এম এইচ চৌধুরী
রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী পূর্ণিমা চাকমা হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে বিচার ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার পক্ষ হতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে পার্বত্য অঞ্চলের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত করে অবৈধ অস্ত্র এবং সন্ত্রাস দমনের দাবি জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কাজী মজিবুর রহমান। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সদস্য সচিব মো. মামুনুর রশীদ মামুনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মো আলমগীর কবির, রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান, সহসভাপতি নাদিরুজ্জামান, কাজি জালোয়া হোসেন। বক্তব্য পেশ করেন মহিলা পরিষদ নেত্রী মোরশেদা আক্তার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সি. সহসভাপতি মো. হাবিব আজম, তাজুল, আমিন, শরিফা, সাইফুল, জাকির, সজীব প্রমুখ।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত (শুক্রবার) ২৯ অক্টোবর-২০২১ খ্রিস্টাব্দে রাঙামাটি জেলা সদরে প্রশাসনের নাকের ডগায় ১৯ বয়স বয়সী পূর্ণিমা চাকমা নামে এক কলেজছাত্রী স্বজাতি (চাকমা) কর্তৃক ধর্ষিত হয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
পূর্ণিমা চাকমা জেলার জুরাছড়ি উপজেলার ৪ নং দুমদুম্য ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বগাহালি এলাকার সাধন চাকমার মেয়ে। সে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ি এলাকায় এক প্রভাবশালী জেএসএস সন্তু গ্রুপের নেতার বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতেন পূর্ণিমা । তিনি যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির মালিক আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন জেএসএস (সন্তু গ্রুপের) সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান ইউং এর বেশ কয়েকজন নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশ্ববর্তীরা বলেন, বাসার মালিক কৃর্তক বারবার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল বলেও অভিযোগ করে। বর্তমানে ঐ বাসার মালিক আত্মগোপেন রয়েছে।মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পূর্ণিমা চাকমাকে যৌন হয়রানি ও একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাকে হত্যা করে তার লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এবং পরবর্তীতে ঘটনার দামাচাপা দিতে আবার চিকিৎসার জন্য রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালেও নিয়ে যায়। যা থেকে সবাই ভাববে পূর্ণিমা চাকমা আত্মতহত্যা করেছে, পরিবারের পক্ষ থেকে এমনই অভিযোগ করা হয়।এদিকে পূর্ণিমা চাকমার দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের প্রবল চাপের মুখে থাকায় প্রশাসনের কাছে বাস্তব সত্য তুলে ধরতে ভয় পাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। তারা বলেন বাংলাদেশে মানবাধিকার সংগঠনসহ যারা নারী নির্যাতনের বিষয়ে ও উপজাতিদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সবাই এখন চুপ, কেউ কোন প্রতিবাদ করেনি।মেয়েটি চাকমা সম্প্রদায়ের হওয়ায় কোন প্রকার প্রতিবাদ করেনি রাণী ইয়ান ইয়ান। সম্প্রতি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসকে বুঝিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন পিএস বিল্ডিং অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার পেয়েছেন ।পাহাড়ে যে কোনো নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত সোচ্চার বলে বাস্তবে স্বজাতি কর্তৃক কলেজছাত্রী পূর্ণিমা চাকমা হত্যার পর বিপরীত রূপ নিয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্যে তিনি যেসব অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার হন, সেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সত্যতা পাওয়ায় যায় না ।বরং বাঙালি ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রচার করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছেদ করার জন্য। চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এর বাড়ির পাশে পূর্ণিমা চাকমাসহ দুইজন কলেজছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় কোন প্রকার প্রতিবাদ জানান নি চাকমা রাজা বা তার স্ত্রী ইয়ান ইয়ান ও অন্যান্য পাহাড়ি নারীবাদী বাসন্তি চাকমা, বাঞ্ছিতা দেওয়ান, নিরুপা দেওয়ান, সুস্মিতা চাকমা, ডলি প্রু চৌধুরীর মত মানবাধিকারা। ফলে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদছে পাহাড় কোলে।বক্তরা দাবী জানিয়ে বলেন, পূর্ণিমা চাকমার লাশের সঠিক ময়নাতদন্ত করে সত্য ঘটনা উন্মোচন করুন এবং বাসার মালিক ধর্ষক ও হত্যাকারী জড়িত জেএসএস (সন্তু) সন্ত্রাসীকে দ্রুত আইনের আওতায় দৃষ্টান্ত শাস্তি দওেয়া হোক।
আলোকিত প্রতিদিন // আতারা