারে জনপ্রতি ১৬ হাজার টাকা হয় তাদের মজুরি। গত ৩০ জুলাই ওই ইউনিয়নে শ্রমিকদের মজুরির টাকা বিতরণ করা হয় অভিযোগকারী নুরুল ইসলামের বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মজুরির টাকা নিয়ে বের হতেই বারান্দায় বসে থাকা আলী হোসেন, ইউসুফ আলী ও আয়নাল হক মৃধা প্রত্যেক উপকারভোগীর কাছ থেকে জোড় করে ৪ হাজার টাকা নিয়ে নেন।তিনি বলেন, এ সময় আমিসহ অন্য শিক্ষকরা চার হাজার করে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউসুফ আলী গংরা হুমকি-ধমকি দেন। তারা বলেন- উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর নির্দেশে টাকা তোলা হচ্ছে। এতে বাধ্য হয়েই তিনিসহ তার স্কুলের শিক্ষক মনসুর আলী, শাহীন আলম, শহিদুল আলম এবং শহিদুল ইসলাম তাদের ২০ হাজার টাকা দেন। পরে অসহায় শিক্ষকরা তাদের দেয়া ২০ হাজার টাকার মধ্যে ১০ হাজার ফেরত চেয়ে হাতে পায়ে ধরলেও মন গলেনি স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানের। বরং তারা উল্টো তাদের জীবননাশের হুমকি দেন। তিনি আরও বলেন, গত ৩ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে ফোন দিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় এমপি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগে দায়ের করেন তিনি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ভিডিও ফুটেজ দেখে সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ওই শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ এখনো পাইনি বলেও জানান তিনি। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, একজন শিক্ষক কতটুকু অসহায় হলে শ্রমিকের কাজ করতে পারেন। আর তাদের ন্যায্য মজুরি জোরপূর্বক হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ঘৃণিত। শুধু এসব শিক্ষকদের নয়, সেখানে বেশির ভাগ উপকারভোগীর কাছ থেকে একইভাবে ৪ হাজার করে টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে এর সত্যতা পাই। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করব”

আলোকিত প্রতিদিন/৬ আগস্ট ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here