প্রতিনিধি,শরিয়তপুর
শরীয়তপুরে স্বর্ণা বেগম নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে । নিহত স্কুলছাত্রী কালেক্টরেক্ট পাবলিক হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,মঙ্গলবার স্বর্ণা বেগম নামে একজন বিষপান করা রোগী ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু তাকে উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য রেফার্ড করা হবে বললে তারা হাসপাতালের ফাইলসহ পালিয়ে চলে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সখিপুরের চরচান্দা হাওলাদার কান্দির হানিফ হাওলাদারের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে স্বর্ণা বেগমের গত বছর শরীয়তপুর সদর পৌরসভা সংলগ্ন এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম আকনের বাড়ির ভাড়াটিয়া আল আমিন সরদারের সাথে ২ লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই স্বর্ণাকে যৌতুকের জন্য বার বার চাপ দেওয়া হচ্ছিল। স্বর্ণার বাবা দুইবারে মোট ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দেন মেয়ের শান্তির জন্য। কিন্তু এরপরও স্বামী আল আমিন, শ্বশুর হানিফ সরদারসহ শাশুড়ি ও ননদ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করত স্বর্ণাকে। প্রতিবেশীদের দাবি শান্ত শিষ্ট মেয়েটাকে দিয়ে গৃহের সকল কাজ কর্ম করাত, বাসায় ননদীর একটা ছোট্ট মেয়ে ছিল তাকেও লালন পালন করতে হত স্বর্ণাকে। এরপরও স্বামীর পরিবারের কারও মন রক্ষা হয় নি।
স্বর্ণা বেগম এত পরিশ্রম করত শুধু যেন তাকে পড়তে দেওয়া হয় এই শর্তে। স্বর্ণা পড়াশোনার জন্য বাসা সংলগ্ন কালেক্টরেক্ট পাবলিক হাই স্কুলে ভর্তি হয়। ভোরে উঠে সাংসারিক কাজ কর্ম সেরে স্কুলে গিয়ে পেছন বেঞ্চিতে বসত স্বর্ণা। ক্লাসের বান্ধবীদের সাথে তেমন কথা বলত না। সারাক্ষণ চুপচাপ থাকত। এরপর স্কুল শেষে আবার এসে সাংসারিক কাজ করতে হত মধ্য রাত অবধি।স্থানীয়রা আরও জানান, আমরা ঘটনার কিছুই জানি না। হঠাৎ মধ্যরাতে শুনি মেয়ের আত্মীয় স্বজন এসে ডাকাডাকি করছে। স্বর্ণা নাকি বিষপানে মারা গেছে।
স্বর্ণার কাকা ফারুক হাওলাদার জানান, ঘটনার পরে তারা আমাদেরকে সাথে সাথে জানায়নি । এখন লাশ কোথায় আছে তাও জানি না আমরা। দুই বারে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দেওয়ার পরেও আরও যৌতুকের জন্য নির্যাতন করেই আমাদের মেয়েটাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে ওরা। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।স্বর্ণা বেগমের সহপাঠি মিথিলা জানান, বাল্য বিয়ের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। কারণ সংসার, স্কুল, পরিবেশ সব দিক এই বয়সে মানানো যায় না। অনেক চাপ সৃষ্টি হয়। এই কারণেই হয়ত স্বর্ণা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
সমাজের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ১৪/১৫ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থীকে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক দেখিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় না আনলে এরকম ঘটনা সমাজে অহরহ ঘটতেই থাকবে। এই আত্মহত্যা একদিনে ঘটেনি বরং দীর্ঘদিন কোথাও ভরসা না পেয়েই একজন মানুষ আত্মহত্যা করে।ঘটনার পর থেকেই আল আমিন, তার বাবা ও দায়িত্বশীলরা পালাতক থাকায় এবিষয়ে তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বিষপানের রোগীকে শরীয়তপুর থেকে ফরিদপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল, সেখানে সে মারা গেছে। এঘটনায় ফরিদপুরে মামলা হয়েছে। আমরা আল আমিনের মা ও বোনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে এসেছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলোকিত প্রতিদিন // আতারা