প্রতিনিধি, এম. জসিম উদ্দিন
জনবল ও যানবাহন সংকটে দোহাজারী পৌরসভার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের।স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপির সহযোগিতায় চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ইউনিয়নের নয়টি ও পার্শ্ববর্তী সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের দুটি ওয়ার্ড নিয়ে ২০১৭ সালে গঠিত হয় দোহাজারী পৌরসভা। ওই বছর ১১ মে দোহাজারী ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীত করে সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়। ‘গ’ শ্রেণির এ পৌরসভা গঠনের চার বছর পেরিয়ে গেলেও কাঠামোগত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। জনবল সংকটে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্যক্রম। আর কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। এ পৌরসভায় নেই রোড রোলার, কংক্রিট মিক্সচার মেশিন, লেভেলিং যন্ত্র, টাইপরাইটার মেশিন, ফটোকপি মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। পৌরসভা আইন অনুযায়ী ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়াও সচিব, প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষকসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৭৪টি পদে জনবল নিয়োগের বিধান রয়েছে। কিন্তু দোহাজারী পৌরসভায় চার বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক ও সহকারী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষক, লাইসেন্স পরিদর্শক ও কর আদায়কারী দিয়ে চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। গত বছর ৯ আগস্ট চন্দনাইশ পৌরসভার সচিব মোহাম্মদ মহসিনকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে দোহাজারী পৌরসভার সচিবের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। হিসাবরক্ষক মজিবুর রহমান গত ৮ আগস্ট বদলি হন। সেই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন কর আদায়কারী মিজানুর রহমান, সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী দোহাজারী পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগে ২৬টি পদের বিপরীতে শূন্য পড়ে আছে ২৪টি। সাধারণ শাখায় প্রধান সহকারী, স্টোরকিপারসহ ১০টি পদ থাকলেও পৌরসভা ঘোষণার পর থেকে পদগুলোতে পদায়ন হয়নি। হিসাব শাখায় ৩টি পদের বিপরীতে শুধু হিসাবরক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অ্যাসেসমেন্ট শাখায় ৩টি পদের বিপরীতে কোনো লোক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কর আদায় ও লাইসেন্স শাখায় অনুমোদিত সাতটি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২ জন। পৌর বাজার শাখার ২টি পদও শূন্য। কয়েকজন সুইপারকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলেও কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টর ও সুপারভাইজার পদ শূন্য থাকায় গতি পাচ্ছে না পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা শাখায় একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ১৩টি পদ এখন পর্যন্ত শূন্য। পৌরসভার নাগরিকদের ১০ থেকে ১২ ধরনের সেবা পাওয়ার কথা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যাত্রী ছাউনি, সড়কবাতি, যানবাহনের পার্কিং স্থান ও বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ, শিক্ষা, খেলাধুলা, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ। দোহাজারী কাগজে-কলমে পৌরসভা করা হলেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার পরিবর্তে এলাকাবাসীকে হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার। দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে পৌরকর। অদ্যাবধি অনুমোদন করা হয়নি সহায়ক কমিটি। চার বছর অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি ওয়ার্ড বিভাজনের কাজ সম্পন্ন করা হয়নি। এ কারণে কবে নির্বাচন হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। ২০১৯ সালের ২৮ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গার্বেজ ট্রাক বরাদ্দ পেলেও চালক নিয়োগ না হওয়ায় সেটিও কাজে আসছে না। সাবেক প্রশাসক আ ন ম বদরুদ্দোজা প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সব ওয়ার্ডে সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। দিয়াকুল, জামিজুরী, ঈদ পুকুরিয়া ও চাগাচর এলাকায় লাইন টানিয়ে শেড স্থাপন করলেও এখনো লাগানো হয়নি কোনো বাতি। পৌরসভায় নেই বাসস্ট্যান্ড, যাত্রী ছাউনি ও যানবাহনের পার্কিং স্থান। স্থাপন করা হয়নি গণশৌচাগার ও কসাইখানা। এ ছাড়া খেলাধুলা এবং চিত্তবিনোদনেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। জনবল সংকট বিষয়ে দোহাজারী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক ও চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম বলেন, জনবল সংকট থাকলেও উন্নয়নকাজ থেমে নেই। চলতি অর্থবছরে ২৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। জনবল নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইতিপূর্বে অবহিত করা হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২১সেপ্টেম্বর,২০২১/ এইচ