ফুলবাড়ীতে দেখা মিলছে না দেশিমাছের 

0
535

প্রতিনিধি,ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম):

কুড়িগ্রাম জেলার উত্তরের ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা একটি উপজেলা ফুলবাড়ী। আয়তনে খুব বড় না হলেও ভারত হতে এ উপজেলা দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে ধরলা, বানিদাহ, বারোমাসিয়া এবং নীল কুমার নদী। আর এসব নদীতে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যেত দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ছোট-বড় মাছ। পাশাপাশি এসব নদীর মাধ্যমে এখানকার বিভিন্ন নানা, ডোবা, খাল, পুকুর ও জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ ছরিয়ে পরতো।এ অঞ্চলে দেশী মাছ ছিল একেবারে সহজলভ্য। দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রাচুর্য থাকায় এখানকার বাসিন্দারা বুক ফুলিয়ে পরিচয় দিত আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। তবে বর্তমানে তা অতীত। পাতে ভাত জুটলেও ওঠেনা দেশী প্রজাতির মাছ। ক্রমশই নদ-নদী, খাল বিল, পুকুরসহ মুক্ত জলাশয় গুলো মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে। হারিয়ে যাওয়া দেশী মাছের স্বাদ ভুলে যাচ্ছে ফুলবাড়ীর মানুষজন। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় দেশীয় প্রজাতির মাছের বিলুপ্তির বিষয়ে শাহবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুজাউদ্দৌলাহ বলেন- নদী-নালা, খাল-বিল, গর্ত-ডোবা ইত্যাদি ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাওয়া, মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়া, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, ছোট বড় জলাশয় সেচে মাছ ধরা, ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ নিধনের কারণে অনেক প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। এছাড়াও লাগামহীন ভাবে কারেন্টজাল ব্যবহার, বিষ প্রয়োগে মৎস্য আহরোণ এবং জলাশয় লিজ দেয়ার ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই দেশীয় মাছ সম্পূর্নভাবে বিলুপ্তি ঘটবে। উপজেলার ঘোগারকুটি গ্রামের ৪৯ বছর বয়সের গোলজার হোসেন বলেন, কিশোর বয়স থেকেই মাছ ধরাকে পেশা হিসেবে নিয়েছি। প্রায় এক যুগ ধরে নদী-নালা,খাল-বিল থেকে মাছ ধরে হাটবাজারে বিক্রির মাধ্যমেই সংসার চালাতাম। গত কয়েক বছর হতে দেশীয় অনেক মাছ চোখে দেখছি না।তাই এখন দিন মজুরের কাজ করছি। উপজেলার বিভিন্ন মাছের বাজারে গিয়ে কার্প জাতীয় মাছ বেচা-কেনা করতে দেখা গেলেও দেশীয় প্রজাতির মাছ একবারেই চোখে পরেনি। উপজেলার বিভিন্ন মাছ বাজারের প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা জানায় , কয়েক বছর আগেও দেশী প্রজাতির মাছের কোনো ঘাটতি ছিল না। এখন তো দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়াই যায় না। কালে-ভদ্রে যাও অল্প কিছু মেলে, দাম অনেক বেশি। এ মাছ বিত্তবান ছাড়া সাধারণ মানুষের কেনার সাধ্য থাকে না। উপজেলার চন্দ্রখানা (শাহবাজার) গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলি অবসরপ্রাপ্ত (আর্মি),রফিকুল ইসলাম(মন্টু) জানান, আগে আমাদের এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। মাছ খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে যেত গ্রামাঞ্চলের মানুষ। দেশীয় নানান প্রকার মাছ শুকিয়ে শুটকি, শিদল বানানো হতো। আমরা সারা বছরই দেশীয় মাছের স্বাদ পেতাম। এখন বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরেও দেশিমাছ পাওয়াই যায় না । ঘোগারকুটি গ্রামের সোনা উদ্দিন বলেন, বাড়ির আশপাশের খাল-বিল, ডোবা ও নদী থেকে সারা বছর মাছ ধরে সংসার চালাতাম। গত কয়েক বছর ধরে সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করেও বিক্রি করার মত মাছ পাই না। তাই বাধ্য পেশা বদল করে এখন কাঠের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছি। এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রায়হান উদ্দিন সরদার জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমরা ধারাবাহিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মা ও পোনামাছ নিধন না করতে আমরা সচেতনতা মূলক প্রচারনা চালাচ্ছি। অবৈধ কারেন্টজাল ব্যবহার করে যাতে কেউ মৎস্য নিধন করতে না পারে সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান চালানো হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

আলোকিত প্রতিদিন/২৪ আগস্ট ২০২১/ আর এম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here