পদ্মা রেলওয়ের জায়গা অধিগ্রহণের নামে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

0
574

প্রতিনিধি,ফরিদপুর

ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে  ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় সার্ভেয়ার এম মঞ্জুরের বিরুদ্ধে পদ্মা রেলওয়ের জায়গা অধিগ্রহণের নামে কোটি টাকা ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।সরেজমিনে গিয়ে ফরিদপুর জেলার ভাংগা থানার ৩৮নং চন্ডিদাশদী , ২২৪ নং গোপালকরদী, ২২১ নং আলগাদয়িা, ২২৬ নং দহিসড়া, ২০৭ নং দুলালী, ৫৫ নং সদরদী, ঈশ্বরদী, সলিলদিয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রামের রেল অধিগ্রহণের জায়গার মূল্য পাওয়ার জন্য জায়গার বিস্তারিত তথ্য গ্রহণে কাজ করেছেন সার্ভেযার এম মঞ্জুর । তিনি এসব এলাকার জমি অধিগ্রহণে রিপোর্ট কার্যক্রম করে জমির মালিককে ন্যায্য মূল্য পাইয়ে দেওয়ার জন্য ৫% থেকে ৮% পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্কে নগদ ঘুস গ্রহণ করেছেন বলে ভুক্তভোগিরা সাংবাদিকদের জানান।

এ বিষয়ে ৫৫ নং সদরদীর হোগলা ডাঙ্গির শেখ আবেদ আলী বলেন,, (পিতা- মৃত শেখ আলা উদ্দিন )  রেল অধিগ্রহণে জায়গার মূল্য পেয়েছেন ৩১ লাখ টাকা । কিন্তু এই টাকার চেক হাতে পেতে মঞ্জুর নগদ ঘুস চেয়েছিলো ২ লাখ টাকা। সেখানে তিনি হাতেপায়ে ধরে দিয়েছেন ৯০ হাজার টাকা।৫৫ নং সদরদীর হোগলা ডাঙ্গির মজিবর ব বলেন,  ( পিতা- মৃত নজিমুদ্দিন )  রেল অধিগ্রহণে জায়গার মূল্য পেয়েছেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।  চেক হাতে পেতে মঞ্জুর কে নগদ ঘুস দিতে হয়েছে ৫ লাখ টাকা । তিনি আরও জানান, এই ৫ লাখ টাকা মঞ্জুরকে দিতে তাকে সুদে টাকাটা আনতে হয়েছে। চেক হাতে পেয়ে সুদে আনা ৫ লাখ টাকার জন্য পরিশোধ করতে হয়েছে ৭ লাখ টাকা। এ বিষয়ে মজিবরের স্ত্রী আদরী সাংবাদিকদের জানান , এই ঘুসের টাকা গ্রহণ করেছে মঞ্জুরের স্ত্রী ।৩৮নং চন্ডিদাশদী চরকান্দার জাকির মোল্যা বলেন, (পিতা- মৃত মতলব মোল্যা)  রেল অধিগ্রহণে জায়গার চেক হাতে পেতে মঞ্জুরকে নগদ ঘুস দিতে হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি জানান, আরও ২টি জায়গার চেক পেতে টাকা দিতে হয়েছে।৩৮নং চন্ডিদাশদী চরকান্দার জয়নাল বলেন, (পিতা- মৃত কাদের মোল্যা) রেল অধিগ্রহণে  জায়গার মূল্য পেয়েছেন ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ জন্য মঞ্জুরকে ঘুস দিতে হয়েছে নগদ ১০ লক্ষ টাকা। এই টাকা হাতে ছিলো না। সুদ করে এনে দিতে  হয়েছে তাকে। পরে সুদসহ ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে।  জয়নাল সাংবাদিকদের আরও জানান, এই ঘুসের ১০ লাখ টাকা নেওয়ার সময় আমাদেরকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিসি টিভির আওতার বাইরে একটা চায়ের দোকানে নিয়ে সেখানে টাকা লেনদেন করা হয়।৩৮নং চন্ডিদাশদী চরকান্দা  আলগী ইউনিয়নের  খোকন বলেন , রেল অধিগ্রহণের জায়গার মূল্য পেয়েছেন ১৮ লাখ টাকা । এ জন্য মঞ্জুরকে ঘুস দিতে হয়েছে নগদ ১ লক্ষ টাকা। তিনি আরও জানান, আমার জমির চেক পেতে তিনি ঘুস চেয়েছিলেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আমি তার বাসায় গিয়ে পরিবারের হাতে ১ লাখ টাকা দিয়ে আসি।

৩৮নং চন্ডিদাশদী চরকান্দা  আলগী ইউনিয়নের  হিরু শিকদার বলেন , রেল অধিগ্রহণে জায়গা , গাছগাছালি ও ঘর-বাড়িসহ মূল্য পেয়েছেন ২৮ লাখ টাকা । এ জন্য মঞ্জুরকে ঘুস দিতে হয়েছে নগদ ১ লক্ষ টাকা। তিনি আরও জানান, আমার জমির চেক পেতে তিনি ঘুস চেয়েছিলেন ২ লাখ টাকা। আমি সব টাকা ম্যানেজ করতে পারি নাই ফলে চুপচাপ ছিলাম। ঘটনার ১ মাস পর আমাকে মঞ্জু ফোন করে বলে চেক নেবেন কি না। আমি তখন তার হাতে পায়ে ধরে ১ লাখ টাকা পরিশোধ করে চেক নেই।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের অনেকেই তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে । কারণ হিসেবে তারা জানান , আমরা যাই টাকা দেই সেটা দেওয়ার পর আমাদের কড়া ভাষায় বলে দেয়, কাউকেই যেনো ঘুসের বিষয়টি না জানাই। জানালে জমির সমস্যা দেখিয়ে চেক আটকে দেবে। এমনকি আমাদের কসম খাইয়ে লেনদেন করেছে। তাই বিস্তারিত বলতে পারব না।এ বিষয়ে মঞ্জুর  সাংবাদিকদের জানান, আমার এই কাজে কোন সমস্যাই নেই। আমি কোন বক্তব্য দিতে পারব না। আপনাদের যদি এ বিষয়ে কিছু বলার থাকে তাহলে জেলা প্রশাসককে বলেন।এ বিষয়ে এস এম ইমাম রাজী টুলু , ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও সহকারী পরিচালক  সাংবাদিকদের জানান, আমি ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত না। আপনারা এ বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবগত করেন।

সার্ভেয়ার এম মঞ্জুরের বাড়ি বরিশালের পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নে । সেখানে সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী অনেকের সাথে কথা হলে তারা জানান ,মঞ্জুরের পারিবারিক অবস্থা তেমন সচ্ছল ছিলো না। কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে তাদের আর্থিক সচ্ছলতা চোখে পড়ার মত। মঞ্জুরের এই ঘুস বাণিজ্যের সাথে তার স্ত্রী ও অতপ্রতভাবে জড়িয়ে পড়েছে বলে তদন্তে পাওয়া যায়।সার্ভেয়ার এম মঞ্জুর দুর্নীতির কারণেই অনেক সম্পদের মালিক। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করে সমাজসচেতন মহল।

আলোকিত প্রতিদিন // আতারা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here