নাহিদ হাসান
বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে এক মায়্যিতের একাধিক জানাযা পড়তে দেখা যায়। অনেকেই এটাকে প্রভাব ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে মনে করেন। বিশেষ করে আমাদের সমাজের এলিট শ্রেণীর লোকেরা যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন তার এক জানাযা শহরে, আরেক জানাযা গ্রামে এইভাবে করতে করতে একাধিক জানাযা হয়ে যায়। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত করে একাধিক জানাযা পড়ার মাধ্যমে মায়্যিতকে কষ্ট দেওয়া হয়। অতচ রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে এর প্রচলন ছিল না। তাই আসুন জেনে নেই একাধিক জানাযার শরয়ী বিধান কী এবং কখন একাধিক জানাযা পড়া যাবে। যদি ওলীর (অবিভাবক) অনুমতি সাপেক্ষে জানাযা পড়া হয় তাহলে দ্বিতীয়বার জানাযার নামাজ পড়া জায়েয নেই। তবে যদি ওলীর অনুমতি ব্যতীত কেউ জানাযার নামাজ পড়ে নেয় তাহলে শুধুমাত্র ওলী জানাযা পুনরাবৃত্তি করার অধিকার রাখে। এই সুরতে যারা প্রথম জানাযায় অংশগ্রহণ করে নাই তারা দ্বিতীয় জানাযায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। আর যারা প্রথম জানাযায় অংশগ্রহণ করেছিলে তারা ওলীর সাথে দ্বিতীয় জানাযায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তেমনিভাবে কেউ যদি অন্যদেশে মৃত্যুবরণ করে এবং সেখানকার লোকজন ওলীর অনুমতি ব্যতীত ঐ দেশে জানাযা পড়ে নেয় তাহলে লাশ দেশে আনার পর ওলী দ্বিতীয়বার জানাযার নামাজ পড়তে পারবে। আর ওলীর অনুমতি নিয়ে জানাযা পড়লে দ্বিতীয়বার জানাযা পড়তে পারবে না। জানাযার নামাজ হলো ফরজে কেফায়া। কিছু সংখ্যক লোক জানাযা পড়ে নিলে ফরজিয়্যত আদায় হয়ে যায়। নির্দিষ্ট কোন ফরজ বিধান একাধিকবার আদায় হয় না। তবে নফল একাধিকবার আদায় হয়।যেমন: হজ্জ জীবনে একবার আদায় করা ফরজ। তাই কেউ একাধিকবার হজ্জ করলে প্রথমটা তার ফরজ হিসেবে আদায় হবে এবং বাকিগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে। তেমনিভাবে কেউ যদি জোহরের ফরজ একা আদায় করে নেয় এবং পরবর্তীতে ইমামের সাথে জামাতে শরীক হয়; তাহলে তার প্রথম নামাজ ফরজ হিসেবে আদায় হবে এবং ইমামের সাথে যে নামাজ পড়েছে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে জানাযার ব্যাপারটি ভিন।্ন কেননা জানাযার নামাজের নফল বিধান শরীয়তে নেই। তাই একবার জানাযা পড়ে নিলে ফরজিয়্যাত আদায় হয়ে যাবে। তাকরার করার কোন অবকাশ নেই। তবে ওলীকে যেহেতু শরীয়ত নির্দিষ্ট হক প্রদান করেছে তাই ওলীর ব্যাপারটি ভিন্ন। হাদিস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন: তোমরা জানাযাকে দ্রুত নিয়ে যাও। কেননা মৃত ব্যক্তি যদি নেককার হয় তবে তো তাকে তাঁর শুভ পরিণতির দিকেই নিয়ে যাচ্ছো। আর যদি বদকার হয় তাহলে তো তোমাদের ঘাড় থেকে আপদ সরিয়ে দিচ্ছ। (সহীহ বুখারী-১৩১৫)। এই হাদিসে কোন বিলম্ব না করে লাশ তাড়াতাড়ি দাফন করতে বলা হয়েছে। সুতরাং যদি একাধিক জানাযা পড়া হয় তাহলে লাশ দাফন করতে বিলম্ব হবে এবং এই হাদিসের উপর আমল করা সম্ভব হবে না। অপর এক হাদিসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তাকে আটকে রেখো না। তাকে দ্রুত দাফন করে দিও। (ফাতহুল বারী ৩/২১৯)।উল্লেখ্য ; কিছু বর্ণনায় রাসুল (সা.) এর দ্বিতীয়বার জানাযার নামাজ পড়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। একবার এক মহিলা সাহাবীর লাশ দাফন করার পর তাঁর কবরের সামনে রাসুল (সা.) জানাযার নামাজ পড়েছেন। (সহীহ বুখারী-৪৫৮)।এসব বর্ণনার জবাব হলো; তা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাথে খাস এবং রাসুল (সা.) এর স্বাতন্ত্রতা। কেননা তিনি সকল ওলীদের ( অবিভাবক) চেয়ে হকদার, নিকটবর্তী ও অগ্রাধিকারযোগ্য। রাসুল ( সা.) এর অনুমতি ব্যতীত এই মহিলার জানাযা পড়া হয়েছিলে, তাই কবর দেওয়ার পরেও রাসুল (সা.) দ্বিতীয়বার জানাযা পড়েছেন।
লেখক: তরুণ আলেম
আলোকিত প্রতিদিন // আতারা