সাইট ভিজিটের নাম ভাঙ্গিয়ে উৎকোচ আদায়

0
287
মোহাম্মদ জুবাইর:
বেঁচে থাকার জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই অবশ্যই প্রয়োজন। প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন একটি সুন্দর বাড়ি হবে, সেই স্বপ্ন নিমিষেই দুঃস্বপ্ন হয়ে যায় সমাজে কিছু অসাধু মানুষের জন্য। যেই মানুষগুলো বসে আছে সরকারি দপ্তর গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায় তাও আবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে। চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর সিডিএ, যেখানে প্রতিদিন ভেঙ্গে যাচ্ছে বহু মানুষের স্বপ্ন।
 সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান মন্ত্রণালয়কে ভূলতথ্য দিয়ে অথরাইজড অফিসার- পদটি ভাগিয়ে নেয় সিডিএর কথেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে। সিডিএর বিধিমালা অনুযায়ী কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নিবাহী প্রকৌশলী নতুবা সরাসরি নিয়োগকৃত সহকারী অথরাইজড অফিসারকে এই পদে পদায়ন করার কথা। কিন্তু তা রহস্যজনক কারণে হয়নি।
সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৬ জানুয়ারী অথরাইজড অফিসার-১ মোহাম্মদ মন্জুর হাসান ও অথরাইজড অফিসার-২ মোহাম্মদ শামীমকে ওই পদ থেকে বদলী করার জন্য সিডিএর একটি দুর্নীতিবাজ চক্র অত্যন্ত সৎ ও  নীতিবান চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাসকে কুমন্ত্রনা দিয়ে অত্যন্ত কৌশলে নিবাহী প্রকৌশলী এ জিএম সেলিম, নিবাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফ, সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ইলিয়াছ, সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান ও সরাসরি নিয়োগকৃত সহকারী অথরাইজড অফিসার তানজীবের নাম চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করেন। মন্ত্রণালয় চউক বিধিকে উপেক্ষা করে রহস্যজনকভাবে অনভিজ্ঞ জামাতের রোকন মোহাম্মদ হাসান এবং আওয়ামীলীগ সমথিত মোঃ ইলিয়াছকে অথরাইজড অফিসার হিসাবে পদায়ন করেন।
সম্প্রতি  চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অথরাইজড ও পরিকল্পনা বিভাগের ১১ জন ইমরাত পরিদর্শককে  বদলি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ একে স্বাভাবিক বদলি বললেও সিডিএ’র একাধিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহল এটিকে নানা অনিয়মের কারণে এই বদলি করা হয়েছে বলে মনে করছেন। দুই অথরাইজড বিভাগে ১৪ জন ইমারত পরিদশক সুদীর্ঘ ১৫/২০ বছর যাবৎ একই পদে বহাল তবিয়তে থাকায় গত ১১/ ৮/ ২০২১ উল্লেখিত ১১ জনকে প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ (ভারপ্রাপ্ত) শাহীনুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত স্মারক নং সিটিপি/ অথরাইজেশন/ বিবিধ/ ১৬৮/ ২৪২ মূলে আদেশ জারী করেন। ওই আদেশ রহিত করে পুনরায় স্মারক নং সিটিপি/ অথরাইজেশন/বিবিধ/ ১৬৮/২৪৪ মূলে বদলি করেন।  দুর্নীতিবাজ অথরাইজড অফিসার সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান এই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ওই বিভাগে চাকুরীরত ইমারত পরিদর্শকদের অবমুক্তি দিচ্ছে না। কিন্তু অথরাইজড অফিসার-১ মোঃ ইলিয়াছ তার অধীনে চাকুরীরত ইমারত পরিদর্শকদের অবমুক্তি দিয়ে দেওয়ায় তিনি দপ্তর চালাতে হিমসিম খাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, চাঁদাবাজ ইমারত পরিদশক মোঃ আবু তাহেরকে দিয়ে ওই দুর্নীতিবাজ অথরাইজড অফিসার সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তার এলেকায় ব্যতয়কৃত ইমারতের মালিকদের হুমকি দিয়ে উৎকোচ আদায় করছে। এই চাঁদাবাজ আবু তাহের তৎকালীন চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ আখতার উদ্দীনের আমলেও বহু মাস সাসপেন্ড অবস্থায় ছিল। সিডিএ’র স্থাপনা (ভবন) পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।  সিডিএ’র অথরাইজড বিভাগের উদাসীনতা ও সহযোগিতায় নকশা বহির্ভূত ও অনুমোদনহীন ভবন নির্মিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়াও অনুমোদিত নক্শার ব্যতয় ঘটিয়ে অহরহ নির্মিত হচ্ছে ভবন। চাঁদাবাজ ইমারত পরিদশক মোঃ আবু তাহেরকে দিয়ে ওই দুর্নীতিবাজ অথরাইজড অফিসার সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান বিনা উৎকোচে কোন নক্শায় স্বাক্ষর করে না। উৎকোচ না দিলে বিসি কেইচ নথিতে অধিকতর তদন্ত, সাইট ভিজিটসহ বিভিন্ন ন্কতা সৃষ্টি করে নক্শা মালিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানী করছে। সাবেক অথরাইজড অফিসারগন ৩ থেকে ৬ তলা নক্শা নিয়মমাফিক স্বাক্ষর করত কিন্তু এখন তাকে উৎকোচ দিলে নথি স্বাক্ষর হয়, না দিলে স্বাক্ষর হয় না। চউকের বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিইচ্ছুক কর্মকর্তা ও সিবিএর নেতারা এ প্রতিবেদককে বলেন, অথরাইজড অফিসার  মোহাম্মদ হাসানের দুর্নীতি, অনিয়ম ও প্রকাশ্যে উৎকোচ গ্রহনের কারনে চউকের দীঘদিনের অজিত সুনাম ও সৎ ন্যায়পরায়ন চেয়ারম্যানের ভাবমূর্তি নষ্ট হউক তা আমরা চাই না। তাকে অবিলম্বে এই পদ থেকে প্রত্যাহার করার জন্য চেয়ারম্যান ও সচিব মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুছ সালামের আমলে ৫ ইমরাত পরিদর্শককে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে ডিপিসির মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছিল। তারা হলেন, এএসএম মিজান, মো. তোফায়েল ,  মো. আবদুুর রশিদ, সৈকত চন্দ্র পাল ও কামরুল হক চৌধূরী। তারা সে সময়ে যথাযত কর্তৃপক্ষের নিকট যোগদান ও করেছিল। কিন্তু কথেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা  তাদেরকে  অফিস আদেশ রহিত না করে মৌখিকভাবে ইমরাত পরিদর্শক হিসাবে কাজ পরিচালনার আদেশ প্রধান করে। যা রীতিমতো বিধিবহিভূত। এই ৫ জন এখনো ইমরাত পরিদর্শক হিসাবে বহাল তবিয়তে।
সূত্রে জানা গেছে, গত  ১১ আগস্ট বুধবার স্মারক নংসিটিপি/ অথরাইজেশন/ বিবিধ/ ১৬৮/ ২৪২ মূলে সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই বদলির আদেশ জারি করা হয়। ওই আদেশে ৫ জন ইমরাত পরিদর্শক এবং ৩ জন ড্রাসম্যানকে বদলি করা হয়েছিল। তারা হলেন,মো. কামরুল হক চৌধূরী,  স্বপন চন্দ্র ভৌমিক, গৌরাঙ্গ চন্দ্র পাল, মো. জাফর ইকবাল, মো. তোফায়েল  এবং নক্সাবিদ নওশের গণি, মানিক চন্দ্র ভৌমিক এবং স্বদেশ বড়ুয়া। কিন্তু অথরাইজড-২ এর চাঁদাবাজ ইমরাত পরিদর্শক আবু তাহের ও মিজান বদলি না করায় বদলি রহিত করা হয়। পরে চউকের দুই সিবিএ এ বদলির বিরুদ্ধে  আপত্তি জানালে চলতি মাসের গত ২৪ আগস্ট মঙ্গলবার ওই ২ জনসহ পুনরায় ১১ তারিখের বদলি আদেশ রহিত করে ১১ জনকে স্মারক নং সিটিপি/ অথরাইজেশন/বিবিধ/ ১৬৮/২৪৪ মূলে বদলি করেন। এছাড়াও  গত বছরের সেপ্টম্বরে পাঁচ বিল্ডিং ইন্সপেক্টরকে বদলি করা হয়েছিল।
সিডিএ’র অথরাইজড বিভাগের তথ্যমতে, অথরাইজড বিভাগে দুইজন অফিসারের তত্ত্বাবধানে চারজন সহকারী অথরাইজড অফিসার ও ১৪ জন ইন্সপেক্টর রয়েছেন। অথরাইজড-১ এ সাতজন ইন্সপেক্টর ও অথরাইজড-২ এ সাতজন ইন্সনপেক্টর রয়েছেন। বদলিকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন, অথরাইজ বিভাগ-২ এর ইমরাত পরিদর্শক মো. আবু তাহের, মো. আবদুুর রশিদ, মো. কামরুল ইসলাম এবং স্বপন চন্দ্র ভৌমিককে অথরাইজড বিভাগ-১ এর ইমরাত পরিদর্শক হিসেবে বদলি করা হয়েছে। একইভাবে অথরাইজ বিভাগ-১ এর ইমরাত পরিদর্শক গৌরাঙ্গ চন্দ্র পাল, মো. জাফর ইকবাল, মো. তোফায়েল হোসেন, এএসএম মিজানকে অথরাইজড বিভাগ-২ এর ইমরাত পরিদর্শক হিসেবে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া অথরাইজড বিভাগ-১ এর নকশাবিদ মানিক চন্দ্র ভৌমিককে বর্তমান দায়িত্বে রেখেই নকশাবিদ হিসেবে নগর পরিকল্পনাবিদ-২ এর অধীনে মূল দায়িত্ব প্রদান করা হয়। নকশাবিদ স্বদেশ বড়ুয়াকে ঊর্ধ্বতন স্থপতির অধীনে থেকেই নকশাবিদ হিসেবে নগর পরিকল্পনাবিদ-১ এর দপ্তরে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদ-২ এ কর্মরত নকশাবিদ মো. নওশের গণিকে ইমরাত পরিদর্শক হিসেবে অথরাইজড বিভাগ-১ এর অধীনে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু ইমরাত পরিদর্শক চাঁদাবাজ আবু তাহেরের মাধ্যমে ব্যতয়কৃত ভবন থেকে উৎকোচ আদায়, না দিলে বিসিএন কেইচ ফাইলসহ ভবন মালিকদের নিয়মিত হয়রানী করছে। যা তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। তার ফলশ্রুতিতে ইমরাত পরিদর্শক আবু তাহেরকে বদলীর আদেশ উপেক্ষা করে অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ হাসান অবমুক্তি দিচ্ছে না।
দুর্নীতির অভিযোগে বদলি বিষয়টি নিশ্চিত করে সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ণে দুর্নীতি ও অনিয়মের হওয়ায় এই ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি করা হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। এটি একটি স্বাভাবিক বদলি প্রক্রিয়া। তাছাড়া, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা রয়েছে একইস্থানে যাতে ৩ বছরের বেশি সময় ধরে না রাখা হয় বলেও জানান তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৭ অক্টোবর, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here