নীলফামারী ,প্রতিনিধি
বিয়ে ঠিক করে যৌতুকের টাকায় সরকারি চাকুরী নেয়ার পর অন্য মেয়েকে (প্রেমিকা) বিয়ে। এমন প্রতারণার দায়ে আটক হয়ে কনের বাড়িতে বন্দি বাবা-মাসহ বর। যৌতুকের টাকা ফেরত ও ক্ষতিপূরণ দিয়ে স্বামীকে উদ্ধার করতে আসার কথা থাকলেও গত ২ দিন ধরে লাপাত্তা বউ ও আত্মীয়স্বজন। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড কয়া মিস্ত্রীপাড়ায়।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়া মিস্ত্রীপাড়ার কার্তিক চন্দ্র রায়ের বসত বাড়ির একটি ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। বার বার নক করার পর দরজা খুুুুলতেই দেখা গেল মেঝেতে প্লাস্টিকের পাটিতে বসে আছেন বর্তমান নেতাসহ তার মা-বাবা।তাদের ঘিরে খাটে ও চেয়ারে বসা আরও ৫ জন হলো মেয়ে পক্ষের লোক। ঘরে উপস্থিত মেয়ের বাবা তুলশী চন্দ্র রায় জানান, সৈয়দপুরের পার্শবতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার চম্পাতলী মাস্টারপাড়া এলাকার অমূল্য চন্দ্র রায়ের ছেলে নিতাই চন্দ্র রায়ের (২৩)সঙ্গে তার মেয়ে জয়ত্রী রানী রায়ের আশীর্বাদ ও বিয়ে রেজিস্ট্রি হয় প্রায় এক বছর আগে। সরকারি চাকরিতে টাকা লাগবে বলে বরের বাবা যৌতুক হিসেবে কনের বাবার কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা নেন। ছেলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড ডিফেন্সে ফায়ার ফাইটার হিসেবে যোগদানও করেছে। একারণে মেয়েকে বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে পণ্ডিত ডেকে বিদায়ের দিন-তারিখ ঠিক করা হয় কয়েকদিন আগে। কিন্তু বিয়ের মাত্র ১ দিন আগে শনিবার(২০নভেম্বর) সন্ধ্যায় কনের বাবার মোবাইলে ফোন করে বলা হয় ছেলে প্রতারক। সে এক সপ্তাহ আগে লালমনিরহাটে তাঁর পছন্দের মেয়েকে কোর্টে বিয়ে করেছে। এ কথা শুনে মুহূর্তে বিয়ের বাড়ির পরিবেশ পাল্টে যায়। কনের বাবাসহ আত্মীয়-স্বজন যান বরের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে তারা বিয়ের সত্যতা পান। এমতাবস্থায় কনের লোকজন বরকে জোর করে তুলে নিয়ে আসেন কনের বাড়িতে। পরে বরের বাবা মা আসেন সেখানে। তারা যৌতুকের টাকাসহ ক্ষতি পূরণের অঙ্গিকার করেন। কিন্তু ২ দিন পেরিয়ে গেলেও টাকা ম্যানেজ করতে না পারায় তাদের কে বন্দি করে রেখেছেন তারা। বিষয়টি থানা পুলিশ করলে নিজেদের সম্মানহানীর পাশাপাশি ছেলে ও ছেলের বাবার সরকারী চাকুরীর সমস্যা হবে তাই আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কনের পরিবারের অভিযোগ, বরের পরিবারের সকল শর্ত মেনে আমরা বিয়ে এবং বিদায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। খুব কষ্ট করে বরের বাবার হাতে ১১ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের মান-সম্মান এবং মেয়ে ভবিষ্যত সবই শেষ করে দিল এমন প্রতারণা করে। তবুও আমরা শুধু অর্থ ফেরত চাই। কিন্তু ছেলেটা যাকে বিয়ে করেছে সে আসছে বলে সময়ক্ষেপণ করে চলেছে। ছেলের বাবা অমূল্য চন্দ্র রায় বলেন, তিনি লালমনিরহাটে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন অধিভুক্ত মশলা উন্নয়ন ইন্সটিটিউটে কর্মরত। ছেলে ও স্ত্রী দীর্ঘদিন সেখানেই ছিল। এখন গ্রামের বাড়িতে থাকে। ছেলের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে জানতাম না। বিয়ের বিষয়েই জানিনা।
ছেলে নিতাই চন্দ্র রায় বলে, ফায়ার ফাইটার পদে মুন্সিগঞ্জের কমলহাটে কর্মরত। লালমনিরহাটের আদিতমারীর হাজিগঞ্জের প্রমিতা রানীর সাথে মোবাইল ফোনে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলঞ কিন্তু লালমনিরহাট হাট থেকে আসার পর আর যোগাযোগ হয়নি। হঠাৎ কয়েকদিন থেকে মোবাইলে কথা হয়। আর গত ১৪ নভেম্বর ঢাকার মিরপুর অফিসে অফিসিয়াল কাজে অবস্থানকালে সে সেখানে উপস্থিত হলে পরিস্থিতির কারনে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হই।বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাবুল হোসেন বলেন, বিষয়টা তারা পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে তাই আমরা হস্তক্ষেপ করিনি। সোমবার (২২ নভেম্বর) সন্ধা সাড়ে ৫ টায় সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) খায়রুল আনাম জানান, এমন কোন ঘটনা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।