টাঙ্গাইলে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২৪০ টি মণ্ডপে দূর্গা পূজা মহৌৎসব

0
353

বিশেষ প্রতিনিধি:
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজা। প্রকৃতিতে শরৎ আসার সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালির জীবনে বেজে উঠে উৎসবের ডাক। বুধবার ( ৬ই অক্টোবর) মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে দেবীপক্ষ । শুরু হয়ে গেছে বাঙালির আবহমানকালের উৎসবের আমেজ। সারা দেশের মতো টাংগাইলেও চলছে দেবী দূর্গার আগমনী প্রস্তুতি। ঢাক-ঢোল, শংখ ধ্বনি আর উলুধ্বনি দিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ভক্তরা। আগামী ১১ই অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ দূর্গোৎসব । তবে করোনা মহামারির কারণে এ বছর পূজায় আনুষ্ঠানিকতা থাকছে কম। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। পূজা মণ্ডপে ভক্ত এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় থাকছে কঠোর নজরদারি। জনসাধারণকে মাস্ক পরে, শৃঙ্খলা মেনে পূজা মণ্ডপে আসার জন্য বলা হয়েছে। সরকারের তরফে উৎসবের খরচ কমিয়ে এই আপদকালীন সময়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এ দিকে দূর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ রুপ দিতে প্রতিমা সাজিয়ে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙাইলের মৃৎশিল্পীরা। শেষ সময়ে রং-তুলি দিয়ে প্রতিমা সাজাতে ভীষণ ব্যস্ত তারা। দম ফেলারও ফুসরৎ নেই। কাদা মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে তৈরি প্রতিমাগুলোতে মনের মাধুরী মিশিয়ে নিপুণ হাতে এঁকে দিচ্ছেন রঙের ছোঁয়া। মৃৎশিল্পীদের হাতের যাদুতে রঙ-তুলিতে ফুটে উঠছে প্রতিমার সৌন্দর্য। পাল পাড়া ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। মৃৎশিল্পীদের পাশাপাশি ডেকোরেটর মিস্ত্রিরাও পূজা মণ্ডপের গেইট, প্যাণ্ডেল ও লাইটিংয়ের কাজে ভীষণ ব্যস্ত। প্রশাসনের তরফেও মণ্ডপগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা ও নাশকতা এড়াতে রাখা হচ্ছে কঠোর নজরদারি। টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়া ঘোষ বাড়ি পূজা মণ্ডপে প্রতিমার চক্ষুদান করছে তাড়টিয়ার মৃৎশিল্পী সন্তোষ পাল । সাথে সহকারী হিসেবে কাজ করছেন ছেলে সুমন পাল। সন্তোষ পালের সাথে কথা বলে জানা যায়- বংশ পরম্পরায় এ কাজ করছেন তারা। তিনি কাজ শিখেছেন তার বাবা কার্তিক পালের কাছে। সন্তোষ পাল প্রায় ৩০ বছর ধরে করছেন প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিটি প্রতিমা ১৫-৩০ হাজার টাকা দরে এ বছর ৯ টি প্রতিমা তৈরি করেছেন তিনি। টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার রাশড়া গ্রামের বিখ্যাত প্রতিমা শিল্পী ভারত পাল বলেন- ছোট সময় থেকে বাবার কাছে প্রতিমা তৈরির কাজ শিখি। প্রতিমা তৈরি আমার আত্মার সাথে মিশে আছে। আমার বয়স যখন ১০ বছর তখন থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজে লেগে পড়ি। মনের আবেগ আর ভালোবাসা দিয়েই প্রতিমা তৈরি করি। প্রতিমা তৈরি করাই আমার ধ্যান – জ্ঞান। প্রতিমা তৈরি করছি প্রায় ৫০ বছর ধরে। এ বছরও ১৪ টি প্রতিমার কাজ হয়েছে।
আরেক প্রতিমা শিল্পী রতন পাল বলেন- মায়ের কাজ করতে খুব ভালো লাগে। এখানে টাকা- পয়সার হিসেব মূখ্য না। মায়ের রুপ অন্তরে ধারণ করে কাজ করি। পূজার এ সময়টাতে হাজার পরিশ্রমেও ক্লান্তি নেই। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ টাংগাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুন ( ঝন্টু) আলোকিত প্রতিদিনের সাথে আলাপচারিতায় টাঙ্গাইলের দূর্গা পূজার সার্বিক চিত্র ও তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান- টাংগাইল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাহায্য- সহযোগিতা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। সেই সাথে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু নির্দেশনা রয়েছে। পূজায় আলোকসজ্জা কমানো, উচ্চস্বরে গান না বাজানো, ধর্মীয় গান বাজানো, মাদকদ্রব্য পরিহার, আজানের সময় গান বন্ধ রাখা, প্রতিটি পূজা মন্ডপের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা, পূজা মণ্ডপে সাবান পানি রাখা ও সম্ভব হলে থার্মাল স্ক্যানার বসানো, রাত আটটার আগে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া- ইত্যাদি কিছু সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। প্রদীপ কুমার গুন আরও জানান- সমগ্র বাংলাদেশে পূজা মন্ডপের সংখ্যার দিক দিয়ে টাংগাইলের অবস্থান দ্বিতীয়। টাঙ্গাইলে মোট ১২৪০ টি মন্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল শহরে বা পৌর এলাকায় রয়েছে ৯৪ টি পূজা মণ্ডপ । টাঙ্গাইলের ১২ টি উপজেলার মধ্যে টাঙ্গাইল সদরে রয়েছে ২০৭ টি পূজা মন্ডপ । এছাড়া বাসাইলে ৬০টি , সখিপুরে ৪২ টি, ঘাটাইলে ৭৮টি , মধুপুরে ৫৫ টি, ধনবাড়ীতে ৩১ টি, ভুয়াপুরে ৪০টি, নাগরপুরে ১২৮ টি, কালিহাতিতে ১৮২ টি, মির্জাপুরে ২৫২ টি, গোপালপুরে ৪৬ টি এবং দেলদুয়ারে ১১৯ টি মন্ডপে এবার দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সারা বাংলাদেশে উপজেলা ভিত্তিক পূজা মণ্ডপের  সংখ্যার দিক দিয়ে টাংগাইলের মির্জাপুর উপজেলায় সর্বোচ্চ ২৫২ টি মন্ডপে এবার দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

 

আলোকিত প্রতিদিন/ ৭ অক্টোবর, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here