পিসি দাস
সুশিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। অথচ এই শিক্ষকরাই আবার বিভিন্নভাবে অবহেলিত। বেসরকারি কলেজসমূহে বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তির কোন নির্দেশনা না থাকায় অসংখ্য শিক্ষক আজ এমপিও ভুক্ত হতে বঞ্চিত। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজসমূহে অনার্স মাস্টার্স কোর্সে বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েও শতভাগ বেতন প্রদানের নিশ্চয়তা দিলেও শিক্ষকরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারি বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন প্রদান তো দূরের কথা, প্রতিষ্ঠান তাদের খেয়ালখুশি মতোই এই বেতন প্রদান করছে; যার কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই।জনবল কাঠামো এমপিও নীতিমালা-২০২১ এ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজসমূহে অনার্স মাস্টার্স কোর্সে বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত ৫৫০০ জন শিক্ষক দীর্ঘ ২৯ বছর থেকে অদ্যাবধি দেশের উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে এবং সরকারের জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ এর অধ্যায়-০৮ কৌশল-০৬ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার কোন নির্দেশনা না থাকায় শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। ফলে ৫৫০০ শিক্ষক অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েও এই শিক্ষকগণ এমপিওভুক্ত হতে বঞ্চিত এবং এমপিওভুক্ত ও নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে বেতন কাঠামোতে বিস্তর বৈষম্য। কিন্তু অনুরূপভাবে একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ডিগ্রী (পাস) কোর্সের তৃতীয় গ্রেডের শিক্ষকগণ এমপিওভুক্তির সুযোগ পেয়েছেন।
অন্যদিকে কামিল (মাস্টার্স) শ্রেণীতে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকগণও এমপিওভূক্ত হয়েছেন। অথচ বেসরকারি কলেজ সমূহে বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত অসংখ্য শিক্ষক দীর্ঘ ২৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও এমপিওভুক্ত হতে পারেন নি। ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনায় দেশব্যাপী বেসরকারি কলেজের ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করণের দাবিতে দুইদিন ব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রথম দিনে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন কেবিএম কলেজ শাখা, দিনাজপুর-এর উদ্যোগে দুপুর ১২টায় পুলহাট কেবিএম কলেজ-এর প্রধান ফটক, শহীদ মিনার চত্বর এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা কর্নারের সামনে কর্মবিরতি, ক্লাস বর্জন ও অবস্থান ধর্মঘট করেন। এসময় বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন কেবিএম কলেজ শাখা, দিনাজপুর এর সভাপতি মোছা. ফারিয়া শারমিন মিতু, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মশিউর রহমান মানিকসহ অন্যান্য বক্তারা বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজসমূহের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েও আমরা সকল ক্ষেত্রে নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। একই ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পরেও এমপিওভুক্ত ও নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে বেতন কাঠামোর বিস্তর বৈষম্য। প্রতিষ্ঠানের শতভাগ বেতন প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করলেও প্রশাসন তাদের নিজ নিজ খেয়ালখুশি মতো বেতন প্রদান করছেন। সরকারি বেতন কাঠামো তো দূরের কথা পরিশ্রমের যদি একটি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকও থাকে, তা থেকেও আমরা বঞ্চিত।” এছাড়া বক্তারা আরও বলেন যে, “দীর্ঘ করোনাকালীন বেতন না পাওয়ার কারণে শিক্ষকরা যে কতোটা মানবেতর জীবনযাপন করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকে অভাবের তাড়নায় শিক্ষকতার মতো সম্মানিত চাকুরী করেও অটোভ্যান-রিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করতে হয়েছে। এটা আমাদের জন্য কতোটা দুঃখের ও অসহায়ত্বের, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।” তাই শিক্ষকরা শিক্ষাবান্ধব সরকারের সুযোগ্য মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে বলেন যে, শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান পাহাড়সম বৈষম্য কমিয়ে এনে প্রচলিত জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় সারাদেশের বেসরকারি কলেজসমূহে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৫০০ জন শিক্ষককে বিশেষ নির্দেশনায় অন্তর্ভুক্ত করে এমপিওভুক্তির বিষয়টি সুস্পষ্ট করলে একদিকে যেমন শিক্ষক ও ভবিষ্যত প্রজন্ম উপকৃত হবে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের বেসরকারি কলেজে শিক্ষা গ্রহণের ব্যয়ভারও অনেকাংশে হ্রাস পাবে।এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন দিনাজপুর কেবিএম কলেজ শাখার সহসভাপতি মিন্টু কুমার সরকার, সহসাধারণ সম্পাদক মল্লিকা দে, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু তাহের, প্রচার সম্পাদক মো. শফিউল আলম, কোষাধ্যক্ষ মোঃ গোলাম মোস্তফা, তথ্য, যোগাযোগ ও অনলাইন বিষয়ক সম্পাদক সুদীপ পালসহ অনার্স-মাস্টার্সের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।
আতারা //এপি