সাতক্ষীরায় পাউবো কর্তা মাসুদ রানার নির্দেশে ঠিকাদার কর্তৃক বন্য গাছ কর্তন :কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা

0
412

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্যামনগর উপজেলা শাখার সেকশন অফিসার মাসুদ রানার নির্দেশে মূল ঠিকাদার ও সাবঠিকাদার কর্তৃক ২ শতাধিক গাছ কর্তন করার অভিযোগ ওঠেছে।সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ৫ নং কৈখালী ইউনিয়নের ৪ নং পোল্ডারের শৈলখালী ও পশ্চিম কৈখালীসহ বেশ কয়েকটি অংশের কালিন্দী নদীর উপকূল রক্ষা বাঁধে আঘাত হানে। এতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী কালিন্দী নদীর উপকূল রক্ষা বাঁধের অংশে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরই প্রেক্ষিতে সরকারিভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্ধ আসে ৫৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ শৈলখালী মন্দির অভিমুখ হতে মুনছুর দফাদারের বাড়ীর অভিমুখ পর্যন্ত ২ হাজার ৭০ মিটার বাঁধে মাটির কাজের জন্য বরাদ্ধ আসে ২৬ লক্ষ টাকা এবং জিও বস্তা প্লেসিং এর জন্য বরাদ্ধ আসে ৩০ লক্ষ টাকা। যা সর্বমোট ৫৬ লক্ষ টাকা। সরকারিভাবে এ কাজের দায়ির্ত্বভার দেওয়া হয় (গ্যালাক্সি এসোসিয়েটস) গ্যালাক্সি হাউজ, পূর্ব মজমপুর,ওস্তাদভাই সড়ক কুষ্টিয়া-৭০০০। যা সত্বাধিকারী এ.টি এম সামছুল আলম (রবি)। কাজের মেয়াদকাল দেওয়া হয় ০৯/০৫/২০২১ ইং হতে ০৯/০৮/২০২১ ইং অর্থাৎ ৯০ দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, মূল ঠিকাদার কাজ না করে সাবঠিকাদার উপজেলার ৫ নং কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম গত জুলাই মাসের প্রথম দিকে কাজ শুরু করেন । কৈখালী গ্রামের আব্দুর রহিম, আবু সাইদ, খলিল, দীলিপ, খোকন, নূর ইসলাম, আ.রব এবং শৈলখালী গ্রামের শহিদুল ইসলাম, রেজাউল, আব্দুল আল মামুনসহ শতাধিক ব্যক্তিরা জানান, চলতি বছরের জুলাই মাস হতে বাঁধ সংস্কারে সাবঠিকাদার আব্দুর রহিম (৫ নং ইউপি চেয়ারম্যান) মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ভাঙন কবলিত অংশে শ্রমিক দিয়ে কাজ সম্পন্ন না করে শুধুুমাত্র অতি লাভের আশায় বশীভূত হয়ে ভেকু দিয়ে বাঁধের উপরিভাগের মাটির কাজ সম্পন্ন করেন। ভেকু দিয়ে কাজ করার সময় বন বিভাগের আওতায় সামাজিক বনায়ন কর্মকর্তার কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই নিয়ম বর্হিভূত ভাবে বাঁধের অভ্যান্তরে থাকা দেশী প্রজাতির হাজারাধিক ও বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গেওয়া ও কেওড়া গাছ কর্তন করেন। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, শ্রমিক দিয়ে কাজ করলে কোভিড-১৯ এর কারণে একদিকে যেমন অস্বচ্ছল পরিবার আর্থিক সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতো অন্যদিকে দেশি প্রজাতি ও বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গেওয়া ও কেওড়া গাছ নির্বিচারে কর্তনের হাত থেকে রক্ষা পেতো।তারা আরো জানান, কর্তন কৃত প্রতিটি গাছ বড় হতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে। এই অভাবনীয় ক্ষতি কোন ভাবে পূরণ হওয়ার নয়। গাছ বিভিন্ন দুর্যোগ ও প্রতিকূল অবস্থার হাত থেকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে। এসব বন্য প্রজাতির পরিবেশ বান্ধব গাছ নির্বিচারে কর্তন করায় স্থানীয়রা অনেকেই চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ কাজের শুরু থেকে মূল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি এসোসিয়েটস এর স্বত্বাধিকারী এ.টি এম সামছুল আলম (রবি) এর উপস্থিতি চোখে পড়েনি। এ কাজের তদারকি ও দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) শ্যামনগর উপজেলা শাখার সেকশন অফিসার মাসুদ রানা ও একই অফিসের কার্য সহকারী নাজিম-উদ-দৌলা রছি। এ বিষয়ে সাবঠিকাদার ৫ নং কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গাছ কর্তন, সামাজিক বনায়ন কর্মকর্তার অনুমতি আছে কিনা ও মূল ঠিকাদার হতে কিভাবে কাজ প্রাপ্ত হয়ে সাবঠিকাদার হিসাবে কাজ করেছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সাবঠিকাদার হিসাবে কাজ করিনি। শুধুমাত্র দেখাশুনা করেছি। গাছ কাটার বিষয়ে তিনি সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কিছু গাছ কাটা হয়েছে ঠিকই তবে, টেকসই বাঁধ নির্মাণের স্বার্থে। শ্যামনগর উপজেলা সাামজিক বনায়ন (বনবিভাগ) কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে গাছ কর্তন করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। গাছ কর্তন কৃত জায়গায় পুণরায় বন্য প্রজাতির গাছ রোপণ করেছি। কাজে লাভ হয়েছে কত টাকা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৪ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এ বিষয়ে মূল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি এসোসিয়েটস স্বত্বাধিকারী এ.টি এম সামছুল আলম (রবি)-এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে সাবঠিকাদার দিয়ে কাজ সম্পন্ন ও বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গাছ কর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫ নং কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান শুধুমাত্র কাজটি দেখাশুনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, গাছ কর্তনের বিষয়টি আমার জানা নাই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) শ্যামনগর উপজেলা শাখা সেকশন অফিসার মাসুদ রানার সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তার নির্দেশে মূল ঠিকাদার ও সাবঠিকাদার কর্তৃক বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গাছ কর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল ঠিকাদার ছিল না। তিনি আরো বলেন, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সাবঠিকাদার আব্দুর রহিম চেয়ারম্যানকে আমি গাছ কর্তন করার কথা বলেছি। উদ্ধর্তন কোন কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে কাজের ম্যানুয়ালে আছে কাজের ক্ষেত্রে গাছ কর্তন করা যাবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সাতক্ষীরা ডিভিশন-০১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাকির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে গাছ কর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাছ কর্তনের বিষয়টি আমার জানা নেই। সেকশন অফিসার মাসুদ রানার নির্দেশে গাছ কর্তন করা হয়েছে এব্যাপারে তিনি অবগত আছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সাতক্ষীরা ডিভিশন-০১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে গাছ কর্তনের বিষয়ে অবগত আছেন কিনা এবং সেকশন অফিসার মাসুদ রানার নির্দেশে গাছ কর্তন এর ব্যপারে তিনি জানেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুনেছি অতি উৎসাহী হয়ে কিছু লোক গাছ কেটেছে। তিনি আরো বলেন, শ্যামনগর উপজেলা শাখা (পাউবো) সেকশন অফিসার মাসুদ রানার নির্দেশে গাছ কর্তন করা হয়েছে এটা আমার জানা নেই। এবিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন কমিশন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস,এম মহিদার রহমান এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, গাছ আমাদের অকৃতিম বন্ধু, নদীর বাঁধ সুরক্ষায় বন্য প্রজাতির গাছ রক্ষাকবচ হিসেবে অনন্য ভূমিকা পালন করছে।তিনি আরো বলেন, মূল ঠিকাদার কাজ না করে সাবঠিকাদার দিয়ে কাজ করা নিয়ম বহির্ভূত। তিনি আরো বলেন, পাউবো কর্তার নির্দেশে বন্য প্রজাতির ২ শতাধিক গাছ কর্তনের বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এ ব্যপারে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

আলোকিত প্রতিদিন // আতারা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here