ডিমলায়  কৃষি প্রণোদনার সার ও বীজ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম

0
274

মাসুদ পারভেজ রুবেল

নীলফামারীর ডিমলায় রবি মৌসুমে সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যের বীজ ও সার বিতরণে মারাত্মক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত কৃষকরা সরকার প্রদত্ত বিনামূল্যের বীজ ও সার পাননি।জানা গেছে, ডিমলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২০২০-২১ রবি মৌসুমে সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যের বিভিন্ন ধরনের বীজ ও সার বিতরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়।প্রত্যেক কৃষককে ১০কেজি ডিএপি ও ১০কেজি এমওপি সার ও পরিমাণ মত বিভিন্ন ধরনের বীজ প্রদান করা হয়। কিন্তু প্রকৃত কৃষকরা সরকার প্রদত্ত বিনামূল্যের বীজ ও সার সঠিক ভাবে পাননি। কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণের জন্য উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ৯৪ জন কৃষকের একটি তালিকা তৈরি করে উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লোহানি শাহনেওয়াজ ও আশরাফুল হক।গত রবিবার(২৮ নভেম্বর) তালিকাভুক্ত এসব কৃষককে মাথাপিছু ২০ কেজি গমের বীজ ,১০কেজি ডিএপি সার ও ১০কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়।অভিযোগ উঠেছে তালিকাভুক্ত কৃষকদের বেশির ভাগই তালিকায় নাম আছে কিন্তু সার-বীজ, কিছুই পাননি।তালিকায় যেসব কৃষকের নাম ও মোবাইল নম্বর আছে অধিকাংশই ভূয়া ও অব্যবহৃত।তালিকায় থাকা অধিকাংশ কৃষকের মোবাইল নাম্বারের সাথে নামের কোনো মিল নেই।

সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কর্ম এলাকায় যায় না বলেও অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতারণার শিকার কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, উপজেলার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মিলে সরকারের দেয়া কৃষকদের জন্য উন্নতমানের বীজ ও সার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।মঙ্গলবার সরেজমিনে পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৩০ জন তালিকায় নাম থাকা কৃষকের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালিকায় নাম থাকলেও এদের মধ্যে কেউই কৃষি প্রণোদনার সার ও বীজ পাননি।এমনকি তালিকায় তাদের নাম আছে একথা তারা জানেন ই না।তালিকায় থাকা কৃষকদের নামের পাশে থাকা ২০ টি মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে জানা যায় তারা কেউই সার ও বীজ পাননি।অনেকেই এই উপজেলার বাসিন্দা নয়।

তালিকাভুক্ত কৃষক ঠাকুরগঞ্জ গ্রামের রশিদুলের ০১৭৩৭৬৬১৪৬৫ নম্বরে ফোন দিয়ে জানা যায় তিনি কোনো সার ও বীজ পাননি। তালিকাভুক্ত কৃষক পিয়ারুলের ০১৯১৫৫৯৪৯৩০ নম্বরটিতে ফোন দিলে ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তি বলেন, এটা আমার ব্যক্তিগত ফোন নাম্বার আমার বাড়ি ঢাকা পিয়ারুল নামে আমি কাউকে চিনিনা, ডিমলা উপজেলা কোথায় আমি সেটাও জানি না ।আরেক তালিকাভুক্ত কৃষক মফিদুলের ০১৭২৯৬১১৭২৩ নাম্বারে ফোন দিলে বরিশালের এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে বলেন মফিদুল নামে তিনি কাউকে চিনেন না।এভাবে তালিকায় থাকা অনেক কৃষকের নামের পাশে থাকা মোবাইল নাম্বার এ ফোন দিয়ে জানা যায়, তারা কৃষি প্রণোদনা পাননি আবার কেউ কেউ এ উপজেলার বাসিন্দাই নয়।তালিকায় থাকা অধিকাংশ ব্যক্তির ফোন নাম্বার অব্যাবহৃত ও ভুল নাম্বার ।

স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারি প্রণোদনার সার ও বীজ প্রাপ্ত ৫/৭ জন বাদে বাকি ব্যক্তিরা কেউ সার ও বীজ পাননি।কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে মিলে এলাকার একটি সিন্ডিকেট প্রণোদনার সার ও বীজ উত্তোলন করে নেয়।এবিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লোহানি শাহনেওয়াজের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,সার বীজ বিতরণে স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সহযোগিতায় তালিকা করে সে অনুযায়ী বিতরণ হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি এখন তদন্ত করে প্রকৃত কৃষকের হাতে প্রনোদনার সার ও বীজ দেওয়া হবে।এ বিষয়ে জানতে পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক সরকারের মুঠো ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।উপজেলা কৃষি অফিসার সেকেন্দার আলি বলেন, সরকারি প্রণোদনার এই মালামাল বিএডিসি আমাদের সরবরাহ করেন।আমি শুধু সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে দায়িত্বরত সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী বিতরণের অনুমোদন দিয়েছি।অনিয়ম হলে এর দায়ভার আমার না।বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি ।নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বিষয়টি ডিমলা উপজেলা কৃষি অফিসারের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।

আতারা // এপি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here