প্রতিনিধি, শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) :
শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়াল বিল সহ এই অঞ্চলের সর্বখানেই এখন পানিতে টইটুম্বুর। বিস্তীর্ণ আড়িয়াল বিলের জলাশয়ে কুঁচিয়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছে একদল কুঁচিয়া শিকারির। কুঁচিয়া শিকার করেই সংসারের প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা। ছোট ডিঙ্গি কোসা নৌকা করে বাঁশের তৈরী চাই (বিশেষ ফাঁদ) নিয়ে আড়িয়াল বিল চষে বেড়ান তারা। দিন শেষে প্রচুর কুঁচিয়া ধরতে সক্ষমও হচ্ছেন। এসব কুঁচিয়া পাইকারের কাছে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন হচ্ছে তাদের। এমনটাই দেখা গেছে, শ্রীনগর উপজেলার গাদিগাট সংলগ্ন বিখ্যাত আড়িয়াল বিল এলাকা ঘুরে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আড়িয়াল বিল এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে জলাশয়ে কচুরি পানা ও ঝোপ-জঙ্গল সম্পন্ন ডোবায় এসব চাই/ফাঁদ পাতা হচ্ছে। এসব চাইয়ের মধ্যে টোপ গিলতে এসে কুঁচিয়া ফাঁদে আটকা পড়ছে। দিন শেষে একেকজন শিকারী প্রায় ৮ থেকে ১০ কেজি পরিমান কুঁচিয়া ধরতে পারছেন। বিক্রি করছেন নিদিষ্ট পাইকারের কাছে। সংগ্রহকৃত কুঁচিয়া পাইকারী বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন পাইকাররা। বিকল্প মধু (৪০) হরসিদ মন্ডল (৪৮), ব্রাহ্মণ হালদার (৫০), সুমন মন্ডলের (৩০) সাথে আলাপ করে জানা যায়, তারা গোপালগঞ্জের তাল পুকুরিয়া এলাকা থেকে আড়িয়াল বিল এলাকায় এসেছেন কুঁচিয়া শিকারের জন্য। এই পেশাকেই তারা আয় উপার্জনের প্রধান উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন। দৈনিক একেক জনের রুজি হচ্ছে ৬০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। ১৫/২০ জনের একটি শিকারি দল গাদিঘাটে ঘর ভাড়া করে থাকছেন। তারা বলেন, অন্যান্য জেলা থেকেও বছরের এই সময়ে শ্রীনগরে অনেক কুঁচিয়া শিকারীর আগমন ঘটে। পানি নামার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত কুঁচিয়া শিকার করবেন তারা। তবে করোনার সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কুঁচিয়ার বাজার মন্দা। এতে করে কুঁচিয়ার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তারা। মাজু নামে এক পাইকার বলেন, তার বাড়ি নেত্রকোনা। শ্রীনগর সদর এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকছেন। সপ্তাহে ২ দিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে শিকারিদের কাছে গিয়ে কুঁচিয়া সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে এসব কুঁচিয়া বিক্রি করেন। বিভিন্ন দেশে কুঁচিয়ার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এই ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বর্ষা মৌসুমে প্রায় শতাধিক কুঁচিয়া শিকারি শ্রীনগরে আসে। আড়িয়াল বিলসহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন খালে-বিলে কুঁচিয়া শিকার করেন। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ও রাস্তার পাশে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন। এক সময় প্রতি কেজি কুঁচিয়া পাইকারের কাছে ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হলেও করোনার প্রভাবে কুঁচিয়া বাজারে ধ্বস নেমে আসে। বাধ্য হয়েই প্রতি কেজি কুঁচিয়া এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকা করে। এই ব্যবসায় পাইকাররা কুঁচিয়া শিকারিদেরকে অগ্রিম দাদন দিয়ে থাকেন।