হেলাল আসহাব কাসেমি
জুমাবার মুসলিম জাতির ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম। ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপনের সুবর্ণ জয়ন্তী। সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ ও ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। এদিনটি প্রতিটি মুসলিমের সামনে অগণিত বারাকাহ,অফুরন্ত কল্যাণ ও সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে হাজির হয়। তাই খুব বেশি চেষ্টা ছাড়াও সদিচ্ছা ও পরকালের পাথেয় সংগ্রহের প্রেরণায় আমরা এ দিনটিকে লুফে নিতে পারি। কিন্তু আফসোস! অনেকেই এদিনের গুরুত্ব ও আমলের সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে যেমনিভাবে জুমআর ফজিলত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি, ঠিক তেমনিভাবে নিজেদের আমলনামা ভারী করার বদলে বরবাদ করে ফেলছি। তাই আজ জুমআর দিনের কিছু করণীয় ও বর্জনীয় আমল সম্পর্কে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো, ইন শা আল্লাহ।
জুমআর দিনে আমাদের করণীয়-
*পুরুষ-মহিলা সবার জন্যে সাধারণাবস্হায় জুমার দিন গোসল করা সুন্নাহ। (সহিহ বুখারি: হাদিস নং-৮৭৭)। তবে, পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে সেদিন নখ ও চুল কাটাও একটি ভালো আমল।
* জুমার সালাতের জন্য আতর- সুগন্ধি ব্যবহার করা। (সহিহ বুখারি: হাদিস নং-৮৮০)।
* মেসওয়াক করা। (সহিহ বুখারি:হাদিস নং-৮৮৭)।
* গায়ে তেল ব্যবহার করা। (সহিহ বুখারি : হাদিস নং- ৮৮৩)।
*জুমুআ’র প্রথম আজানের পর বেচাকেনা বা দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া। (উমদাতুল কারীঃ৫/৭১,যাকারিয়া)
* উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমুআ আদায় করা। (ইবনে মাজাহ : হাদিস নং-১০৯৭)।
* মুসল্লিদের জন্যে ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিজি : হাদিস নং-৫০৯,)
* মনোযোগসহকারে খুতবা শোনা ও নিশ্চুপ থাকা ওয়াজিব। (সহিহ বুখারি : হাদিস নং-৯৩৪, মুসলিম : ৮৫৭)।
* আগেভাগে মসজিদে যাওয়া। (সহিহ মুসলিম : হাদিস নং-৮৫০)
*পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করা। (আবু দাউদ : হাদিস নং-৩৪৫)।
*. জুমুআ’র দিন ফজরের নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা সিজদা আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা দাহর পড়া। (সহিহ বুখারি :হাদিস নং- ৮৯১, সহিহ মুসলিম : হাদিস নং-৮৭৯)
*জুমুআ’র সালাতে সুরায়ে জুমুআ ও মুনাফিকুন পড়া অথবা সূরা আলাক ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুমুআহ আদায় করা। (সহিহ মুসলিম : হাদিস নং-৮৭৭)
* জুমআর দিন ও রাতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। (আবু দাউদ : হাদিস নং-১০৪৭)
* এদিন বেশি বেশি দুআ করা। (সহিহ বুখারি : হাদিস নং-৯৩৫)
* খুতবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ : হাদিস নং-১১০৮)
* জুমুআ’র দিন সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুমুআ’র মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (বায়হাকি : ৩/২৪৯)
* জুমুআ’র আজান দেয়া। (সহিহ বুখারি : হাদিস নং-৯১২)
* জুমুআ’র ফরজ নাজের পূর্বে চার রাকাআত এবং ফরজ আদায়ের পর চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায় করা। (সহিহ বুখারি :হাদিস নং- ১৮২)
* অজু ভেঙে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে অজু করা। (আবু দাউদ : হাদিস নং-১১১৪)* ইমাম বা খতিব সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার আগ পর্যন্ত তাসবিহ-তাহলিল, তওবা-এস্তেগফার ও কোরআন তেলাওয়াতে রত থাকা।
জুমআর দিনে বর্জনীয় কিছু আমল
* মুসল্লিদের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদ : হাদিস নং-৩৪৩)
* জুমার আগে মসজিদে জিকির বা কোনো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ, গোল গোল হয়ে না বসা। (আবু দাউদ : হাদিস নং-১০৮৯)।
* কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ি : হাদিস নং-৭১৪)
* মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন (যার দূর্গন্ধে মানুষের কষ্ট হয়) না খাওয়া ও ধূমপান না করা। (সহিহ বুখারি : হাদিস নং-৮৫৩)
* ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদ : হাদিস নং-১১১৯)।
* ইমামের খুতবা শ্রবণকালে দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (ইবনে মাজাহ : হাদিস নং-১১৩৪)।
* ওজর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুমুআ’হ চালু না করা। আর ওজর হলে, এলাকাটি খুব বড় হওয়া, প্রচুর জনবসতি থাকা, মসজিদ দূরে হওয়া, মসজিদে জায়গা না পাওয়া বা কোনো ফেতনার ভয় থাকা। (আল মুগনি লিবনি কুদামা : ৩/২১২)
* নামাজের জন্য কোনো একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই নামাজ আদায় করা। (আবু দাউদ :হাদিস নং- ৮৬২)
* কোনো নামাজির সামনে দিয়ে না হাঁটা। (সহিহ বুখারি :হাদিস নং- ৫১০)
* এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোনো কিছু না পড়া, যাতে অন্যের নামাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদ : হাদিস নং-১৩৩২)
* যেখানে জুমার ফরজ আদায় করা হয়েছে, উত্তম হলো ঐ একই স্থানে সুন্নত না পড়া।এবং কোনো কথা না বলে পরবর্তী সুন্নত নামাজ আদায় করা। (সহিহ মুসলিম : হাদিস নং-৭১০)
* ইমাম বা খতিব সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার আগ পর্যন্ত তাসবিহ-তাহলিল, তওবা-এস্তেগফার ও কোরআন তেলাওয়াতে থাকা। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক নিয়মে যথাযথভাবে জুমুআর সালাত আদায় করার তাওফিক দান করুন।আমিন।
আলোকিত প্রতিদিন // আতারা
