গজারিয়ায় লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ঔষধ বিক্রি

0
549

ক্রাইম রিপোর্টার,মুন্সিগঞ্জ :

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার আনাচেকানাচে পাড়া-মহল্লার হাটে বাজারে হাতুড়ে ডাক্তাররা তো আছেনই পাশাপাশি লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসির সংখ্যা আশংঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধির সাথে সাথে স্বাস্থ্য ঝুকিতে সাধারণ মানুষ। অনুসন্ধানে জানা যায়, চলমান মাদক অভিযানে বিভিন্ন এলাকার মাদকের চিহ্নিত স্পটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে এটি বর্তমান সরকার ও প্রশাসনের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আগামী প্রজন্মকে রক্ষায় মাদক প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই। দিশেহারা মাদকসেবীরা এখন মাদক সংকটে ঝুকছে অনুমোদনহীন এসকল ফার্মেসিগুলোতে। অধিক লাভের আশায় ফার্মেসিগুলো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করছে নানা ধরনের নেশা জাতীয় সিরাপ, ঔষধ ও ঘুমের ট্যাবলেট। অনুমোদহীন এসব ফার্মেসিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াটা খুবই জরুরী। অনুমোদিত যেসব ফার্মেসি প্রেসক্রিপশন ছাড়া এসব ঔষধ বিক্রি করবে তাদেকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা জানি ঔষধ অসুস্থ মানুষকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার অন্যতম একটি পাথেয়। গজারিয়া উপজেলার পাড়া- মহল্লায় সেই ঔষধ এখন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনুমোদনহীন শত শত ফার্মেসী গড়ে উঠায় এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মানুষের যত রোগ বালাই হয় তার একটা বড় অংশ হয় জীবানু সংক্রমণের ফলে। জীবানুর কারনে রোগ হলে জীবানুবিরোধী ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। যাকে বলে ‘এন্টিবায়োটিক। কোন রোগটা জীবাণুর কারনে
আর কোন রোগটা জীবানুর কারনে নয়, আর জীবানুর জন্য হলে কোন রোগে জীবানুবিরোধী কোন ওষুধটি দিতে হবে তা বুঝার জন্যই এমবিবিএস, বিডিএস কোর্সের ৬ বছর সহ পরবর্তীতে বছরের পর বছর ডাক্তারি পড়তে হয়। যে রোগটির জন্য জীবাণু দায়ী নয় সে রোগের চিকিৎসার জন্য জীবানুবিরোধী ওষুধ দরকার নাই। চিকিৎসক যখন রোগীকে জীবানুবিরোধী ওষুধ দেন , তখন সেটি রোগীর শরীরে উপস্থিত রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুকে হত্যা করে বা জীবানুটিকে অচল করে দেয়। তার পর রক্ত সেই মরা বা স্থবির জীবানুকে চূড়ান্তভাবে শরীর থেকে অপসারন করে। এমবিবিএস, বিডিএস ডাক্তারেরা সাধারনত চিকিৎসাবিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী চেষ্টা করেন রোগীকে প্রথম বা দ্বিতীয় বা একান্ত অপারগ হলে তৃতীয় প্রজন্মের ওষুধ দিয়ে রোগ সারাতে। তাই এখন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ঔষধ প্রয়োগ করেও আর এই জীবানুকে দমন করা এর চাইতে বেশি ক্ষমতাবান নতুন কোন জীবানুবিরোধী ওষুধও আর আবিষ্কৃত হয় নি। ফলে চিকিৎসাবিহীন মৃত্যুর দিকে ধাবমান হচ্ছে মানবজাতি। সে কারনে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী ভালো ডাক্তাররা চেষ্টা করেন কম ক্ষমতার ঔষধের ব্যবহার করে যেন রোগীর জীবানু সংক্রমণের চিকিৎসা করা যায়। কেননা চিকিৎসক হওয়ার কারনে তিনি জানেন যে, শুরুতেই যেকোন রোগীকে উচ্চ ক্ষমতার ঔষধ প্রয়োগ করলে পরবর্তীতে এইসব জীবানুকে দমন করার জন্য আর কোন ঔষধ থাকবে না। ফলে জীবানুর কাছে অসহায় হয়ে পড়বে মানুষ। বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে তারা । তাই চিকিৎসকগণ সাধারনত চেষ্টা করেন রোগীকে প্রথম বা দ্বিতীয় বা একান্ত অপারগ হলে তৃতীয় মাত্রার ওষুধ দিয়ে রোগ সারাতে। এভাবে কাজ না হলে তখন রোগীর শরীর থেকে বিভিন্ন নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখা হয়, সেখানে কোন জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ হয়েছে এবং কোন ওষুধটি সেই জীবাণুটির বিরুদ্ধে কার্যকর । তখন সে ফলাফল অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো রূপ ধারণ করে আমাদের উপজেলার ফার্মেসিগুলোতে দেখা যাচ্ছে বিশেষ করে পাড়া-মহল্লা হাটবাজারের ফার্মেসি ওয়ালাদের একটা বিশেষ অংশ নিজেকে দেশের সেরা চিকিৎসক প্রমাণ করার জন্য বা নিজের ‘হাত-যশ দেখানোর জন্য রোগীদেরকে শুরুতেই সর্বোচ্চ ক্ষমতার (হাই এন্টিবায়োটিক) জীবানুবিরোধী ওষুধ প্রয়োগ করে। অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা নির্মম বাস্তবতা। ফার্মেসিওয়ালারা এসব উচ্চ ক্ষমতাধর ঔষুধের নামও জানার কথা নয়। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদেরকে এসব ওষুধের নাম জানায়। ফলে যে ওষুধ প্রয়োগ করার আগে ডাক্তারেরা শতবার চিন্তা করেন , সেই ওষুধটি ফার্মেসিওয়ালা নিমিষেই রোগীর শরীরে প্রয়োগ করে। ৪র্থ প্রজন্মের বাইরে ভিন্ন আর একটি সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ঔষুধ আছে। চিকিৎসকরা সাধারনত এ ওষুধটি রোগীর নমুনা পরীক্ষা না করে কখনো প্রয়োগ করেন না। কেননা এটা জীবানুর বিরুদ্ধে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সর্বশেষ অস্ত্র। এই ওষুধটি সাধারনত আইসিইউ, বার্ন ইউনিট, এবং সাধারন ওয়ার্ডে যেসব রোগীর জীবানু সংক্রমণ ১ম, ২য় বা ৩য় প্রজন্মের ওষুধ দ্বারা নিরাময় হচ্ছে না তাদেরকে দেয়া হয় , নমুনা পরীক্ষা করার পর। এই ওষুধটি প্রয়োগ করার পর সাধারণত ডাক্তারকে তার সহকর্মীদের নিকট অঘোষিত, অলিখিত জবাবদিহি করতে হয়, কেন কি কারনে এটা প্রয়োগ করা হল? কিন্তু লোমহর্ষক বিষয় হচ্ছে, ফার্মেসিওয়ালাদের কেউ কেউ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজের কেরামতি প্রদর্শনের জন্য রোগীকে নিজের মত করে ঔষধ দেয়। দেখা যায় ডাক্তার রোগীকে ২য় প্রজন্মের ওষুধ লিখেছেন। রোগী ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ফার্মেসি ওয়ালার কাছে গেলে ফার্মেসি ওয়ালা বলেন, ডাক্তার এই সব কি ছোট খাট ওষুধ দিয়েছে আপনাকে, এর চাইতে ভালো ওষুধ তো আমিই দিতে পারি আপনাকে!” এই বলে ফার্মেসিওয়ালা রোগীকে পরবর্তী উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ ধরিয়ে দেয়। গজারিয়া উপজেলার পাড়া-মহল্লার ও হাট-বাজারের এই ফার্মেসিওয়ালার এহেন দৌরাত্মের কারনে পরিস্থিতি ডাক্তারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফলে দিনে দিনে উচ্চ ক্ষমতার জীবানুবিরোধী ওষুধগুলো জীবাণুর বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে চলে যাচ্ছে মানব সভ্যতা। ফলে ভবিষ্যতে এমন অবস্থা হতে যাচ্ছে যখন দেখা যাবে জীবানুর বিরুদ্ধে আর কোন এন্টিবায়োটিক কার্যকর হবে না। তাই স্থানীয় এলাকা ও জনসচেতনতার স্বার্থে গজারিয়ায় লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি বৃদ্ধি এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষধ বিক্রি বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভেজাল, মেয়াদ উর্ত্ধসঢ়;তীন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষধ বিক্রি, রশিদ ছাড়া ঔষধ রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ এই অভিযোগে অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নাই।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৯ আগস্ট ২০২১/ আর এম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here