প্রতিনিধি, রাজশাহী :
নাটোরে সরকারি খাদ্য গোডাউনে পচা ও নিম্নমানের চাল প্রবেশ করানোর সময় আ’লীগ নেতা বেলালুজ্জামান বেলুর ৫৯১ বস্তা চালসহ ট্রাক জব্দ করেছে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা খাতুন।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে সদর উপজেলা খাদ্য গোডাউনের ৬নং গোডাউনে গোপনে ট্রাক থেকে চাল আনলোড করার সময় এসব পচা ও নিম্নমানের চাল জব্দ করা হয়। পুলিশ ও খাদ্য গোডাউন কর্মকর্তারা জানান, নাটোর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বেলালুজ্জামান বেলু সদর উপজেলার মেসার্স রহমান চালকল, মেসার্স তৈয়ব চালকল এবং মেসার্স মান্নান চালকল নামে তিনজন মিলারের নাম করে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকার একটি গোডাউন থেকে একটি ট্রাকে ৫৯১ বস্তা চাল নিয়ে খাদ্য গোডাউনে আসেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গোডাউন কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়নে শ্রমিকরা গোডাউনে ১৭৫ বস্তা পচা ও নিম্নমানের চাল প্রবেশ করায়। এসময় রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যম কর্মীরা বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করে। পরে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা খাতুন গিয়ে পচা ও নিম্নমানের চাল জব্দ করেন। এসময় নাটোর সদর থানার ওসি তদন্ত আব্দুল মতিন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্র লাল চাকমা সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে খাদ্য গোডাউনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে এসব পচা ও নিম্নমানের চাল গোডাউনে প্রবেশ করানোর অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সঠিক তথ্য প্রমাণ না থাকার কারণে চক্রটিকে ধরতে পারছিল না প্রশাসনের লোকজন। নাটোর সদর ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গোডাউন কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা সকল বস্তা চেক করার পর গোডাউনে প্রবেশ করায়। আজও সে কাজটিই করছিলাম। তাহলে কিভাবে ১৭৫ বস্তা পচা ও নিম্নমানের চাল গোডাউনে ঢুকলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি।
নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা খাতুন বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পচা এবং নিম্নমানের চাল গোডাউনে প্রবেশ করানোর সত্যতা মিলেছে। তদন্ত সাপেক্ষে খাদ্য গোডাউন কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নাটোর সদর থানার ওসি তদন্ত আব্দুল মতিন বলেন, গোডাউনে ১৭৫ বস্তা চাল প্রবেশ করানো হয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবো না। তবে ট্রাকে থাকা বাকি চাল এবং ট্রাক জব্দ দেখানো হয়েছে। সেগুলো জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তবে পুরো ঘটনা নিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হবে। বাকি বিষষগুলো ডিসি এবং ইউএনও মহোদয় পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন। তবে নাটোর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও চাল ব্যবসায়ী বেলালুজ্জামান বেলুর সেলফোনে একাধিকবার ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, এর আগে গত ৩১ জুলাই নাটোর সদর উপজেলা খাদ্য গোডাউনে ৪০ টন পচা ও নিম্নমানের চাল প্রবেশ করানোর চেষ্টা করে একটি সিন্ডিকেট চক্র। ঈশ্বরদীর মুলাডুলি থেকে দুটি ট্রাকে ৪০ টন সরকারি চাল খালাস করতে নির্ধারিত দিনের চার দিন পর গোডাউনে এসে ট্রাক দুটি পৌছে। তবে এক থেকে দেড় ঘ›ণ্টার পথ আসতে চার দিন লাগায় কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্র লাল চাকমাকে। এছাড়া কারিগরি খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফারুক হোসেন এবং সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল করিম।
এবিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্র লাল চাকমা বলেন, গোডাউনে পচা এবং নিম্নমানের চাল প্রবেশ করোনার জন্য যদি ওসি এলএসডি দায়ী থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া এর আগের ঘটনায় আমরা তদন্ত কমিটি চালের ঠিকাদার এবং আমাদের কিছু কর্মকর্তার গাফিলতি পেয়েছি। সেগুলো তদন্ত করে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনিই সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৩ আগস্ট, ২০২১/ দ ম দ