প্রতিনিধি, গজারিয়া:
আধুনিক নগর জীবনে পার্ক ও মাঠকে বলা হয় ‘নগরের ফুসফুসথ। এ হিসেবে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ফুসফুস যে খুবই দুর্বল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত দুই দশকে উপজেলার দুই-তৃতীয়াংশ মাঠ সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে, অনেক মাঠের আংশিক বেদখল হয়ে গেছে। কেউ ওড়াচ্ছে কাগজের ঘুড়ি, কারো হাতে ব্যাট, কারো পায়ে বল আবার কেউবা লাফাচ্ছে অকারণে। বিকেলটা কীভাবে ফুরিয়ে যাচ্ছে, সেদিকে কারো যেন হুঁশ নেই। দুই দশক আগে উপজেলার বিভিন্ন খেলার মাঠগুলোর চিত্র এমন থাকলেও বর্তমানে প্রজন্মের শৈশব থেকে তা লাপাত্তা হয়েছে। কারণ স্কুল, পাড়া বা মহল্লায় দুরন্তপনায় মেতে ওঠার মতো কোনো জায়গা নেই। পিঠে ভারী ব্যাগ। চোখে বড় হওয়ার স্বপ্ন। শুধু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার নয়, স্বপ্ন এখন সাকিব আল হাসান বা শচীন টেন্ডুলকার হওয়ারও। কিন্তু কীভাবে পূরণ হবে সেই স্বপ্ন? চিত্তবিনোদনের জন্য খেলার মাঠ সংকুচিত হয়ে পড়ায় শিশু-কিশোররা বন্দি হয়ে পড়ছে চার দেয়ালের মধ্যে, আটকে যাচ্ছে টিভি-কম্পিউটার ও ভিডিও গেমসে। অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ কমে যাওয়ায় শিশু ও কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ থেকে মুক্তি পেতে চায় নতুন প্রজন্মের একজন তরুণ মুখ, গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র আলোচনা নিয়ে হাজির হয়েছেন, মোঃ মাজহারুল, মোঃ নাজমুল, মোঃ সুমন, মোঃ রিয়ন, মোঃ মেহেদি, মোঃ অন্তর, মোঃ অনিক, মোঃ সাহিন, শুভ, ফয়ছাল, রিদয়, রমজান, কাজি ছিজান, আবদুল্লাহ। তাদের মতে, একদিকে খেলার মাঠ নেই, সময়ও নেই। অন্যদিকে খেলার ইচ্ছাও নেই। মাঠের খেলার চেয়ে তরুণ প্রজন্ম এখন স্মার্ট ফোনের খেলায় বেশি আসক্ত। এর ফলে আমরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি। আমাদের আশপাশের প্রকৃতিকে চিনছি না, বিশ্বকে চিনছি না। প্রকৃতির বাতাস আমাদের গায়ে লাগছে না। এর কারণে মনের বিকাশ হচ্ছে না, আবার শারীরিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একাকিত্বের কারণে অনেকে অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অধিকাংশ অভিভাবকের ধারণা কম থাকায় সন্তানদের মনিটরিংও করতে পারছেন না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের উচিত পলিসি হাতে নেওয়া। মাঠ না থাকলেও শিশুদের থেকে শুরু করে তরুণদের খেলাধুলা কিংবা বিনোদনের এই অভাব পূরণ করছে প্রযুক্তি। ভার্চুয়াল জগত্ আর বাস্তব জগতের মধ্যকার পার্থক্য কমে আসছে প্রযুক্তির কল্যাণে। আর তাই মাঠের আধিক্য অথবা অভাব কিংবা মাঠে খেলতে পারা বা না-পারার সব আনন্দ, বিনোদন আর কষ্টকে ছাপিয়ে শহুরে শিশু-কিশোর আর তরুণ প্রজন্মের কাছে বিনোদনের সবচেয়ে সফল মাধ্যম ভার্চুয়াল গেমস। কম্পিউটার কিংবা মুঠোফোনে থাকা গেমসগুলোই আস্তে আস্তে হয়ে উঠছে তাদের সবথেকে ভালো বন্ধুু। এমন এক অভ্যাস বর্তমান সময়ের শিশু-কিশোরদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়। ফেসবুক মেসেঞ্জারে বন্ধুুদের সাথে খোশগল্পে মেতে থাকার পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল বা বাস্কেটবল খেলার ফিচারেও তারা সমানে অংশগ্রহণ করছে। তাছাড়া সবার স্মার্টফোনে লুডু কিং, লুডু স্টার, ক্যারামের মতো অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন তো আছেই। নির্বাকচিত্তে অনলাইনে এই খেলাগুলোতেই মানুষের অবসর সময়টা কেটে যায়। সবাই খেলাগুলো খেলতে পারে ঠিকই, কিন্তু বন্ধুরা একসাথে একইস্থানে উপস্থিত থেকে খেলার আনন্দটুকু পাওয়া কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। এই প্রযুক্তিগুলো যেন বর্তমান প্রজন্মকে হাত-পা বেঁধে স্মার্টফোন আর কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে রেখেছে। খোলামাঠের সুন্দর বাতাস আর শারীরিক ব্যায়ামটুকু কখনো অনলাইনের খেলার মধ্যে পাওয়া সম্ভব নয়। পরিশেষে এই প্রজন্মের সকল শিশু-কিশোর, এমনকি তাদের অভিভাবকদেরও প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাই।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১/ দ ম দ