মুস্তাফিজার রহমান
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্ব ফুলমতি, পশ্চিম ফুলমতি, ঝাউকুটি, কান্দার পার গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত বারো মাসিয়া নদী। অত্র অঞ্চলের প্রবীণরা জানিয়েছেন, বছরের বারো মাসই নদীতে পানি প্রবহমান থাকায় এর নাম বারো মাসিয়া রাখা হয়েছে। দুই তীরের রকমারি বৃক্ষারাজিতে আচ্ছাদিত সবুজের বুক চিরে বয়ে চলা নয়নাভিরাম বারো মাসিয়া তীরবর্তী ফসলি জমি ও বসতবাড়ি ভেঙ্গে নেয়ার মাধ্যমে জানান দিচ্ছে তার আগ্রাসি রূপের। এক সময়ের সরু বারো মাসিয়া দিনে দিনে প্রশস্ত হচ্ছে। নদীভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া ও নদী পারাপারের সেতু না থাকায় বারো মাসই চরম ভোগান্তিতে দিন পার করছেন চার গ্রামের প্রায় পনেরো হাজার মানুষ। উজানের ঢলে বার মাসিয়া নদী বয়ে চলার রসদ পেলেও এর তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষদের জীবনের রসদ জোগাড়ে পরতে পরতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই নদী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদী তীরবর্তী পূর্ব ফুলমতি গ্রামের কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন জায়গায় ভাঙনের ফলে নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। ওই এলাকার কৃষক দেবেন্দ্রনাথ, মনসুর আলী, সেবেন্দ্রনাথ ও কৃঞ্চ চন্দ্র বলেন, আমরা কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করি। ধীরে ধীরে আমাদের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। নদীতে সেতু না থাকায় আমরা নদী পারাপারে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। জমিতে উৎপাদিত ধান, গম, পাট, কলাসহ বিভিন্ন ফসল নদী পার করে আনতে ভোগান্তির পাশাপাশি আমাদেরকে বাড়তি খরচ বহন করতে হয়। একই এলাকার অসহায় বিধবা ছামিনা বেগম বলেন, আমার শেষ সম্বল বাড়ি ভিটা দিনে দিনে নদীতে বিলীন হচ্ছে। আমার আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেতু না থাকায় সারা বছরই নদী পারাপারের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় ফুলমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম ফুলমতি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কর্মচারীদের। তাছাড়াও নদীর উপর সেতু না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় ফুলমতি কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা গর্ভবতী মা ও শিশুদের। নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাসেন আলী, ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম, নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক রেফাজুল আলম বলেন, নদীর ভাঙ্গনের ফলে এ অঞ্চলের কৃষকেরা ফসলি জমি হারানোর শঙ্কায় আছেন। অনেকের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পাশাপাশি নদী পারাপারের সেতু না থাকায় এ অঞ্চলের বসবাসকারী মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও জীবন জীবিকায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে।গত ৮ অক্টোবর শুক্রবার এ অঞ্চলের শতশত এলাকাবাসীর অংশ গ্রহণে নদীভাঙন রোধ ও সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আমরা আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ আমাদের ভোগান্তি নিরসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আলোকিত প্রতিদিন // আতারা