প্রতিনিধি,সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৩নং বেকারী ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসলে শুধু স্বর্ণমুদ্রা আর মানব পাচারে জড়িত ছিলেন না, রীতিমত অস্ত্র চোরাচালানের তালিকায় নাম আছে তার। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৩নং বৈকারী ইউনিয়নের বৈকারী গ্রামের প্রয়াত রুহুল আমিন সরদার ওরফে রয়েল সরদারের ছেলে। রুহুল আমিন সরদার তার জীবন দর্শায় একজন কৃষক ছিলেন। তার ছেলে আসাদুজ্জামান পৈত্রিক সূত্রে মাত্র ২ শতক জমি প্রাপ্ত হন। তিনি খাস জমিতে দু’চালা ঘর বেঁধে পরিরার-পরিজন নিয়ে সেখানে বসবাস করতেন। এক পর্যায়ে তিনি চোরাকারবারী অর্থাৎ কালো জগতে প্রবেশ করেন। এসময়ে তিনি তার আপন ভাই আতাউর রহমান ও তার চাচাতো ভাই সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামের প্রয়াত রমজান সরদারের ছেলে মো. মফিজুল ইসলামকে দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে দেদারসে স্বর্ণমুদ্রা তথা সোনার বিস্কুট পাচার করতেন বলে স্থানীয় ও একাধিক মামলা সূত্রে প্রকাশ পায়।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে স্বর্ণ পাচারকালে আসাদুজ্জামানের আপন ভাই আতাউর রহমান ১২ পিছ স্বর্ণের বার পাচারকালে ধৃত হয়। ( সাতক্ষীরা থানায় মামলা নং-৬৯ তারিখ-২৮.০৫.২০১৬)।এবং তার আপন চাচাতো ভাই মফিজুল ইসলাম প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৭পিছ স্বর্ণেরবার বিস্কুট পাচারকালে ধৃত হয়। ( সাতক্ষীরা থানায় মামলা নং-জি/আর ৯২৭/১৭ তারিখ-২৯.১১.২০১৭) ।
চলতি বছরের ১লা জুন ঢাকা হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা হয়। ঐ মামলায় গ্রেফতারকৃত সাতক্ষীরার আমিরুল ও আরেক আসামি মেহেদী হাসান ওরফে বাবু মানব পাচারের ঘটনায় বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে মানব পাচারের সাথে জড়িত সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৩নং বৈকারী ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ও তার নিজ ছেলে ইনজামামুল হক ইনজা, পালিত ছেলে আব্দুস সালাম, হৃদয় বাবু ওরফে টিকটক বাবুসহ অন্যান্য সহযোগীদের নাম।
এদিকে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশে হরহামেশা চোরাচালানের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র ঢুকছে এবং এসব অস্ত্র দিয়ে দেশজুড়ে সন্ত্রাসীরা গড়ে তুলেছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। গত ইংরেজী ২০১৪ সালের অক্টোবরে সরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ে তৎকালীন পাঠানো এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানাযায়। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশে অস্ত্র চোরা কারবারীর সংখ্যা ৪০৪ জন। এঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কতিপয় ব্যক্তিরা জড়িত আছে। অস্ত্র চোরাকারবারীর নেপথ্যে রয়েছে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নামধারী গডফাদারের নাম। সন্ত্রাসী গডফাদারদের নাম, ঠিকানা এবং পদবী সম্বলিত একটি তালিকা সংযুক্ত করা হয়। তালিকাভূক্ত জড়িত ৪০৪ জন কতিপয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) কে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়। উক্ত দাখিলকৃত প্রতিবেদনে সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলার ৩নং বৈকারী ইউনিয়নের প্রয়াত রুহুল আমিন ওরফে রয়েল সরদার এর ছেলে আসাদুজ্জামান ওরফে অসলের নাম অস্ত্র চোরাকারবারী তালিকায় আসে। উল্লেখ্য আসাদুজ্জামান ওরফে অসলে তৎকালীন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৩নং বৈকারী ইউনিয়নের ০৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন। এঘটনায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ৩নং বৈকারী ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ওরফে অসলের সাথে মুঠো ফোনে ( গতকাল বিকাল ৫.২৪ মিনিটে তার নিজ ব্যবহৃত ০১৭৩৪-৬৬২১৭৮ নম্বরে ) আলাপ কালে অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জড়িত ছিলাম কিনা প্রশাসনের কাছে শোনেন । আমি বলতে পারবো না। তিনি আরো বলেন , আপনি আমার কাছে শুনছেন কেন। স্বর্ণ মুদ্রা ও মানব পাচারে আপনার আপন ভাই আতাউর রহমান ও চাচাতো ভাই মফিজুল ইসলামকে দিয়ে ব্যবসা করতেন কিনা জানতে চাহিলে তিনি বলেন, মামলা হয়েছিল যাদের বিরুদ্ধে তারা ভালো জানে আমি বলতে পারব না। ৬/৭ বছর আগের কথা আপনি ফোন রাখেন বলে তিনি ফোন রেখে দেন।
আলোকিত প্রতিদিন // আতারা