মনিরামপুরে নয় মাথার খেজুর গাছকে ঘিরে চলছে আরাধনা

0
298

প্রতিনিধি, মনিরামপুর (যশোর):
যশোরের মনিরামপুরের মদনপুর গ্রামে সাত মাথার খেজুর গাছ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একগাছে বহু মাথা জন্ম নেওয়ায় বিষয়টি আধ্যাত্মিক ভেবে লোকজন নানা কারণে এখানে এসে মানত করছেন। এখানে কেউ আসেন সন্তান চাইতে,আবার কেউ আসেন রোগমুক্তির জন্য। বহুবছর ধরে এটি চলমান রয়েছে। এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শোনাযাচ্ছে অনেক আগে এলাকাবাসী সাত মাথার খেজুর গাছে মধ্যরাতে সাদা পোশাকে এক দরবেশকে নামাজ পড়তে দেখেছেন। সময়ের আবর্তনে সাত মাথার খেজুর গাছটি মারা গেছে। সেখানে এখন জঙ্গল সৃষ্টি হয়েছে। ভয়ে কেউ ওই জঙ্গল পরিস্কার করেন না। দূরদূরন্ত থেকে লোকজন ওই জঙ্গলে এসে ভিজে কাপড়ে সাতপাক দিয়ে মানত করেন। রেখে যান তেল পানি। যা পরে ব্যবহারে মেলে মুক্তি। মারা যাওয়া সাত মাথার খেজুর গাছটি যে জমিতে ছিল ওই জমির অপরপ্রান্তে অনেক বছর পরে এসে অন্য একটি খেজুর গাছে দশ মাথার সৃষ্টি হয়েছে। এখন দশ মাথার গাছটিকে ঘিরে চলে আরাধনা। জমির মালিক স্থানীয় পশুমতি মণ্ডল বলেন, আমাদের ৫৭ শতক জমি ছিল। কয়েক বছর আগে বেচে দিছি। জমি লাগোয়া এক শতক খাস জমিতে বনজঙ্গল হয়ে আছে। শুনিছি ওইখানে সাত মাথার একটা খেজুর গাছ ছিল। বহু বছর আগে গাছটি মারা গেছে। আমার বয়স ৬০-৬৫ বছর। ওই গাছ আমি দেখিনি। গাছ মরলিও সেই জমি আমরা চাষ করিনে। এখন সেখানে জঙ্গল।
তিনি বলেন, খেজুর গাছ যখন বেঁচে ছিল তখন থেকে মানুষ গাছতলায় এসে মানত করত। রোগবালাই সেরে গেলে খাসি বা মুরগি জবাই দিয়ে রান্না করে এলাকার পোলাপান ডেকে খাতি দিত। এখনো লোকজন ডেকে খাতি দেয়।
পশুমতি বলেন, মরে যাওয়া খেজুর গাছটির অদূরে আমার জমির মধ্যি নয় মাথার একটি খেজুর গাছ আছে। ২০-২৫ বছর আগে চারা অবস্থায় তিন মৌসুম গাছে রস পাইছি। পরের বার গাছ তোলাইছি। তখনো রস সংগ্রহ শুরু করিনি। একদিন কে বা কারা গাছটার আগা ভেঙে ফেলে। মাথার অল্পকিছু ছিল। তাতে আমি গোবর লেপে দিই। কিছুদিন পরে দেখি নতুন মাথা গজিয়ে বাঁকা হয়ে উঠতেছে। একে একে দশটা মাথা বের হয়েছে। এক মাথা মারা গেছে। এখন নয় মাথা আছে। সেই থেকে আর রস সংগ্রহ করিনে। গাছ রাইখে দিছি। মানুষজন এসে ওই গাছের আগায় তেল পানি রেখে যায়। পরে এসে নিয়ে যায়। শুনি এতে নাকি উপকার হয়।
মদনপুর গ্রামের বৃদ্ধ ওসমান গনি বলেন, কারো বাচ্চা না হলি বা যে কোন রোগ হলি আমাগের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন এখানে আসে। ভিজে কাপড়ে মহিলারা জঙ্গলের চারপাশে সাত পাক দিয়ে মানত করে। যে আইসে মানত করে তারটা পুরন হয়। তিনি বলেন, একবার মুক্তারপুর গ্রামের একজনের পেট ফুলিলো। ওষুধে সারিনি। তখন মরা গাছ তলায় আইসে মানত করিল। পরে রোগ সারিল। কিন্তু মানত পুরন না করায় আবারো ফোলা রোগ হইল। বৃদ্ধ আরও বলেন, আমাগের বিশ্বাস হয়। কিন্তু মুসলমান পরিবার হওয়ায় আমরা কোন সময় মানত করতি আসিনে। সালমা নামের এক নারী বলেন, আগের সাত মাথা গাছ মরে যাওয়ায় হয়তো নয় মাথার খেজুর গাছটা হয়েছে। ভয়ে আমরা খেজুর গাছের শুকনো ডাল পাতা কিছু পোড়াই না।মানুষ গাছের ডালে তেল পানি রেখে যায়। পরে আইসে নিয়ে যায়। উপকার হয় বলে প্রায়ই মানুষ এখানে আসে। কেউ মুরগি এনে ছেড়ে দেয়। জঙ্গলে খাবার রেখে যায়। আবার অনেকে বাড়ি থেকে গোস্ত ভাত রান্না করে এনে বাচ্চাদের ডেকে খেতে দেন। মানত করলে পূরণ হওয়ায় আমাগের বিশ্বাস খেজুর গাছে কোন পীর ওলি আছেন।
মনিরামপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রউফ বলেন, খেজুর গাছের একাধিক মাথা জন্মানো আধ্যাত্মিক কিছু না। কোন কারণে গাছের মাথা ভেঙে গেলে, ভাঙা মাথা ভাগ হয়ে একাধিক মাথা জন্ম হতে পারে। খেজুরের এই গাছের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৮ আগস্ট ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here