সাতক্ষীরায় বাঁধ সংস্কারে বন কর্মকর্তার অনুমতি না নিয়েই বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গাছ কর্তন

0
378

ইব্রাহিম খলিল, সাতক্ষীরা 

সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নে বাঁধ সংস্কারে বন কর্মকর্তার অনুমতি না নিয়েই বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গাছ কর্তনের অভিযোগ উঠেছে পাউবো ও সাব ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, উপজেলার ৫ নং কৈখালী ইউনিয়নের ৪ নং পোল্ডারের বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী কালিন্দী নদীর উপকূল রক্ষা বাঁধ সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে সরকারীভাবে ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্ধ আসে ৫৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁেধ মাটির কাজের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয় ২৬ লক্ষ টাকা এবং জিও বস্তা প্লেসিং এর কাজের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয় ৩০ লক্ষ টাকা। যা সর্বমোট ৫৬ লক্ষ টাকা। পাউবো সূত্রে প্রকাশ, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে শ্যামনগর উপজেলার ৫ নং কৈখালী ইউনিয়নের ৪ নং পোল্ডারের শৈলখালী মন্দির হতে পশ্চিম কৈখালী মুনসুর দফাদারের বাড়ির অভিমুখ পর্যন্ত ২ হাজার ৪০ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের কাজের দায়িত্বভার দেওয়া হয় (গ্যালাক্সি এসোসিয়েটস) গ্যালাক্সি হাউজ, পূর্ব মজমপুর, ওস্তাদভাই সড়ক কুষ্টিয়া-৭০০০। কাজের মেয়াদকাল দেওয়া হয় ০৯/০৫/২০২১ ইং হতে ০৯/০৮/২০২১ ইং অর্থাৎ ৯০ দিনের মধ্যে কাজ সম্পাদনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ কাজের শুরু থেকে মূল ঠিকাদারের উপস্থিতি তাদের চোখে পড়েনি। মূল ঠিকাদার কাজ না করে সাব ঠিকাদার উপজেলার ৫ নং কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম গত জুলাই মাসের প্রথম দিকে কাজ শুরু করেন। এ কাজের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্যামনগর উপজেলা পাউবো সেকশন অফিসার মাসুদ রানা। এ ছাড়া তার সহযোগী হিসাবে দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা পাউবো কার্য সহকারী নাজিম-উদ-দৌলা রছি। পশ্চিম কৈখালী গ্রামের আব্দুর রহিম, আবু সাইদ, খলিল, দীলিপ, খোকন, নূর ইসলাম, আঃ রব এবং শৈলখালী গ্রামের রেজাউল, আব্দুল আল মামুন, সহ শতাধিক ব্যক্তিরা জানান, গেলো জুলাই মাস হতে বাঁধ সংস্কারে সাব ঠিকাদার আব্দুর রহিম (৫ নং ইউপি চেয়ারম্যান) মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভাঙন কবলিত অংশে শ্রমিক দিয়ে কাজ সম্পন্ন না করে শুধুুমাত্র অতি লাভের আশায় বশীভূত হয়ে কম খরচে ভেঁকু দিয়ে বাঁধের উপরিভাগের মাটির কাজ শুরু করেন। ভেঁকু দিয়ে কাজ করার সময় নিয়ম বর্হিভূতভাবে বন বিভাগের আওতায় উপজেলা সামাজিক বনায়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে বাঁধের অভ্যন্তরে চরের উপরে সারিবাঁধা বন্য প্রজাতির গেওয়া ও কেওড়া গাছ নির্বিচারে কর্তন করেন। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, শ্রমিক দিয়ে কাজ করলে কোভিড-১৯ এর কারণে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত অস্বচ্ছল পরিবার আর্থিক সংকট থেকে পরিত্রাণ পেত অন্যদিকে বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গেওয়া ও কেওড়া গাছ নির্বিচারে কর্তনের হাত থেকে রক্ষা পেতো। তারা আরো জানান, কর্তনকৃত প্রতিটি গাছ বড় হতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে। এই অভাবনীয় ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। গাছ আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু, বিভিন্ন দূর্যোগ ও প্রতিকূল অবস্থার হাত থেকে প্রতিনিয়ত এসব বন্য প্রজাতির গাছ বাঁধ সুরক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। বন্য প্রজাতির পরিবেশ বান্ধব গাছ নির্বিচারে কর্তন করায় স্থানীয়রা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে সাব ঠিকাদার ৫ নং কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমকে মুঠোফোনে একাধিকবার আলাপের চেষ্টাকালে শনিবার বিকাল ৫.০৬ মিনিটে কল দিলে আলাপ কলটি গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা পাউবো সেকশন অফিসার মাসুদ রানার সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গাছ কর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ নিয়ে সাব ঠিকাদার ৫ নং কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম ভেঁকু দিয়ে কাজ করার সময় বন্য প্রজাতির গেওয়া ও কেওড়া গাছ কেটেছে। বন বিভাগের আওতায় শ্যামনগর উপজেলা সামাজিক বনায়ন কেন্দ্র কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার অনুমতি নিয়ে গাছ কেটেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি ছিলনা। কাজের মেনুয়্যালে আছে, কাজের ক্ষেত্রে গাছ কর্তন করা যাবে। আমি সাব ঠিকাদারকে নিরাপদ দূরত্ব রেখে গাছ কর্তন করতে বলেছি।”এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা পাউবো ডিভিশন-০১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাকির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে গাছ কর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ বন্য প্রজাতির গাছ কাটার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। শ্যামনগর উপজেলা পাউবো সেকশন অফিসার মাসুদ রানা সাব ঠিকাদারকে গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছিল এ ব্যপারে আপনি কিছুই জানেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেকশন অফিসার মাসুদ রানা গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে কিনা এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করেনি।” এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা ডিভিশন-০১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে গাছ কর্তনের বিষয়ে অবগত আছেন কিনা এবং গাছ কর্তনে তার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি কোন গাছ কর্তনের অনুমতি দেয়নি। শুনেছি অতি উৎসাহী হয়ে কিছু লোক গাছ কেটেছে। তিনি আরো বলেন, গাছ কর্তনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।” সেকশন অফিসার মাসুদ রানা গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে বন বিভাগ শ্যামনগর উপজেলা সামাজিক বনায়ন কেন্দ্র কর্মকর্তা শহিদুর রহমান এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গাছ কর্তনের বিষয়ে কোন অনুমতি দিয়েছেন কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাছ কর্তনের বিষয়ে আমি কিছুই জানিন এবং আমার কাছ থেকে গাছ কাটার ব্যাপারে কেউ কোন অনুমতি নেয়নি। এ ঘটনায় বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন কমিশন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিদার রহমান বলেন, “বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছরের ন্যায় বৃক্ষরোপন অভিযানে কোটি কোটি টাকা বরাদ্ধ দেন। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার অনুমতি ছাড়া নির্বিচারে বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গাছ পাউবো’র সেকশন অফিসার এর অনুমতিতে সাব ঠিকাদার গাছ কাটার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, গাছ কাটার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবীর পাশাপাশি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

আলোকিত প্রতিদিন/ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১/ এইচ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here