মো. আহসানুল ইসলাম আমিন
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার যশলং ইউনিয়নের যশলং গ্রামের খালের উপর একটি ব্রিজের অভাবে প্রায় ৪০ বছর ধরে হাজারো মানুষ যাতায়াতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যশলং গ্রামের আবু সালাম মেম্বারের বাড়ীর খালের উপর কোন ব্রিজ না থাকায় গ্রামবাসীরা নৌকায় খাল পাড়ি দিতো। পরবর্তীতে গ্রাম বাসীরা চাঁদা তুলে কাঠের পুল নির্মাণ করেন। সেই থেকে এখনও সেই পুরানো কাঠের পুল স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করে মানুষ যাতায়াত করছেন। কাঠের পুলটি দিয়ে যশলং গ্রামের মানুষ হাটবাজার কিংবা জরুরি প্রয়োজনে টুনিসার, নৈদিঘিরপার, বায়হাল, চাপ গ্রাম, বাঘিয়া, কালিবাড়ী হয়ে টঙ্গীবাড়ী যাতায়াত করেন। গ্রামটিতে থাকা শিক্ষার্থীরা পার্শবর্তী টুনিসার এলাকার স্কুলে যাতায়াত করেন ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের পুল দিয়ে। এছাড়াও যশলং গ্রামের উত্তর দিকে চাপগ্রাম আর দক্ষিণ দিকে বাঘিয়া যাতায়াতে একমাত্র মাধ্যম প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা মাটির রাস্তা। রাস্তাটিতে প্রায় ১০বছর ধরে চলছে না কোন যানবাহন। তবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিশু, বৃদ্ধসহ গ্রামের হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ পুলটিকেই বেশি ভোগান্তি মনে করছেন। এতে প্রায় সময়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দিয়ে পার করে দিয়েছেন বছরের পর বছর। জনপ্রতিনিধিদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়া হতাশ গ্রামবাসীরা। শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে এলাকার সকল বয়সী মানুষকেই পাড়ি দিতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের পুল।স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে যশলং গ্রামের মানুষ চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের পুলটি প্রতি বছর মেরামত করেন। প্রায় ৩৫ ফুট দৈর্ঘের খালটিতে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের পুলটি পারাপারের সময় শিশু, বৃদ্ধরা থাকেন আতঙ্কে। একটু বেখেয়ালি হলেই পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং অসুস্থ রোগীদের নিয়ে জরাজীর্ণ কাঠের পুল দিয়ে পারাপার হতে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রামবাসীরা। সারাবছর গ্রাম বাসীরা কাঠের পুল আর দীর্ঘ প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন। এলাকাবাসী খালের উপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও তাদের দাবি পূরণ হয়নি আজও। বছরের পর মানুষ এভাবে চলাচল করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কোন উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খালের উপর কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে জরাজীর্ণ দুটি কাঠের পুল। বেশ কয়েকজন ব্যক্তি গ্রামবাসীদের যাতায়াত সুবিধার্থে কাঠের পুলটি মেরামত করছেন। যশলংসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন এই পুলটি যেমন নড়বড়ে তেমনি নেই কোন পর্যাপ্ত রেলিংয়ের ব্যবস্থা। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ, স্কুল শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের পুলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনা ঘটতে পারে। এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি, জরাজীর্ণ এই পুল সরিয়ে কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে।স্থানীয় জয়নাল আবেদীন বলেন, জন্মের পর থেকে আজও কাঠের পুলে যাতায়াত করে আসছি। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে এভাবেই গ্রামের বাসিন্দারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত কাঠের পুল দিয়ে পরাপার হতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা কোন দিন এসে দেখেও নাই যে,আমরা যাতায়াতে কতটা ভোগান্তিতে আছি। তিনি আরো বলেন, এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে যাতায়াতে সুবিধা পেতাম । পাশাপাশি যশলং সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করে তোলা হলেও হেঁটে চলার ভোগান্তি কমে যেত। কিন্তু এই এলাকার মানুষের ভাগ্যে ব্রিজ কিংবা রাস্তা দিয়ে গাড়িতে চলাচল আজও স্বপ্নের মতো।
স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের পুল মেরামত করা ব্যক্তি আল আমিন বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার মানুষ এই কাঠের পুলটি দিয়ে যাতায়াত করেন। সংস্কারের অভাবে পুলটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। গ্রাম থেকে চাঁদা তুলে কিছু কাঠ কিনে সংস্কার করে দিচ্ছি। সেই সাথে দুপাশে কিছু রেলিংও দিয়ে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছে দাবি- জনগুরুত্বপূর্ণ এ পুলটির জায়গায় যেন একটি কালভার্ট নির্মাণ করে দেন।যশলং ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমাস চোকদার বলেন, যশলং এলাকার সড়কটিতে প্রায় আগেও কোন যানবাহন চলাচল করেনি। কাঁচা মাটির দুটি ব্রিজে কোন গাড়ী উঠতে পারে না। তবে আমি আবার নির্বাচিত হলে কাঠের পুলটির স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণ এবং এলাকা মানুষের যাতায়াত সুবিধার্থে রাস্তাটি যান চলাচলের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করব।
আলোকিত প্রতিদিন // আতারা