বনকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা এখনো অধরা

0
375
আবু সায়েম, কক্সবাজার :
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন রামুর জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে ভূমিদস্যুদের হামলার ঘটনায়  এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারি নি পুলিশ। ঘটনার ৭ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে না পারায় বনকর্মকর্তাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। বনবিভাগ সূত্রে জানায়,গত ৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জের জোয়ারিয়ানালা বনবিটে বনভূমিতে ভিআইপি টিলা এলাকায় অবৈধ ভাবে ফার্ম নির্মানাধীন বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।উচ্ছেদ অভিযান শেষে ফেরার পথে দফায় দফায় বনকর্মীদের উপর হামলা চালায় ভূমিদস্যু ফয়সাল (৩২), সহযোগী ওবায়দুল ( ৩৪), কালাম(৩৫) রুবেল মহিউদ্দিন সহ অন্ততঃ ৪০ থেকে ৪৫ জন চিহ্নিত ভূমিদস্যু।এসব আসামিদের বিরুদ্ধে বন আইনে বিভিন্ন মামলা এখনো চলমান। গত ৪ সেপ্টেম্বর বনকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় বিট কর্মকর্তা  এলমুন বাহার বাদী হয়ে ভূমিদস্যু ফয়সালকে প্রধান আসামী করে রামু থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ভূমিদস্যু ফয়সাল ছাড়াও মূল আসামী রয়েছে ৯জন।অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে  ৪০ থেকে ৪৫ জন।
এ ঘটনায় বনবিভাগের ২জন রেঞ্জ কর্মকর্তা সহ ৪জন বনকর্মী গুরুতর আহত হয়। এখনো ২ জন রেঞ্জ কর্মকর্তা  কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এমন ন্যাক্কারজনক বনকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় কোন আসামি গ্রেফতার না হওয়া বনবিভাগের কর্মকর্তাদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বনকর্মকর্তা জানান,সরকারি সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে বনকর্মীরা মারাত্নক আহত হওয়ার পর ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট আসামী ও জড়িতরা এখনো আইনের আওতায় না আসা খুবই দুঃখজনক। দখলবাজদের  বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভূমিদস্যুরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বনকর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটবে রীতিমতো। ভূমিদস্যুরা বীরদর্পে  তাদের অবৈধ কর্মকান্ড চালাবে। তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট আসামী ও জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে বনকর্মীরা যে উৎসাহ উদ্দীপনা এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করে তা হ্রাস পাবে। এভাবে চলতে থাকলে, ভূমিদস্যুরা দিনের পর দিন পার পেয়ে গেলে বনকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবে না। বনকর্মীদের কাজের গতি তরান্বিত করতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিদস্যুদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে। সচেতন মহল মনে করেন,সংরক্ষিত বনাঞ্চল জবরদখল মুক্ত করতে গিয়ে বনকর্মীদের উপর হামলার ঘটনা অত্যন্ত  ঘৃণিত এবং খুবই দুঃখজনক। সরকারী কর্মকর্তাদের উপর হামলা এবং তাদের জীবনের উপর আঘাত কোন মতে মেনে নেওয়া যায় না। রাত দিন পরিশ্রম করে যারা সরকারি সম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত থাকেন তাদের উপর এমন বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে বনকর্মীরা নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে কাজের গতি তরান্বিত করবেন। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন,  অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জের ১০ জন বনকর্মকর্তা ও কর্মচারী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটু সহ ২ জন বনকর্মী এখনো কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ঘটনা ১ সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরও কোন ভূমিদস্যু এখনো গ্রেফতার না হওয়া খুবই দুঃখজনক। এব্যাপারে জড়িতদের শীঘ্রই আইনের আওতায় আনতে  সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা তহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন রাতে বিট কর্মকর্তা এলমুন বাহার বাদী হয়ে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ফয়সাল সহ আরো ৯জনকে মূল আসামী করে রামু থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার আজ ৭ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও রামু থানার পুলিশ সংশ্লিষ্ট ও জড়িত কোন আসামি কে এখনো গ্রেফতার করতে পারি নি। তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সংশ্লিষ্ট আসামীরা আইনের আওতায় না আসলে ভূমিদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল জবরদখলের উৎসবে মেতে উঠবে।আগের চেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়ে বনকর্মীদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালাবে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বনকর্মীদের প্রাণহানি ও ঘটতে পারে। আমি রামুর থানার অফিসার ইনচার্জের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো তিনি যাতে বনকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ও জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন। যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করলে দখলবাজ ও চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে  পারবে না,আর  বনকর্মীদের হামলা চালানোর সাহসও পাবে না। এ ব্যাপারে রামু থানার ওসি ( তদন্ত)  অরুপ কুমার চৌধুরী  বলেন,ঘটনার পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছে। রাত দিন অভিযানের মাধ্যমে ভূমিদস্যুদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শীঘ্রই আসামিদের গ্রেফতারপূূ্র্বক আইনের আওতায় আনা হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১/ আর এম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here