সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট

0
402

প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ :
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মানুষের একমাত্র আশা-ভরসার জায়গা। ভরসার জায়গাটি এখন হতাশায় রুপান্তরিত হয়েছে। জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ। এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে ২১ জন চিকিৎসকের স্থলে রয়েছে ১১ জন। তার মধ্যে কনসালটেন্ট ৪ জন, মেডিকেল অফিসার ৪ জন। সাব সেন্টারে ১৭ জন চিকিৎসকের স্থলে রয়েছে ১৩ জন। তারমধ্য মেডিকেল অফিসার ৮জন। ৮ জনের মধ্য ১জন সাব সেন্টারে কাজ করছে, ৭ জন হাসপাতালে আছে । বাকি সবাই অনউপস্থিত, ১জন, ১জন যান্ত্রিক বাকিরা সব বিষন্নতায় নার্স পদ ২০টা প্রধান ১৪জন মধ্য অবস্থায় ৪জন পদায়ন ৪জন চিকিৎসকদের ১২টি পদ খালি রয়েছে। এক্সরে মেশিন থাকলেও পদ খালি অপারেটরের, নেই কুক, নেই মালি। ক্লিনার না থাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করতে বাইরে থেকে লোক আনতে হয়। এমটি ল্যাব টেকনিশিয়ান নেই। যন্ত্র থাকতেও ইসিজি হয়না এখানে। দীর্ঘদিনেও হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের দেখা নেই। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে সরকারী এ হাসপাতালটি। এর ফলে দালালদের দৌরাত্মতো বেড়েছে। বিভিন্ন জর্জরিত হাসপাতালটি দেখার কেউ নেই। এতে করে কোনমতে চলছে সেবাদান কার্যক্রম। এই হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা রোগীরা এবং তার স্বজনরা বলছে সরকার এখনই এ হাসপাতালটির বিভিন্ন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে জনবল সহ সরকারের কঠোর নজরদারিতে নিয়ে এ হাসপাতালটি আরো কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। রবিবার বেলা ১১ টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৬ থেকে ৭শ মানুষজন সেবা নিতে এসেছেন। আর অল্প চিকিৎসক দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী সঙ্কটে বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ১৪ বছর আগে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু আজও তার উন্নতি নেই। উপজেলার ২ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি মানুষের চিকিৎসা সেবায় হাসপাতালটি দীর্ঘদিনেও আলোর মুখ দেখেনি। এখনো প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগী আউটডোরে আসেন চিকিৎসা নিতে। আবার কিছু রোগী ভর্তি থাকেন এখানে। অনেক ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসাবঞ্চিত হয় বেশিরভাগ মানুষ। এ সুযোগে দিন দিন হাসপাতালকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মিনি ক্লিনিক, যার মান নিয়ে রয়েছে জনমনে প্রশ্ন। তাই দালালচক্রও রয়েছে সক্রিয়। ২০০৬ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় হাসপাতালটি উন্নীত করা হয়। পরে ২০১৩ সালে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ ৫০ শয্যা হাসপাতালের দোতলা একটি ভবন উদ্বোধন করেন। কিন্তু ৫০ শয্যার সকল সুবিধা আজও মিলেনি এ হাসপাতালে। এখন করোনাকালীন সময়ে সে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। করোনা রোগীদের আলাদা কোন নির্দিষ্ট ইউনিট নেই। করোনায় দফায় দফায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বসার স্থানও সঙ্কট রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ২১চিকিৎসকের মধ্যে ২ জন ঢাকাতে সংযুক্তিতে রয়েছে, অননুমোদিত অনুপস্থিত ১ জন, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ১জন সহ পথ শূন্য ১২ টি। নাস ২০ জনের মধ্যে ১২ জন ,টেকনোলজিস্ট ৮ জনের মধ্যে রয়েছে ৬জন,অন্যান্য ষ্টাফ ৩৪ জনের মধ্যে রয়েছে ১৪ জন্য। হাসপাতালে চকিৎসা নিতে আসা মো.ইসলাম মিয়া জানান, চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিদিন ফিরে যাচ্ছেন শত শত মানুষ। মিলছে না প্রয়োজন মত কোন ঔষধ। একটু কিছু হলেই ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় রোগীদের। আমিও চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছি, কোন ঔষধও পাননি। ইছাপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো.আজহার শেখ জানান, ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট করা হয় হাসপাতালটি। কিন্তু ১৪ বছর পার হলেও সেই ৩১ শয্যার মতই রয়ে গেছে। এখন লোকবল সঙ্কটে বেহাল অবস্থা। মাঠকর্মীও সঙ্কট। হাসপাতালে ভিতরের গলিতে বাতি নেই আধো আলোতে রোগীদের চলাচল করতে হয়। নানা সমস্যায় রোগী এখন কম। এসব দেখবে কে? হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন মো.হাবিব বেপারী জানান, হাসপাতালে এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাম, ইসিজি ও রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা হয় না। বাইরে থেকে করতে হয়ে। তাই হাসপাতাল এলাকায় দালালের অভাব নেই। এখানে চিকিৎসা নিতে এসে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। হাত-পায়ের হাড় ভাঙ্গা রোগীদের নিয়ে অন্য স্থান থেকে পরীক্ষা এক্স-রে করে আবার হাসপাতালে আসা যাওয়া এসব রোগীর অনেক কষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুমান আরা বলেন, চিকিৎসক, এক্সরে অপারেটর, এন্টিল্যাব টেকনিশিয়ানসহ বিভিন্ন পদ শূণ্য। ক্লিনার নেই, মালি নেই, নেই কোন কুক। বাইরে থেকে লোকবল এনে পরিষ্কার করতে হচ্ছে। এতো পদ শূণ্য থাকায় ভালো স্বাস্থ্যসেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালটি ৫০ শয্যা হলেও এখনো ভবনটি চালু করা যায়নি। ডাক্তারদের বসার ভালো জায়গা নেই। প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে সেবা প্রদান করা কষ্টকর। বিশাল আউটডোরে রোগীদের সাপোর্ট দিবে সেখানেও মেডিকেল অফিসারদের ৪ টি পদ শূন্য। প্রতিদিন ৬/৭শ রোগী আউটডোরে আসছে। তারমধ্যে প্রতিদিন কিন্তু আমরা করোনার টিকা দিয়ে যাচ্ছি। সিরাজদীখানবাসী সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করে বলছি, আমাদের জায়গা থেকে শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।

 

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here