নাজমুল হাসান সাকিব
পঞ্চম শ্রেণী। পুরো ক্লাসের ছেলেরা দুইভাগ হয়ে গেছে। কথা কাটাকাটি। রাবারের গুলতি দিয়ে কাগজের টুকরা ছোঁড়াছুঁড়ি থেকে শুরু করে হাতাহাতি, মারামারি পর্যন্ত ছড়ালো বিষয়টি। বিকেলে ছুটির ঘণ্টার পর বাড়ি যাওয়ার পথে আরেক দফা মারামারি হলো। এমনকি এতে একজনের মাথা ফেটে রক্তও ঝরছে। ঝগড়া শুরু হয়েছিলো গতবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফলাফল নিয়ে। ক্লাসের ছেলেরা দুইভাগ হয়ে পড়েছিলো। সেই থেকে রেষারেষি, রাগারাগি আর দলাদলি।
পরের দিন সবাই ভয়ে ভয়ে স্কুলে এলো। না জানি কিছু হয়ে যায় কিনা? ছাত্রদের অভিবাবকরাও এব্যাপারে প্রধান শিক্ষককে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কারণ, বিষয়টি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ছাত্রদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আর স্কুলের পক্ষ হতে ‘রহমত’ স্যারকে দায়িত্ব দেয়া হলো। তিনি বিষয়টি মিমাংসা করবেন।
স্যার ক্লাসে আসলেন। সবাই তো ভয়ে থ হয়ে আছে। একটাই ভরসা ‘রহমত’ স্যার ছাত্রদেরকে সহজে মারেন না। কিন্তু আজ বলা যায় না। কারণ, বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ছাত্রের মা-বাবা পর্যন্ত এসে হেড স্যারের কাছে অভিযোগ করেছেন। ‘রহমত’ স্যার ক্লাসে এসে প্রথমে কিছুক্ষণ চুপ-চাপ বসে ছিলেন। নিস্তব্ধ পুরো ক্লাস রুম। কোন কথা নেই। ইতোমধ্যেই বলে উঠলেন, আসো আজ আমরা একটা খেলা খেলি।
এ কথা শুনে সবাই তো খুবই খুশি। যাক এতক্ষণ যা ভেবেছিলাম তা বোধ হয় কাটলো। হয়তো এযাত্রায় বেঁচে গেলাম।
স্যার বললেন, তোমরা সবাই আগামী কাল আসার সময় কিছু টমেটো নিয়ে আসবে। পরের দিন সবাই টমেটো নিয়ে এলে স্যার বললেন, প্রত্যেকে নিজ নিজ টমেটোগুলোর উপর কিছু নাম লিখো। যাদেরকে অপছন্দ করো শুধু তাদের নাম নামই লিখবে। যাহোক, সবাই নিজেদের মত করে নাম লিখে টমেটোগুলো কালো করে ফেলেছে।
-স্যার, লিখেছি।
-এবার টমেটোগুলো প্রত্যেকে নিজ-নিজ ব্যাগে রেখে দাও।
-সার, খেলবো না?
-এটাই তো খেলা।
-এবার টমেটোগুলো কী করবো?
-এগুলো এভাবেই থাকুক।
পরদিনও স্যার বললেন, টমেটোগুলো যার কাছে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকতে দাও। সবসময় সাথেই রাখবে। আর বাড়িতে গেলে পকেটে রাখবে। দুইদিন যেতে না যেতেই টমেটোগুলো পঁচতে শুরু করেছে। কারো টমেটো থেকে পচা দুর্গন্ধও বের হচ্ছে। আবার অনেকের কাছে একাধিক টমেটো থাকায় তারা আরো বেশি বিপদে পড়লো। এভাবে চারদিন অতিবাহিত হলো। পঞ্চম দিন স্যার জিজ্ঞেস করলেন, এই চার দিন কেমন কাটলো? ছাত্ররা তাদের নানান সমস্যার কথা বললো। ব্যাগ থেকে শুরু করে বই-খাতা সবই নষ্ট হয়েছে। টমেটোগুলো দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে, ইত্যাদি।
স্যার বললেন, দেখো, তোমাদের ব্যাপারটাও ঠিক এমনি। তোমরা সেই গতবছরের রাগ আর ঘৃণা মনের ভেতর পুঁতে রেখেছিলে। আর সেই রেখে দেওয়া রাগ আর ঘৃণা আজ পচে তোমাদের পরস্পরের মাঝে মারামারি হয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
ঠিক যেমনটি টমেটোগুলো পচে পরিবেশ দূষিত করেছে। তেমনি তোমাদের রাগ-ঘৃণাও পুরো স্কুল আর গ্রামকে দূষিত করেছে। এই রাগ যতই ভেতরে পুঁতে রাখবে ততই পঁচতে থাকবে। তাই অতিদ্রুত এটিকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। যেমনটি আজ তোমরা টমেটোগুলো ঝেড়ে ফেলে দিয়েছো। তাহলেই আর মনের ভেতর দূষণ সৃষ্টি হবে না। আল্লাহ্ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন!
আলোকিত প্রতিদিন // আতারা