ফুলবাড়ীতে একই বিদ্যালয়ের ৮৫ শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ 

0
328
প্রতিনিধি, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম):
বাংলাদেশের উত্তর উত্তরাঞ্চলে একটি জেলা কুড়িগ্রাম। এই কুড়িগ্রামের ছোট একটা উপজেলা ফুলবাড়ী। আর এই ফুলবাড়ীতেই এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৪৫ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন। সারা বিশ্বের ন্যায় আমাদের বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯)এর কবলে পড়ে দীর্ঘ ১৭ মাস স্কুল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঐ প্রতিষ্ঠানটির ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। এর ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।
সচেতন মহলের দাবি- দারিদ্রতা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ উপজেলায় বাল্যবিবাহের হার চরমে উঠেছে। জরিপ করে দেখা গেছে বাল্যবিবাহ এবং শিশুশ্রমে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশী। বুধবার দুপুরে উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান খন্দকার মোবাইল ফোনে জানান, তার বিদ্যালয়ের মোট ৩৪৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৫ জনের বাল্যবিবাহ হয়েছে।তিনি বাল্যবিবাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।তিনি আরো জানান,এই বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ০৩, সপ্তম শ্রেণির ১০, অষ্টম শ্রেণির ১৮, নবম শ্রেণির ২৭, দশম শ্রেণির ১৪ ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার১৩ জন বাল্য বিবাহের ফাঁদে পরেছে।
বেশি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আমরা অনেকদিন পর বিদ্যায় আসলাম অনেক খুশিতে কিন্তু, আমাদের ক্লাশের অনেক বান্ধবীই বিয়ে হয়েছে মনটা অনেক খারাপ হলো।
একই প্রতিষ্ঠানের বাল্যবিবাহের শিকার আরেক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, মানুষের সাইকেল মেরামত করে যা পাই তাই দিয়ে কোনরকমে সংসার চলে। দেশে করোনা আসার পর আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। কোন সহযোগিতা পাইনি। দেখতে দেখতে মেয়েটাও বড় হয়ে গেল। দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। তাই একটা ভালো সম্বন্ধ পাওয়ায় আর দেরি করিনি। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি।’এ ব্যাপারে বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান খন্দকার জানান, বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় আমরা প্রতিটি শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি। যেসব শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে আমরা তাদের বাড়িও যাচ্ছি। ঐসব শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুলে আসে সে ব্যাপারে তাদের অভিভাবকদের সচেতন করছি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। এই সুযোগে পরিবার তাদের বাল্যবিবাহ দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমরা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য কাজ করছি। করোনার আগেই গত দেড় বছরেই স্কুলের ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। কিন্তু করোনাকালে খবর না পাওয়ায় গোপনে স্কুলের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ দেয় তাদের পরিবার। বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খয়বর আলী জানান, করোনার কারণে আমার ইউনিয়নে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। আমরা এজন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রশাসনের সহযোগিতায় পাড়ায়-মহল্লায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে মতবিনিময়সহ সচেতনমূলক প্রচার চালানো হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই জানান, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্যবিবাহের তথ্যটি পেয়েছি। এ উপজেলায় মোট ৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস বলেন, ‘বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহের বিষয়টি শুনেছি। বাল্যবিবাহ কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আমরা কাজ শুরু করেছি।’ প্রতিটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিকে নিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হচ্ছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here