আলোকিত ডেস্ক
সিলেটের চাঞ্চল্যকর রায়হান হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে প্রধান আসামি পুলিশের বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া এক নয়া ফন্দি এঁটেছেন বলে জানা গেছে। এবার নিহত রায়হানের স্ত্রীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এর আগে রায়হানের মায়ের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছিলেন রায়হানের ঘাতক আকবর। নিহত রায়হানের মা একটি ফেসবুক পেইজে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে এ তথ্য জানান। এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। নিহত রায়হানের মা ওই ফেসবুক পেইজকে বলেন, প্রশাসনের এক ব্যক্তিকে দিয়ে আমার বউমাকে সে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। পাশাপাশি আমার বউমা, নাতি ও আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিবে বলে জানায়। আমরা তার প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। এদিকে সিলেট নগরীর আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদ হত্যাকা-ের এক বছর পূর্ণ হবে আগামীকাল রবিবার। গত বছর ১০ অক্টোবর রায়হানকে মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। ওইদিন ভোরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি সেখানে মারা যান।
রায়হানের মা সালমা বেগম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ছেলে হত্যার এক বছর হয়ে গেল। এই উপলক্ষে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আগামীকাল দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও শিরণি বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, পুলিশ জনতার রক্ষক। আর সেই পুলিশই আমার একমাত্র ছেলেকে হত্যা করেছে। রায়হানকে যখন হত্যা করা হয় তখন তার মেয়ের বয়স ছিল মাত্র দুই মাস। এখন তার বয়স ১৪ মাস চলছে। সালমা বেগম বলেন, আমার একটাই চাওয়া এসআই আকবরসহ সব আসামিকে যেন সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেওয়া হয় এবং তা যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।
শাশুড়ির সঙ্গে একমত পোষণ করে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বলেন, আমরা ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। এছাড়া এ মুহূর্তে একটি বিষয়ই বেশি চিন্তার তা হলো আমার ১৪ মাসের শিশুর ভবিষ্যত কী? কীভাবে চলবে আমার সন্তানের আগামী দিন। তারা কেন আমার মেয়ের জীবন থেকে তার বাবাকে কেড়ে নিল। কী এমন অপরাধ ছিল যে, তাকে প্রাণেই মেরে ফেলল? তিনি বলেন, আমি ওদের দ্রুত ফাঁসি চাই। তাদের এমন বিচার হোক আর কোনোদিন কোনো পুলিশ যেন নিরপরাধ মানুষকে এভাবে নির্যাতন করে মেরে না ফেলে। আমি চাই, এটি যেন একটি দৃষ্টান্তকারী বিচার হয়। গত বছর ১০ অক্টোবর পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন চালিয়ে রায়হানকে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনা সিলেটসহ পুরো দেশবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার চার্জশিট গ্রহণের মধ্য দিয়ে ওই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
রায়হানের স্বজনরা জানান, কিছুদিন আগে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে মামলার তদন্তের স্বার্থে বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদকে তাদের মুখোমুখি করা হয়। তখন আসামিরা রায়হানের মা ও চাচার পা ধরে ক্ষমা চান। ওইদিন আকবর ক্ষমা চেয়ে রায়হানের মা, স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিবেন বলে জানান। তখন রায়হানের মা ও চাচা তাকে কখনই ক্ষমা করবেন না বলে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন।
জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্তে প্রথমে পুলিশ ছিল। পরে গত বছরের ১৩ অক্টোবর মামলাটি স্থানাস্তর করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। তদন্তের স্বার্থে পিবিআই প্রথমেই রায়হানের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে। গত ৫ মে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১ হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়, তাদের পাঁচজনই পুলিশ সদস্য। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ। অভিযুক্ত অপরজন কোম্পানীগঞ্জের আবদুল্লাহ আল নোমান। তার বিরুদ্ধে ঘটনার পর সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ গায়েব করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাগারে থাকলেও নোমান এখনো পলাতক রয়েছেন। একাধিক সূত্র বলছে, তিনি ভারতে পালিয়ে থাকতে পারেন। এদিকে, রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে যখন আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। গত বছরের ৯ নভেম্বর দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে সিলেট জেলা পুলিশ।
আলোকিত প্রতিদিন/ ০৯অক্টোবর,২০২১/ এইচ