কল্পনার রঙে সাজছেন দুর্গা 

0
331
 আহসানুল ইসলাম আমিন         

মাটির কাঠামোগুলো রাখা সারিবদ্ধভাবে। তাতে রঙের প্রলেপ বসাচ্ছেন গোবিন্দ পাল । কল্পনায় দেবী যেমন, তেমন আদলেই চোখ ফোটাচ্ছেন, পায়ে আলতা দিচ্ছেন, নখ রাঙাচ্ছেন লালে। এভাবে খড়, বাঁশ, মাটির তৈরি কাঠামো হয়ে উঠছেন গোবিন্দ পালের কল্পনার দেবী দুর্গা। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ১০৮টি পূজা মন্ডপে পূজা এবার দুর্গাপূজা হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘনিয়ে আসায় শেষ সময়ে প্রতিমার গায়ে রঙের আঁচড়ে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমাশিল্পিরা। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপজেলা জুড়ে উৎসবের আমেজ বইছে। আগামী ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ মহোৎসব শুরু হবে। আর ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের এ উৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠায় মর্ত্যে আসবেন দেবী দুর্গা। ভোরে মহালয়ার ঘট স্থাপন, বিশেষ পূজা আর মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খের ধ্বনি ও চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আবাহন জানানো হয়। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঢাকে কাঠি পড়বে। শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। তাই এখন চলছে উপজেলার ১০৮ মন্ডপের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দিন-রাত এক করে এখন রঙ আর তুলির আঁচড়ে শেষ রূপায়নের কাজ করছেন প্রতিমাশিল্পিরা। আগামী ১১ অক্টোবর আগমনের মধ্য দিয়ে দশভূজা দেবী দর্শন দেবেন তার অজস্র ভক্তকে। ধূপ, ধনি আর ঢাকের তালে ক’দিন পরেই মেতে উঠবে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষজন। ইতোমধ্যে দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে মন্ডপ সাজানো ও নতুন জামা-কাপড় কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষজন , গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২ টার দিকে উপজেলার মালখানগন ইউনিয়নের তালতলা বাজারের মন্দিরের প্রতিমায় রঙের আঁচড় দেওয়া চিত্র দেখা গেছে। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এবছর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩টি ইউনিয়নে ১০৮টি পূজা মন্ডপে পূজা-অর্চনার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে চিত্রকোট ইউনিয়নে ১৯টি,শেখরনগর ইউনিয়নে ১৪টি,রাজানগর ইউনিয়নে ১১টি,কেয়াইন ইউনিয়নে ১৭টি,বাসাইল ইউনিয়নে ০৪টি,লতব্দী ইউনিয়নে ০৪টি,রশুনিয়া ইউনিয়নে ১০টি,বয়রাগাদী ইউনিয়নে ০৫টি,ইছাপুরা ইউনিয়নে ০৪টি, মধ্যপাড়া ইউনিয়নে ০৪টি,জৈনসার ইউনিয়নে  ০৬টি,কোলা ইউনিয়নে ০১টি ও মালখানগর ইউনিয়নে ০৯টি পূজামন্ডপে দুর্গাৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গোৎসব নিয়ে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় চলছে সাজসাজ রব। পূজার আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে পুজারি থেকে শুরু করে কর্মব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। প্রতিমাশিল্পি গোবিন্দ পাল বলেন, আমি এবছর দুইটি প্রতিমার কাজ করেছি। এবার করোনা ভাইরাস সংক্রমাণ কম থাকায় মোটামুটিবড় পরিসরে দুর্গোৎসব হবে। তাই প্রতিমাও বড় তৈরি করা হয়েছে। গত বছর করোনার কারণে পূজার ছোট পরিসরে করতে হয়েছে। সেজন্য মানুষজনও ছোট ছোট প্রতিমা তৈরি করছে। এবার যেহেতু মোটামুটি করোনা একটু কমেছে। সে কারণে এবার প্রতিমা বড় হচ্ছে। আমরা শেষ সময়ে প্রতিমার গায়ে রঙের আঁচড়ে সাজিয়ে তুলছি। এর কারণ হচ্ছে কয়েকদিন পরেই দুর্গাপূজা শুরু হবে। রাজানগর ইউনিয়নের প্রতিমাশিল্পি শিপন পাল বলেন, প্রতিমা তৈরি করা অনেক কষ্টের। আর আগের মতো লাভ হয় না। তার পরও করতে হয় সংসার চালানোর জন্য। এখন দুর্গা প্রতিমাগুলোতে রং লাগিয়ে সুসজ্জিত করা হচ্ছে। সিরাজদিখান মদন মোহন মন্দিরের পূরোহিত মদন চক্রবর্তী জানান, এ বছরে দেবী দূর্গা পৃথিবীতে আগমন করবেন ঘটোকে, গমন করবেন দোলায়। ভালো বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে আসছেন। ফলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলার উন্নতি হবে। উপজেলার পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি গোবিন্দ দাস পোদ্দার বলেন, এবারের পূঁজাকে সার্বজনীন উৎসবে রূপ দিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীর সকলকে নিয়ে আনন্দ করতে চাই। অশুর বিনাসী দেবীর এই আগমন উপলক্ষে সাধ্যমত আয়োজন সম্পন্ন করার প্রাণান্তকর চেষ্টা আমাদের। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও প্রতিটি মন্ডপে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) রাসেদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নের বিট পুলিশ এবং পূজামন্ডপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে আমাদের সভা হয়েছে। দূর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে উদযাপনে সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃংখলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে পুলিশ, র‌্যাব বিশেষ টহলে থাকবে। এছাড়া প্রতিটি মন্দির ও পূজামন্ডপের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে কমপক্ষে দুজন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিটি পূজামন্ডপের প্রবেশ পথে হাত ধোয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা এবং আগত ভক্তদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, মেটাল ডিটেক্টর মেশিনসহ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে আগতদের দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে। পুজারী ও ভক্তবৃন্দ শান্তিপুর্ন পরিবেশে পূজা উদযাপন করতে পারে সে জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক সহযোগীতা করা হবে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ০৬অক্টোবর,২০২১/ এইচ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here