মুক্তাগাছায় সম্ভাবনাময় আগর বৃক্ষ

0
572

রিপন সারওয়ার 

মুক্তাগাছায় সম্ভাবনাময় মূল্যবান আগর বৃক্ষ। আগর মূলত একটি গাছের নাম। আগর শব্দের আভিধানিক অর্থ উৎকৃষ্ট বা সুগন্ধবিশিষ্ট কাঠ। ইংরেজীতে এর নাম Aloe Wood বা Wagle Wood, আরবিতে বলে উদ্, দক্ষিণ এশিয়া পরিচিত নাম গাডরউদ্, মালয়েশিয়ান ভাষায় গাহারু, হারবাল ইউনানি চিকিৎসায় এর নাম উদ্হিন্দ এবং আয়ুর্বেদিক ভাষায় অগুরু বলে পরিচিতি ও সমাদৃত। বাংলা আরবি এবং ফারসি সহ বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণে অপভ্রংশ হয়ে আগর নামটির উৎপত্তি হয়েছে। পৃথিবীতে কবে কোথায় আগর আতরের চাষাবাদ শুরু হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস বের করা মুশকিল। তবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আদি স্থান হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।মধুপুর বনাঞ্চলের মুক্তাগাছার রসুলপুর পাহাড়ী অঞ্চলে এ আগর গাছের সারি সারি বাগান লক্ষ করা যায়, যা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। আগর গাছগুলো দেখতে অনেকটা শাল বা গজারি গাছের মত। এ গাছের পাতা দেখতে অনেকটা লিচু ও বকুল গাছের পাতার মত। আগর গাছের কাঠ খুবই নরম। এ কাঠ মূল্যবান আতর উৎপাদনের প্রদান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।বিগত ২০১০-১১ সিজেনে বন বিভাগ আগর বনায়নের প্রকল্প হতে নেয়। রসুলপুর বনাঞ্চলে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে ১৫৭ জন উপকারভোগীকে আগর বাগানের আওতায় নিয়ে আসা হয়।আগর চাষ দারুণ লাভ জনক। এর কাঠ বিশেষ কায়দায় খন্ড বিখন্ড করে প্রসেসিংয়ের পর এর নির্যাস বাষ্পীভবন ও শীতলীকরণের মাধ্যমে দামি সুগন্ধি আতর, ঔষধ, সাবান, শ্যাম্পু, পারফিউম এবং অবশিষ্ট অংশ আগরবাতি বানানোর কাজে ব্যবহৃত হবে। তবে গাছগুলো পরিপক্ক ও কষ বের হওয়ার উপযুক্ত হলে আগরচাষী বাগান মালিকদের ভাগ্য বদলে যাবে বলে জানা যায়।

মুক্তাগাছার রসুলপুর বনাঞ্চলের মাটি আগর চাষের উপযোগী। অন্যান্য গাছের তুলনায় আগর গাছের বাগান করা সহজ। খরচ তুলনামূলক ভাবে কম এবং লাভজনক। এক কেজি আগর আতরের দাম ৫ লাক্ষ টাকার বেশি। এক কেজি কালো কাঠের দাম প্রায় ২ লাক্ষ টাকার অধিক। একটি আগর কাঠ সমৃদ্ধ প্রাপ্ত বয়স্ক গাছের মূল্য ১০ থেকে বিশ লক্ষ টাকার বেশি হতে পারে।প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছগাছালি রোপনের পর স্বাভাবিকভাবে তা বেড়ে উঠলেও আগর গাছের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা। এ গাছ রোপনের পাঁচ বছরের মাথায় পুরো গাছে এক ইঞ্চি পর পর পেরেক মারা হয়। তখন গাছ থেকে এক ধরনের কষ বের হয়। পেরেক লাগানোর নির্দিষ্ট স্থানের চারপাশে সেই কষ জমে ঘাড় কালো রং ধারণ করে। সেই কালো রংয়ের কষ টুকুই হলো আতরের মূল্যবান উপাদান। এরপর ছোট ফালি করে কাটার পর আগের সব পেরেক খোলা হয়। তখন গাছের কালো ও সাদা অংশ আলাদা করা হয়। সেই কাঠ কারখানার নিয়ে পানিতে প্রায় দেড় মাস বেজানো হয়। তারপর বড় পাত্রে এগুলো জাল দেওয়া হয়। তখন পাতন পদ্ধতিতে ফোটায় ফোটায় আতর নির্দিষ্ট পাত্রে জমা হয়। সেগুলো আবার পক্রিয়াজাতকরণ করে ভাগ করা হয় ভিন্ন ভিন্ন কোয়ালিটিতে। তারপর বোতল জাত করে পাঠানো হয় মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে।

রসুলপুর বনাঞ্চলের ভিট কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, আগর গাছ অতি মূল্যবান কাঠ এবং এ গাছ থেকে মূল্যবান আতর তৈরি করা হয়। রসুলপুর বনাঞ্চলের প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে ১৫৭ জন উপকার ভোগীকে আগর বাগানের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এ আগর গাছের আবর্তকাল ২০ বছর। এ গাছ পরিপক্ক ও আতর উৎপানের উপযুক্ত হলে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে উপকারভোগীদের মাঝে এ অর্থ প্রদান করা হবে।উপকারভোগী আগরচাষী নওশের আলী আকন্দ জানান, বনবিভাগের লোকজন আমাদের উৎসাহ দিয়েছে আগর বাগান করার জন্য এবং এতে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে আমরা এ আগর গাছের দ্বারা লাভবান হতে পারবো। এ দামি আগর বাগান করার পেছনে বনবিভাগের কর্মরত, কর্মকর্তাদের ভূমিকা অনেক তাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।আগর একটি পরিবেশবান্ধব শিল্প। আগর-আতর শিল্পের বিকাশে এ শিল্পকে ঢেলে সাজাতে সঠিক পরিকল্পনা, পলিসি, উদ্যোগ ও উদ্যেগের যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন এ শিল্পসংশিষ্টরা। এতে লাভবান হবে দেশ ও আগর চাষীরা।

আলোকিত প্রতিদিন // আতারা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here