বরিশাল ব্যুরো চিফঃ
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মধ্য দিয়ে আজ রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর আবারও সচল হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এখনও প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমন বেড়ে গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করলে কভিডের সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা কম। আশা করছি, সংক্রমণ বাড়বেও না। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। তারপরও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধ করে দেয়া হবে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। বছরের শুরুতে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা আয়োজনের কথা থাকলেও এখনও তা সম্ভব হয়নি। এছাড়া অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন করলেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। বিশেষ করে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাস! প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও শিক্ষা খাতের বিভিন্ন সংকট বিবেচনা করে আজ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, দেশে কভিডের সংক্রমণ দ্রুত কমে যাচ্ছে। জুলাইর তুলনায় সংক্রমণ ৭০ শতাংশ কমেছে। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। প্রথম দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে এ ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। পরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে আলাদাভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনাসহ বেশকিছু সতর্কতা ও সচেতনতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর খুলে দেয়ার ঘোষণায় সারাদেশেই সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গত কয়েক দিন থেকে জোর প্রস্তুতি নেয়া হয়। শিক্ষক-কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন ও সমন্বয় সভা করে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা কর্মসূচি নেয়া হয়। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেটে স্যানিটাইজ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কিউ মেনে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ, মাস্ক পরা নিশ্চিতকরণ, থার্মোমিটারে শরীরের তাপমাত্রা মাপাসহ বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি ‘জেড’ শেপে শ্রেণিকক্ষে আসন বিন্যাস প্রভৃতি। এদিকে দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় নানা ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ১২ ই সেপ্টেম্বর বরিশালে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস করার কার্যক্রম শুরু করেছে। বরিশালের বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা গেছে শহরের ও গ্রামের বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বরণ করতে নেন নানা উদ্যোগ। বরিশালের স্বনামধন্য স্কুল আলহাজ্ব আবদুল মজিদ খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের তিন ফুট দূরত্বে লাইনে দাঁড় করিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করে ক্লাসের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। তবে বিদ্যালয় প্রবেশ মুখে রাখা হয় হাত ধোয়া সহ অন্যান্য স্বাস্হ সুরক্ষা সরঞ্জামাদি।প্রত্যেকের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয় এবং এর পাশাপাশি আইসোলেশন রুম সুবিধাসহ স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে বরিশালের সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন পর স্কুলে ক্লাসের জন্য আসতে পেরে সবাই আনন্দিত ও উচ্ছাসিত। বিদ্যালয় গুলো ফিরে পেয়েছে সেই পূর্বের চিরচেনা রূপ সৌন্দর্য। এমন আনন্দ মুখর পরিবেশ তৈরি করার জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক মহল।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১২সেপ্টেম্বর ২০২১/ এইচ