ইব্রাহীম খলিল, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের ৪ নং পোল্ডারের বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী কালিন্দী নদীর উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারে ২ শতাধিক বন্য প্রজাতির গাছ কর্তন করার অভিযোগ উঠেছে সাব ঠিকাদার আব্দুর রহিম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। পাউবো সূত্রে প্রকাশ, সর্বশেষ ঘূণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে শ্যামনগর উপজেলার ৫ নং কৈখালী ইউনিয়নের ৪ নং পোল্ডারের শৈলখালী, পশ্চিম কৈখালী ও নৈকাটিসহ বেশ কয়েকটি অংশের কালিন্দী নদীর উপকূল রক্ষা বাঁধে আঘাত হানে। এতে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী কালিন্দী নদীর উপকূল রক্ষার বাঁধের অংশে ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরইপ্রেক্ষিতে সরকারীভাবে ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্ধ আসে ৫৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে মাটির কাজের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয় ২৬ লক্ষ টাকা। এবং জিও বস্তা প্লেসিং এর জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয় ৩০ লক্ষ টাকা। যা সর্বমোট ৫৬ লক্ষ টাকা। এ কাজের দায়ির্ত্বভার দেওয়া হয় (গ্যালাক্সি এসোসিয়েটস) গ্যালাক্সি হাউজ, পূর্ব মজমপুর, ওস্তাদভাই সড়ক কুষ্টিয়া-৭০০০। কাজের মেয়াদকাল দেওয়া হয় ০৯/০৫/২০২১ ইং হতে ০৯/০৮/২০২১ ইং অর্থাৎ ৯০ দিনের মধ্যে কাজ সম্পাদনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ মূল ঠিকাদার কাজ না করে সাব ঠিকাদার উপজেলার ৫ নং কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম গত জুলাই মাসের প্রথম দিকে কাজ শুরু করেন । কৈখালী গ্রামের আব্দুর রহিম, আবু সাইদ, খলিল, দীলিপ, খোকন, নূর ইসলাম, আঃ রব এবং শৈলখালী গ্রামের রেজাউল, আব্দুল আল মামুন, সহ শতাধিক ব্যক্তিরা জানান গেলো জুলাই মাস হতে বাঁধ সংস্কারে সাব ঠিকাদার আব্দুর রহিম (৫ নং ইউপি চেয়ারম্যান) মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভাঙন কবলিত অংশে শ্রমিক দিয়ে কাজ সম্পন্ন না করে শুধুুমাত্র অতি লাভের আশায় বশীভূত হয়ে ভেঁকু দিয়ে বাঁধের উপরিভাগের মাটির কাজ সম্পন্ন করেন। ভেঁকু দিয়ে কাজ করার সময় নিয়ম বর্হিভূত ভাবে বাঁধের অভ্যন্তরে থাকা বন্য প্রজাতির গেওয়া ও কেওড়া গাছ কর্তন করেন। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, শ্রমিক দিয়ে কাজ করলে কোভিড-১৯ এর কারণে একদিকে যেমন অস্বচ্ছল পরিবার আর্থিক সংকট থেকে পরিত্রান পেত অন্যদিকে বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গেওয়া ও কেওড়া গাছ নির্বচারে কর্তনের হাত থেকে রক্ষা পেতো। তারা আরো জানান, কর্তনকৃত গাছ বড় হতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে। এই অভাবনীয় ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। গাছ আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু, বিভিন্ন দূর্যোগ ও প্রতিকূল অবস্থার হাত থেকে প্রতিনিয়ত বাঁধ সুরক্ষা দিয়ে আসছে। এসব বন্য প্রজাতির পরিবেশ বান্ধব গাছ নির্বিচারে কর্তন করায় স্থানীয়রা অনেকেই চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ কাজের শুরু থেকে মূল ঠিকাদারের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। এ কাজের তদারকির ও দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন শ্যামনগর উপজেলার সেকশন অফিসার মাসুদ রানা ও কার্য সহকারী নাজিম-উদ-দৌলা রছি। এ বিষয়ে সাব ঠিকাদার ৫ নং কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমকে মুঠোফোনে একাধিকবার আলাপের চেষ্টাকালে ৬.১৩ মিনিটে কল দিলে কলটি গ্রহণ না করে কেটে দেন। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা ডিভিশন-০১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাকির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে আলাপের চেষ্টাকালে ফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা ডিভিশন-০১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে গাছ কর্তনের বিষয়ে অবগত আছেন কিনা এবং গাছ কর্তনে তার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি কোন গাছ কর্তনের অনুমতি দেয়নি। শুনেছি অতি উৎসাহী হয়ে কিছু লোক গাছ কেটেছে।”
আলোকিত প্রতিদিন/ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১/ আর এম