আহসানুল ইসলাম আমিন
মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বরফ তৈরির কারখানায় মাছ কিংবা পঁচনশীল পন্য সংরক্ষনের বরফে মানুষ তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন। ক্লান্ত শরীরে প্রশান্তি জোগাতে রাস্তার পাশে থাকা দোকানে হিম শীতল শরবত কিংবা আঁখের রসে তৃষ্ণা মেটান বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তবে এই পানীয় কতটা স্বাস্থ্য সম্নত সেই খবর রাখা সম্ভব হয়না অনেকেরই। প্রখর রোদে ক্লান্ত শরীর জুড়াতে ঠান্ডা শরবতের বিকল্প নেই। পথচারিরা শরীরের ক্লান্তি আর তৃষ্ণা মেটাতে খাচ্ছেন আঁখের রস কিংবা বিভিন্ন ফলের শরবত। কিন্তু এসব শরবত, লাচ্ছি কিংবা আঁখের রসে ব্যবহার করা বরফ কতটা স্বাস্থ্যকর। শুধু তাই নয় বিয়ে, জন্মদিন, ফাষ্টফুডের দোকানে তৈরি লাচ্ছিতেও ব্যবহার হচ্ছে মাছের বরফ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের সুষ্ট তদারকির অভাবে দিনের পর দিন নোংরা পানিতে তৈরি বরফের পানি পান করছেন। এতে মানব শরীরে নানা ধরনের রোগ ব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে আঁখের রস কিংবা শরবত বিক্রির দোকানগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে মাছের বরফ। নোংরা পানি আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি এসব বরফ মানুষ না জেনেই পান করছেন। আঁখের রস বিক্রেতারা বড় বড় বরফ খন্ডের উপরে মেশিনের মাধ্যমে আঁখের রসগুলো বের করে ফেলছেন। তাতে আঁখের রস আর বরফের পানি একাকার হয়ে একটি পাত্রে চলে যাচ্ছে। সেখান থেকে গ্লাসে ভরে মানুষকে খেতে দেয়া হচ্ছে আঁখের রস। লেবু কিংবা ফলের জুস বিক্রেতারাও বরফের টুকরো ছেড়ে দিয়ে দিনভর বিক্রি করছেন শরবত। তাছাড়া ছোট বড় বেশ কয়েকটি ফাষ্ট ফুডের দোকানেও লাচ্ছি তৈরিতে কারখানায় তৈরি মাছের বরফ ব্যবহার করছেন। আঁখের রস কিংবা শরবত বিক্রেতাদের দেয়া তথ্য মতে বরফের উৎস জানতে শহরের হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকার বরফ কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে। মাছ বিক্রেতা, শরবত বিক্রেতাসহ নানা প্রয়োজনী মানুষ বরফ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি পিস বরফ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা পিস। তবে সেখানে মেশিন দিয়ে ভাঙিয়ে গুঁড়ো করলে দিতে হয় অতিরিক্ত আরো ১০ টাকা। সেখানে একের পর এক বরফ রাখা হচ্ছে মেঝেতে। শ্রমিকরা জুতো পড়েই কাজ করছেন বরফের উপর। বাইরের ধুলোবালি আর ক্রেতা এবং শ্রমিকের জুতোর পানি মিশে একাকার। কারখানা মালিকদের দাবি বরফগুলো তৈরি হচ্ছে টিউবওয়েলের পানিতে। একাধিক বরফ তৈরির কারখানার মালিক জানান, মরদেহ, মাছ কিংবা পঁচনশীল পন্য সংরক্ষণের জন্য তৈরি এসব বরফ বিয়ের অনুষ্ঠানে, আঁখের শরবত বিক্রেতা কিংবা জুসবারে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে বেশিরভাগ বরফ মাছ বিক্রেতারাই কিনে নিয়ে থাকেন বলেও জানান তারা। তারা আরো বলেন, পঁচনশীল পণ্য সংরক্ষনের সুবিধার্থে তারা এসব বরফ তৈরি করেন। কিন্তু কারখানা থেকে নিয়ে মানুষ সেটাকে কিভাবে ব্যবহার করেন সেটার দায় দায়িত্ব তাদের নয়। একাধিক আঁখের রস বিক্রেতা জানান, বরফ ভালো পানিতে তৈরি হয় জেনেই কিনে এনে মানুষকে খাওয়াচ্ছি। কিন্তু কেমন পানি আর কোন পরিবেশে তৈরি হয় এটা আমাদের জানা নেই। কারখানার মালিকদের কথায় উপর বিশ্বাস রেখেই বরফ কিনে আনেন তারা। আঁখের শরবত খেতে আসা যুবক আবু কালাম বলেন, এই বরফ কোথায় আর কেমন পানি দিয়ে তৈরি হচ্ছে। এটা আদৌ খাওয়ার উপযোগী কিনা সেটার দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের। কিন্তু তারা তো এই বিষয়গুলো দেখছেন না। তিনি আরো বলেন, আমরা ভালো মনে করেই তৃষ্টা মেটাতে শরবতের সাথে এসব বরফ খাচ্ছি। জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বরফ তৈরির পানির উৎসটা কি সেটা আগে জানতে হবে। এটা কি টিউবওয়েলের পানি নাকি নদীর পানিতে তৈরি হচ্ছে। মাছে ব্যবহার করা বরফ কখনও খাওয়ার উপযোগী নয়। বরফটি স্বাস্থ্য সম্নত কিনা সেটা আগে ক্লিয়ার হতে হবে। বরফগুলো যদি নোংরা পানিতে তৈরি হয়ে থাকে । তাহলে এসব বরফ খেলে মানুষ টাইফয়েড, আমাশয় এবং জন্ডিসে আক্রান্ত হবে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষ মুন্সীগঞ্জ জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মো. জুয়েল মিয়া বলেন, বরফ তৈরির কারখানাগুলোতে গিয়ে বরফের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এরপর নমুনাগুলোকে ল্যাবে পাঠানো হবে। পরিক্ষা করার পর যদি বরফে কোন ধরনের ক্ষতিকর জীবানু ধরা পড়ে তাহলে বরফ তৈরির কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ বলেন, বরফ তৈরির কারখানাগুলা সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখবো। তারা যদি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কিংবা নোংরা পানিতে খাবার উপযোগী বরফ তৈরি করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৫সেপ্টেম্বর,২০২১/ এইচ