শরিফুল ইসলাম নাঈম
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। পরিচ্ছন্নতাকে তিনি পছন্দ করেন। সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পরিচ্ছন্ন। পরিচ্ছন্নতাকে তিনি পছন্দ করেন। (জামিউস সাগীর, হাদীস নং ১৭৪২) । পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা বিভিন্ন মাধ্যমে অর্জিত হয়। একেক অঙ্গের পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার পদ্ধতি একেক রকম। সেই ধারাবাহিকতায় মুখের পবিত্রতা অর্জন হয় মেসওয়াকের মাধ্যমে। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আয়েশা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মিসওয়াক হচ্ছে মুখের পবিত্রতার মাধ্যম এবং প্রভুর সন্তুষ্টির কারণ। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৫)। মেসওয়াক শব্দটি সিওয়াক ধাতু থেকে নির্গত । সিওয়াক অর্থ মাজা, ঘষা। শরয়ী পরিভাষানুযায়ী মেসওয়াক হচ্ছে, গাছের এমন ডাল বা শিকড় যা দিয়ে দাঁত মাজা হয়। তবে সরাসরি দাঁত মাজাকেও মেসওয়াক বলা যায়। এর অনেক গুরুত্ব ও উপকারিতা রয়েছে। মেসওয়াকের গুরুত্ব: হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনে রাতে যখনি ঘুম থেকে উঠতেন; ওযুর আগে মেসওয়াক করতেন। (সুনানে আবী দাউদ, হাদীস নং ৫৭, মুসনাদে আহমদ হা. নং ২৫২৭৩)। হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাতে ঘুমানোর আগে রাতের নামাজের জন্য জাগ্রত হলে তখন ওয়াক্তিয়া নামাজে যাওয়ার পূর্বে মেসওয়াক করতেন। বর্ণনা কারী বলেন, আমি তাকে বললাম, (মেসওয়াকের আধিক্যের কারণে) আমার তো আপনার উপর দয়া হচ্ছে! তখন জাবের রা. বললেন, উসামা আমাকে সংবাদ দিয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে মেসওয়াক করতেন। (তাই আমিও করি।)।[তালখীসুল হাবীর ১/১০১]। অন্যত্র হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই ঘরে আসতেন তখনই সর্বপ্রথম মেসওয়াক করতেন। (সহীহুল জামি’, হাদীস নং ৪৭১৭)। আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর সময় শিয়রে মেসওয়াক রাখতেন। ঘুম থেকে ওঠে প্রথমেই মেসওয়াক করতেন। (জামিউস সাগীর হা:নং ২৯০১)। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেসওয়াকের ব্যপারে এত বেশি আলোচনা করতেন যে, আমাদের আশংকা এ বিষয়ে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়ে যাবে! (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/২২৬)। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; যদি উম্মতের জন্য কষ্টকর হয়ে যাওয়ার আশংকা আমি না করতাম তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের পূর্বে মেসওয়াকের আদেশ দিতাম। (সহীহ বুখারী, হা. নং ৭২৪, সহীহ মুসলিম হা. নং ২৫২)। আমের ইবনে রবীআ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রোযা থাকাবস্থায় অগণিত মেসওয়াক করতে দেখেছি। (তালখীসুল হাবীর ১/৯১) । মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেসওয়াকের আমল করেছেন। (মুজামুল আওসাত ৭/৭১)। উল্লেখিত হাদীসগুলো থেকে মেসওয়াকের অপরিসীম গুরুত্ব দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে উঠে। মেসওয়াকের উপকারিতা: হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; যে নামাজের পূর্বে মেসওয়াক করা হয় সে নামাজ অন্য নামাজ থেকে সত্তরগুণ শ্রেষ্ঠ। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/১০৬৬)। এছাড়াও মেসওয়াক করলে মুখ পরিষ্কার থাকে। স্মৃতিশক্তি বাড়ে। মন প্রফুল্ল হয়। হজম শক্তি বাড়ে। ফেরেশতারা মেসওয়াককারীর সাথে মুসাফাহা করেন। দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়। চুলের গোড়া মজবুত হয়। মৃত্যুর আগে কালিমা নসীব হয়। সহজ মৃত্যু নসীব হয়। এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে মেসওয়াক করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিয়মিত এই মেসওয়াকের আমল করার তাওফীক দান করুন।
লেখক: মুদাররিস, এরাবিক মডেল মাদ্রাসা, উত্তরা, ঢাকা।
আলোকিত প্রতিদিন // আতারা