আড়িয়াল বিলের শাপলা কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ  

0
275
 প্রতিনিধি, শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) :
শরতের সকালে সূর্য ওঠার আগেই বির্স্তীণ আড়িয়াল বিল থেকে কুড়িয়ে আনা হচ্ছে অসংখ্য শাপলা। ছোট ছোট কোসা নৌকায় করে এসব শাপল কুড়ানো হচ্ছে বিক্রির জন্য। জীবন ও জীবিকার তাগিদে জীবনযুদ্ধে বিকল্প উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বর্ষার এই মৌসুমে প্রায় কয়েক শতাধিক কর্মজীবি মানুষ শাপলা কুড়ানোয় শ্রম দিয়ে থাকেন। বিনা পূঁজিতে দিনের কয়েক ঘন্টা শাপলা কুড়িয়ে পরিবারগুলোর আয়ের উৎস্য হয়ে দাড়িয়েছে। দৈনিক একেকজন প্রায় শাপলা বিক্রি করে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। এমনটাই জানা গেছে শ্রীনগর উপজেলার বিখ্যাত আড়িয়াল বিল এলাকা ঘুরে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সামান্য কুয়াশাচ্ছন্ন শরতের সকালে আড়িয়াল বিলে সাঁদা পাপড়ির বিছানা মেলে অসংখ্য শাপলার সমারোহ। দেখে মনে হবে বিলের পানিতে এসব শাপলা যেন সাঁতার কাটছে। লক্ষ্য করা গেছে, আড়িয়ালের বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে অনেকেই নৌকায় করে শাপলা কুড়াচ্ছেন। জানা গেছে, এসব শাপলা কুড়িয়ে স্থানীয়ভাবে শাপলার পাইকারের কাছে বিক্রি করা হবে। দুপুর ঘনিয়ে আসলে নৌকা ভর্তি শাপলা আনা হয় লোকালয়ের নিদিষ্ট ঘাটে ও রাস্তার পাশে। বিকালের দিকে লক্ষ্য করা গেছে, পাইকাররা এসে নৌকা থেকে শাপলার আটি গুনে গুনে পিকআপ ভ্যান কিংবা ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে। এ সময় গাদিঘাট এলাকার সুমন খান, মো. মোশারফ, নুর হোসেনসহ অনেকে বলেন, শাপলা কুড়িয়ে টাকা রুজির পাশাপাশি বেকার সময় পার করছেন তারা। গাদিঘাট এলাকার প্রায় ৫০/৬০ জন আড়িয়াল বিলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শাপলা কুড়ান। গত লকডাউনের সময়েও বিলের শাপলা কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা জানান, সৃষ্টি কর্তা নিয়ামত হিসেবে আড়িয়াল বিলে শাপলা দিয়েছেন। বিলের এসব শাপলায় বহু নিম্ন আয়ের কর্মহীন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তণ হয়েছে। হাঁসাড়া ও বাড়ৈখালী এলাকার আলমপুরের আমির হোসেন, শাজাহান, দেলোয়ার হোসেন, বলাই রামসহ অনেকেই জানান, বছরের এই সময়ে এখানে অত্র এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের সংসার চলছে শাপলা বিক্রি করে। আড়িয়াল বিলের পানি নামার আগমূহুর্ত অনেকেই শাপলা কুড়ানোর কাজ করেন । উপজেলার সদরে ডাকবাংলা মার্কেটের সামনে শাপলা বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রায় দুই যুগ ধরে শ্রীনগরের  হরপাড়ায় থাকছি। করোনাকালীন দুই বছর ধরে বর্ষার মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন বিল থেকে শাপলা কুড়িয়ে ডাকবাংলো মার্কেটের সামনে বিক্রি করছি। শাপলার মৌসুম শেষে কৃষি কাজে শ্রম বিক্রি করবেন তিনি। শাপলার পাইকার সেলিম শেখ বলেন, সিরাজদিখান থেকে এখানে পিকআপ ভ্যান নিয়ে গাদিঘাটে এসেছেন শাপলা সংগ্রহ করতে। প্রায় ১ হাজার আটি শাপলা সংগ্রহ করছেন তিনি। আলামপুর এলাকার জমাইতুল্লাহ ও চাঁন মিয়া জানায়, তারা প্রতিদিন বিকালে কুড়ানো শাপলা নিতে আসেন তারা। এসব শাপলা নিয়ে রাজধানীর কাওরান, সাভার, যাত্রাবাড়িসহ বিভিন্ন সবজির পাইকারী বাজারে বিক্রি করেন তারা। শ্যামসিদ্ধি এলাকার ওহাব মিয়া বলেন, শাপলা বিক্রির আয়ে আড়িয়াল বিল এলাকার কয়েকশত পরিবারের সংসার চলে। তাদের কাছ থেকে এসব শাপলা কিনে উভয় পক্ষই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি। নিচ্ছি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে ভোর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বির্স্তীণ আড়িয়াল বিলে শাপলা কুড়ানো হয়। প্রায় ৬০/৭০টি শাপলা দিয়ে ১টি আটি বাঁধা হয়। প্রতি আটি শাপলা পাইকাররা ক্রয় করেন ১২-১৪ টাকায়। দৈনিক একজন কমপক্ষে ৫০ আটি শাপলা কুড়াতে পারেন। আড়িয়াল বিল এলাকার শ্রীনগর অংশে বিভিন্ন জায়গা প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি পিকআপ ভ্যান ভরে এসব শাপলা বিক্রির জন্য যাচ্ছে। সু-স্বাদু সবজি হিসেবে শাপলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় আগামী কার্তিক-পৌষ মাস পর্যন্ত আড়িয়াল বিলে শাপলা কুড়াবেন তারা।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৯ সেপ্টেম্বর,২০২১/ এইচ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here