আবু বকর সিদ্দিক :
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় সিএনজি পরিচালনা ও দেখভাল করার নামে ক্যারানি হাবিব তার আপন দুই ছেলে সজীব ও কালামসহ ফারুক ও কেটুকে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে চলেছেন। সরেজমিনে কান্দিরপাড় সিএনজি ইস্টার্নে দেখা যায় ক্যারানি হাবিবের লোকজন হাতে লাঠি নিয়ে প্রত্যেক সিএনজি হতে দৈনিক গড়ে ৪০ টাকা করে অবৈধভাবে আদায় করে থাকেন প্রতি নিয়ত।
এ ব্যাপারে ক্যারানি হাবিব এর ছেলে লাইনম্যান সজীব বলেন, আমরা প্রত্যেক সিএনজি গাড়ি হতে দৈনিক ৪০ টাকা করে আদায় করে থাকি এবং আমাদের অফিসকে দিন শেষে টাকা বুঝিয়ে দেয়।
অফিস সম্পর্কে জানতে চাইলে সজীব বলেন, আমাদের সংগঠনের অফিস টমছমব্রিজ এলাকায়। যা পরিচালনা করেন আলম হাওলাদার। আমরা ইস্টার্নে যত জন আছি প্রত্যেকেই কর্মচারী এবং বেতনভুক্ত। দৈনিক ৭০০-৮০০ গাড়ি হতে দৈনিক টাকা আদায় করে সংগঠনকে দৈনিক কত টাকা করে দেওয়া হয় এবং কি করা হয় জানতে চাইলে সজীব বলেন, ইস্টার্নে দৈনিক প্রায় ৪০০ মতো সিএনজি গাড়ি আছে এবং সংগঠনকে দৈনিক ৫,০০০/- টাকা দেয়। আদায়কৃত অবশিষ্ট টাকা কোন কাজে ব্যায় করা হয় বা কে নেন জানতে চাইলে সজীব বলেন, অবশিষ্ট টাকা লাইনম্যানদের বেতন ও বিভিন্ন জায়গাই খরচ করা হয়। ক্যারানী হাবিব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাবিব আমার বাবা আর ইস্টার্নে থাকা লাইনম্যান টাকা আদায়কারী কালাম আমার ছোট ভাই। সবুজ, ফারুক আর কেটু এই তিনজন কর্মচারী এর বাইরে আর কিছু বলতে পারবো না। যদি আপনার কিছু জানার থাকে তবে অফিসে আসতে পারেন।
এ দিকে ক্যারানি হাবিব এর কাছে মুঠোফোনে ৭০০- ৮০০ গাড়ি থেকে টাকা আদায় করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তনি বলেন, কান্দির পাড় থেকে দৈনিক প্রায় ৩০০ সিএনজি হতে টাকা আদায় করা হয়। সংগঠনের নিয়ম অনুসারে ৩০ টাকা ও ১০ টাকা কর্মচারীর বেতন ও অন্যান্য খরচ বাবদ অর্থাৎ ৪০ টাকা নেওয়া হয়। কান্দিরপাড় হতে শানসগাছা রোডে কেটু ও ফারুক নামে দুইজনকে দিয়ে কোন প্রকার টাকা আদায় করার কোন নিয়ম বা বৈধতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোন উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারেননি তবে তিনি স্বীকার করেছেন সেটি অবৈধ।
ক্যারানি হাবিব এর বাসা কুমিল্লা নগরীর গোবিন্দপুর রেল গেইট সংলগ্ন এলাকায়। তিনি ইস্টার্নে সরাসরি উপস্থিত কখনো না থাকলেও তার ছেলেদের ও কর্মচারিদের দিয়ে প্রতি নিয়ত সিএনজি চালকদের হুমকি ধামকি ও ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেই চলেছেন দিনের পর দিন ক্যারানি হাবিব। তবে নেই কোন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি।
এ ব্যাপারে সংগঠনটির নেতা আলম হাওলাদার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কান্দিরপাড়ে ক্যারানী হাবিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে হাবিবকে বলা আছে এবং সংগঠনের নিয়ম আছে ৩০ টাকা প্রতি গাড়ি থেকে আদায় করার জন্য। হাবিব সংগঠনকে দৈনিক ৫ হাজার টাকা দেয় যা ১৬৬ গাড়ির টাকা। যা একমাত্র সংগঠনের নিয়ম অনুসারে সংগঠনের কাজেই ব্যায় করা হয়। এর বাইরে সে কি করেন না করেন আমরা সংগঠন কিছুই বলতে পারবো না। হাবিব ইস্টার্নে না এসে বাসায় বসে থেকে লোক দিয়ে কি করেন না করেন আমরা কিছুই জানি না তবে কান্দিরপাড় থেকে শাসনগাছা রোডে কোন প্রকার টাকা আদায় করার বৈধতা নেই বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কুমিল্লার টিআই ইন্সপেক্টর ইমদাদ এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ নজরদারি রেখেছি। কয়েকদিন আগে একজনকে আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাবিবকে কয়েকবার বলেছি আর এ ধরনের কোন কার্যক্রম না করতে। যদি এমনটা এখনো করে তবে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মহোদয় যথেষ্ট আন্তরিক এবং কঠোর অবস্থানে।
টমছমব্রিজ এলাকায় রাস্তার ওপরে পূনরায় বসানো বিভিন্ন টম দোকান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগে অভিযান পরিচালনা করে উচ্ছেদ করা হয়েছিল তবে কয়েকদিন আগে আমি সেখানে গিয়ে কয়েকটি দোকান উঠিয়ে দিয়েছি। তবে সিটি কর্পোরেশন এগিয়ে আসলে আমরা অবশ্যই তাদের সাথে কাজ করবো। পুলিশ সুপার মহোদয়ের পরিকল্পনা রয়েছে টমছম ব্রিজ এলাকাকে নিয়ে, তবে আশা করি আগের থেকে সামনের দিনে ভালো কিছু আসছে।
চকবাজার ও শাসনগাছা ব্রিজের যানজট নিরসনের ব্যাপারে ইন্সপেক্টর বলেন, বাজার কমিটির দায়িত্বশীলদের নিয়ে বসেছিলাম, আগের চেয়ে এখন অনেকটাই যানজট নিয়ন্ত্রণে আছে। তবুও আমারা আরো ভালো কিছু করতে চাই। আমরা কুমিল্লাকে অবশ্যই সম্পৃর্ণ যানজট মুক্ত এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর এ জন্য সাধারণ মানুষদের আইন মানার প্রবনতা অবশ্যই বাড়াতে হবে আর অন্যদিকে রাস্তা সংস্করণ ও ইস্টার্ন নির্ধারণ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন সবাই এক সাথে এগিয়ে না আসলে একার পক্ষে সবকিছু সম্ভব না।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৭ অক্টোবর, ২০২১/ দ ম দ