প্রতিনিধি, রাজশাহী:
উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী তিন জেলায় করোনা সংক্রমণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে মৃত্যুহার প্রায় আগের মতোই রয়েছে। তবে গত জুলাই মাসের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত যে হারে করোনায় মানুষ মারা গেছে, তার চেয়ে কিছুটা কমে এসেছে। রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর ও সিভিল সার্জন দপ্তরের তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীরা অনেকটা অবহেলা করে একেবারে শেষদিকে এসে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে বা চিকিৎসা নিচ্ছে। এ কারণে সংক্রমণ কমে অর্ধেকে নেমে এলেও মৃত্যুহার সে হারে কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। তাহলে মৃত্যুহারও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।
রাজশাহী সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে পাঠানো তথ্যচিত্রে দেখা যায়, গত ১৫ জুলাই রাজশাহী জেলায় এক দিনে ২৮০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। ওই দিন জেলায় মারা যান তিনজন। আর মোট আক্রান্ত রোগী ছিল ২১ হাজার ২১৮ জন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২০২ জন।
বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনা শনাক্ত হয় ১৪২ জন। একই সময়ে মারা যায় দুজন। তা নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫২ জন। এর বাইরে মোট আক্রান্ত রোগী ছিল ২৪ হাজার ৭৮০ জন। অর্থাৎ এই ১৯ দিনে জেলায় মৃত্যুর হার ২.৬৩।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে পাঠানো চিত্রে দেখা যায়, গত ১ জুলাই পর্যন্ত রাজশাহীতে মোট করোনা সংক্রমিত রোগী ছিল ১৭ হাজার ৬৪০ জন এবং মোট মৃত্যু ছিল ১৬০ জন। সে হিসাবে জুলাইয়ের প্রথম ১৫ দিনে জেলায় দিনে গড়ে করোনা সংক্রমণ ছিল ২৩৮ জন। আর ৩১ জুলাই থেকে গত বুধবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮২৬ জন। সে হিসাবে এই পাঁচ দিনে গড় সংক্রমণ দাঁড়ায় ১৬৫ জনের কিছুটা বেশি। আর এই পাঁচ দিনে মারা যায় আটজন (১.৬০ শতাংশ)। ফলে এই পাঁচ দিনে গড় সংক্রমণের হার যেমন কমেছে, মৃত্যুর হারও কমেছে।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ১ জুলাই মোট সংক্রমিত রোগী ছিল চার হাজার ১৫০ জন। আর মোট মৃত্যু ছিল ১১৩ জন। সেখানে ১৫ জুলাই মোট সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল চার হাজার ৬১৫ জন এবং মোট মৃত্যু ১২৮ জন। সে হিসাবে এই কদিনে সীমান্তবর্তী এই জেলায় গড় সংক্রমণ ছিল ৩১ জন। ওই ১৫ দিনে গড় মৃত্যুর হার ছিল একজন। সেখানে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট সংক্রমিত রোগী ছিল পাঁচ হাজার ৯৩ ও মৃত্যু ১৪০ জন। ফলে এই ১৯ দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গড় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৫ জনের কিছু বেশি। এই ১৯ দিনে এখানে মারা যায় ১২ জন। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিদিন একজনের কম মারা যায় এখানে।
সীমান্তবর্তী আরেক জেলা নওগাঁয় গত ১ জুলাই মোট সংক্রমিত রোগী ছিল চার হাজার ৬৩৪ ও মোট মৃত্যু ছিল ৮২ জন। সেখানে গত ১৫ জুলাই মোট সংক্রমণ দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৪৫৭ জন এবং মোট মৃত্যু ১০৯ জন। সে হিসাবে এখানে ওই ১৫ দিনে সংক্রমণের হার ছিল ৫৪ এবং গড়ে প্রতিদিন প্রায় দুজন করে মারা যায়। সেখানে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত এখানে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ছয় হাজার ১০ জন এবং মোট মৃত্যু ১২২ জন। সে হিসাবে এই ১৫ দিনে এখানে প্রতিদিন গড়ে ২৯ জনের কিছু বেশি রোগী শনাক্ত হয় এবং মারা যায় একজনেরও কম।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, জুলাই মাসের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি থাকত। জুলাইয়ের শেষ দিকে এসে রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। তবে গড় মৃত্যুর হার এখনো ১৩ জনের ওপরে রয়েছে। আক্রান্তরা সচেতন না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় হাসপাতালে আসায় মৃত্যুর সংখ্যা সেভাবে কমানো যাচ্ছে না।
তিনি আরো জানান, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত জুলাই মাসে ৫২৩ জনের মৃত্যু হয়। জুনে মারা যায় ৪০৫ জন। আর ১ আগস্ট থেকে গত বুধবার সকাল পর্যন্ত মারা যায় ৬৬ জন। সে হিসাবে গত চার দিনে এখানে মৃত্যুর হার ১৬.৫। এই হার গত জুলাইয়ে ছিল ১৬.৮৭। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা খুব একটা কমেনি।
আলোকিত প্রতিদিন/৬ আগস্ট ২০২১/ দ ম দ