প্রতিনিধি,মুন্সীগঞ্জ :
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়ন, একটি ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন। উপজেলার তালতলা বাজারের পার্শ্ববর্তী গোড়াপীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের পশ্চিম পাশে মালখনগর ডাকঘর (পোস্ট অফিস)। এ অফিসে ঢুকতেই হাতের বামে চিঠির বাক্স। আগে দিনে দুই বার মানুষের প্রয়োজনেই খোলা হতো। এখন খোলা হলেও এর মধ্যে তেমন কিছুই পাওয়া যায়না। এক সময় ডাকপিয়ন দেখা মাত্রই মনের মধ্যে নাড়া দিত, আসলো বুঝি প্রিয়জনের হাতে লেখা একখানা কাগজ যা পড়ে বেশকিছুদিনের জন্য মনের শান্তনা দেওয়া বা হঠাৎ কোন দুঃসংবাদ এর খবর জানা। এক সময়ে সকাল হলেই মানুষ ছুটে আসত এই পোস্ট অফিসে চিঠির খোঁজে, আবার কেউ প্রিয়জনদের কাছে চিঠি পাঠানোর জন্যে। সময়ের সাথে সাথে ভার্চুয়াল জগতের সুবিধায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে একসময়ের ব্যস্ততম এই ডাকঘর । অথচ বেশি দিন আগের কথা নয়, অধিকাংশ পরিবার কাক ডাকা ভোরে প্রিয়জনের হাতের একটি চিঠি বা অন্য কোন পত্রাদির জন্য ডাক পিয়নের অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকতেন। শুধু তাই নয়, মানুষ তখন প্রিয়জনদের খবর জানতে বা তার লেখা একটি চিঠি পাবার আশায় সকালে বিকালে ডাক পিয়নের বাড়িতে ছুটে যেতেন। এর পরও যখন আপনজনদের কোন চিঠি বা সংবাদ পেতেন না তখন তারা তাদের সেই চিঠির জন্য ডাক পিয়নকে বার বার অনুরোধ করতেন পোস্ট অফিসে খোঁজ নিতে। বিশেষ করে ওই সময় যাদের আত্মীয়স্বজন বিদেশ থাকতেন তাদের কাছে ডাক পিয়নের কদরই ছিল আলাদা। তাছাড়া ডাক পিয়নও সে সময় প্রাপকের হাতে বিদেশী কোন চিঠিপত্র তুলে দিতে বেশ আগ্রহী ছিলেন। কারণ তিনি বিদেশী কোন চিঠি প্রাপকের হাতে তুলে দিতে পারলেই প্রাপক তাকে বকশিস দিয়ে খুশি করতেন। শুধু চিঠি নয়, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রিয়জনদের পাঠানো টাকা-পয়সা বা অন্যান্য ডকুমেন্টস’র জন্যও ডাক পিয়নের খোঁজ করতে হতো। ডাক পিয়নও তখন তার দায়িত্ব কর্তব্য যথারীতি পালন করতেন। অনেক সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাপকের কাছে তার কাঙ্খিত চিঠি, টাকা বা অন্যান্য ডকুমেন্টস পৌঁছে দিতেন। এছাড়া ওই সময় যারা প্রিয়জনের কাছে চিঠিপত্র বা অন্য কোন ডকুমেন্টস পাঠাতেন তারা ছুটে যেতেন কাঙ্খিত ডাক বাক্সের কাছে। ঝড়, বৃষ্টি ও রোদকে উপেক্ষা করে আপনজনের কাছে লেখা চিঠি ডাক বাক্সে পোস্ট করতে পারলে তবেই স্বস্তি। আর তখন ডাক বাক্স গুলোও সব সময় লাল রঙে রাঙিয়ে রাখা হতো। যাতে সহজেই তাতে মানুষের দৃষ্টি পড়ে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধিত হওয়ায় এখন আর প্রিয়জনের কোন খবর জানতে ডাক পিয়নের পথ চেয়ে থাকতে হয়না। প্রিয়জন পৃথিবীর যেকোন প্রান্তেই থাকনা কেন মোবাইল ফোন এবং ইন্টারসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে তার খবর নেওয়া যায়। আর তার সাথে টাকা পয়সা লেনদেন করতেও এখন আর পোস্ট অফিস বা ডাক পিয়নের প্রয়োজন হয়না। নিমিষের মধ্যে নগদ,বিকাশ এবং অনলাইনসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে টাকা-পয়সা লেনদেন করা যায়। সে কারণে এখন আর মানুষের কাছে ডাকঘর , ডাক পিয়নের কদর নেই। একই কারণে ডাক বাক্স বা পোস্ট অফিসের গুরুত্বও কমে গেছে। বর্তমানে চাকরি বা অফিসিয়াল চিঠিপত্র লেনদেন ছাড়া পোস্ট অফিস বা ডাক বাক্সের প্রয়োজন হয়না। ফলে ডাক পিয়ন ও ডাক বাক্সের গুরুত্ব একদমই কমে গেছে। মালখানগর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আমিনুর রহমান জানান, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে পোষ্ট অফিসের মত গুরুত্বর্পন জায়গাটি অনেকটাই নিষ্প্রাণ। কিছু কাজের প্রয়োজনে এখন দিনদিন গুরুত্ব বাড়ছে। মালখানগর ইউনিয়ন ডাকঘরের সাব- পোস্ট মাস্টার সোহরাব হোসেন জানান, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এখন আর কেউ ডাক বাক্সে চিঠিপত্র ফেলেন না । ডাকযোগাযোগের মাধ্যমে তেমনব্যক্তিগত চিঠিপত্রের আদান প্রদান করেন না। কিন্তু তারপরও নিয়মানুযায়ী ডাক পিয়নরা ডাক বাক্স গুলো খুলে থাকেন। এছাড়া পোষ্ট অফিসে সঞ্চয়পত্র,অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ থকায় পোষ্ট অফিসের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারী ও অন্যান্য দাপ্তারিক কাজ গুলে ডাক বিভাগই করে থাকে। এতকিছুর পরেও সেই ডাক পিয়নের অপেক্ষায় থাকা সময়গুলো অনুভূতিতে নাড়া দেয় প্রায় সকল মধ্যবয়সীদের কাছে। খুবই কম সংখ্যক মানুষই এই ডাক পিয়নের কথা ভুলে গেছেন। আর ভুলে গেলেও বা কি হবে, সেই স্বর্ণালী দিন তো আর ফিরে আসবে না। এমন আফসোসের সুর অনেক মানুষের মুখেই। সেই হতাশা থেকে রেহাই পেতে বর্তমান সরকারের ডাক বিভাগকে নিয়ে গৃহিত সকল পদক্ষেপকে স্বাগত জানান সচেতন নাগরিকবৃন্দ।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২২ আগস্ট ২০২১ / আর এম