যে দায়বদ্ধতা থেকে আলেমগণ নসিহা করেন

0
375

মোহাম্মদ শরীফ

রাব্বে কারীম মানবজাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য প্রত্যেক যুগে আল্লাহর নবী তথা নির্বাচিত মহামানবদেরকে শাশ্বত বিধানসহ পৃথিবীর বুকে প্রেরণ করতেন। প্রত্যেক নবীরা এসে যুগের অনুসারী উম্মাহকে দিক নির্দেশনা প্রদান করতেন। নির্দিষ্ট একসময় পর্যন্ত তারা নিজ উম্মাহকে তাওহীদ ও একত্ববাদের আহ্বান করতেন এবং শরীয়তের হুকুম আহকাম শিক্ষা দিতেন। কিন্তু মানুষ মরণশীল হওয়ায় নবীদেরকেও পান করতে হতো মৃত্যুর তিক্ত পেয়ালা। ফলে রাহবারবিহীন মুসাফিরের মতো লোকেরা দিশেহারা হয়ে পড়তো; নবীদের আনীত দীনকে ভুলে গিয়ে শিরক–বিদআত তথা নানারকম অপরাধ অপকর্মে জড়িয়ে পড়ত। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহর নবী ঈসা রুহুল্লাহ আ. পরলোকগমন করার পর দীর্ঘসময় পর্যন্ত মানবজাতি কোন মহামানব তথা নবীর দর্শন লাভ করেনি। ফলে ঈসা আলাইহিস সালামের আনীত বিধান বিকৃত হয়ে যায়, সত্য-মিথ্যার ধুলোট আবহে আড়াল হয়ে যায় পবিত্র গ্রন্থ ! সে সময় পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছিল চূড়ান্ত হিংস্রতা। জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত ছিল অনিশ্চিত–অনিরাপদ। মানুষের মতো দেখতে সে পৃথিবীতে ছিল কেবলই দু’পায়া অমানুষ, হায়েনা ও হিংস্র জন্তু দানবের বাস! সে সমাজে যারা ঐশ্বর্য ও প্রভাবশালী ছিল, পতিতজনতা ছিল তাদের অলিখিত দাস। নিরপরাধ নিষ্পাপ শিশু সন্তানদের মাটিচাপা দিত ভ্রান্ত বিশ্বাসে। সমাজকৌলিন্যের কথিত শৃঙ্খলা রক্ষায় জীবন্ত কবর দিত কন্যা সন্তানকে! লুটতরাজ ও খুন-খারাবি করা ছিল তাদের দৈনন্দিনের কাজ। মদ-জুয়া,নাচ-গান যিনা-ব্যভিচার পেশায় পরিণত হয়। বিভিন্নরকম খারাপ কাজের ঘনকালো অন্ধকারের মানুষ নিজেদের জাতিসত্তা ও হারিয়ে ফেলেছিল। মানবজাতির এমন ক্রান্তিকালে শান্তির মশাল হাতে সমস্ত মানবজাতির মুক্তির বার্তা নিয়ে আগমন করেন —সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ,রহমাতুল্লিল আলামীন ,রাসুলে আরাবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি পাপে জর্জরিত মানবজাতিকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহবান করতে থাকেন।মানুষদেরকে শিক্ষা দিতে থাকেন সভ্যতা। তিনি মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হন শিরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে। অবিরাম দাওয়াত দিতে থাকেন একত্ববাদের। প্রচার করতে থাকেন ঐশী গ্রন্থ আল-কোরআনের বিধি-বিধান। বর্বর জাতিকে নিজেদের জাতিসত্তাকে জাগ্রত করে তোলেন। নবীজির অক্লান্ত মেহনত ও আল্লাহর রহমতের ফলে—যামানার পাপিষ্ট মানুষগুলো পরিণত হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবরূপে;এমনকি পৃথিবীতেই পেয়ে যান জান্নাতের সুসংবাদ! ধূসর মরীচিকাময় পৃথিবীও সাজতে শুরু করে নবসাজে। বিদূরিত হতে থাকে জাহেলিয়াতের অন্ধকার। একসময় প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অন্যান্য নবীদের মত তাশরিফ নেন রফিকে আ’লার দরবারে। কিন্তু নববী কাজের এ–মহান দায়িত্ব অর্পিত হয় প্রত্যেক মুসলিমের উপর, বিশেষভাবে উম্মাহর অতন্দ্রপ্রহরী আলেমগণের উপর। কেননা আলেমগণ হচ্ছেন আম্বিয়াদের (আ.)ওয়ারিশ। যেমনটা হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,”নিশ্চয় আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ”। রাসূলুল্লাহ সা. সর্বশেষ নবী ও রাসূল হওয়ায় আল্লাহর পক্ষ থেকে এ—মহান দায়িত্ব অর্পিত হয় উম্মাহর উপর।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,”আমার পক্ষ থেকে একটি বাক্য হলেও পৌঁছে দাও; কেননা আমি চিরকাল থাকবো না”। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে সোয়ালক্ষ সাহাবাদের উপস্থিতিতে দীনের সর্বশেষ দিকনির্দেশনা প্রদান করে, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,”হে লোকসকল! তোমরা যারা এখানে উপস্থিত রয়েছো তারা আমার বাণীগুলো অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছে দিও”। সুতরাং উলামা হযরতগণ—দাওয়াত ও তাবলীগ, মসজিদ– মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষাদান,ওয়াজ–নসিহা ,ই’দাদ ও জিহাদ ,আইম্মায়ে কেরাম (ইমাম সাহেবগন),তাজকিয়াসহ (আত্মশুদ্ধি) নানান পদ্ধতিতে নববী দায়িত¦ আঞ্জাম দিয়ে আসছেন শুধুমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত আদায়ের লক্ষ্যে। পার্থিব কোনো ফায়দা হাসিল করার জন্য নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে — এসব সম্মানিত ওলামায়ে কেরামকে কটু বাক্য উচ্চারণ করে কথা বলা হয়। অনেকে তো এভাবে বলে যে, “এসব ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া দরকার ; কাঠমোল্লারা ওয়াজের নামে ব্যবসা খুলে নিয়েছে”! আদর্শ সমাজ গঠনে, দেশ-জাতি ও ধর্মের কল্যাণে ওলামাদের অবদান অনস্বীকার্য! যুবকদের বিশাল একটি অংশ যাদের গায়ে আজও পাশ্চাত্য কৃষ্টি-কালচারের বাতাস পর্যন্ত লাগেনি; এগুলো ওয়াজ- নসিহত ও উলামাদের মেহনতের ফসল। বিশ্ব মানচিত্রে ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ; কিন্তু এদেশে ছোটখাটো কয়েক হাজার এনজিও সংস্থা বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে কয়েক যুগ ধরে। পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে “ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির” নতুন ভার্সন হিসেবে সেবার নামে সরলমনা মুসলমানদেরকে ধর্মান্তরিত করার পাঁয়তারা করছে। আর্থিক সহযোগিতার নামে লুটে নিচ্ছে হতদরিদ্র মানুষের ঈমান! কই,এদের বিপক্ষে কাউকে তো কিছুই বলতে শুনিনি! যখন উলামাগণ নিজের খেয়ে পার্থিব জগতের সমস্ত সুখকে বিসর্জন দিয়ে দেশ-জাতি ও ধর্মের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে, এদেশের মানুষের ঈমান ও আকিদা সংরক্ষণ করছে ; তখন মানবরূপী একদল হায়না দেশ ও জাতির অতন্দ্রপ্রহরী আলেমগণকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে আদাজল খেয়ে নেমেছে। এটা বলা বাহুল্য যে, বিগত সময়ে যেমন ষড়যন্ত্রে কেউ সফল হয়নি; অদূর ভবিষ্যতেও হতে পারবে না ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে দীনের সঠিক বুঝ দান করুন!আমিন!

লেখক: শিক্ষার্থী, হাটহাজারী জামিয়া

আলোকিত প্রতিদিন // আতারা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here